বুধবার- ৩রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৯শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলায় ১০ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাধঁ অরক্ষিত ¯্রােতে তলিয়ে গেছে কার্গোসহ নির্মান সামগ্রী

ভোলায় ১০ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাধঁ অরক্ষিত ¯্রােতে তলিয়ে গেছে কার্গোসহ নির্মান সামগ্রী

স্টাফ রিপোর্টার ; ভোলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ১২টি পয়েন্ট দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০-১৫ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় চলে গেলেও এখনো দিনে দুইবার ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এছাড়াও নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য রাখা সিমেন্ট ও বালুসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রিমেলের জলোচ্ছ¡াসে তলিয়ে গেছে। এতে করে তীর সংরক্ষণ নির্মান কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ইলিশা ঘাট লঞ্চঘাট এলাকা থেকে একটি ৩০০ টনের কাগো মেঘনার্য় তলিয়ে গেছে। ডুবুরী ও ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে অনেক খোঁজাখুজি করেও এখনও ওইটির সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে মেঘনা ও তেতুলিয়ার বেড়িবাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর বেশ কয়েকটি যায়গায় দিয়ে পানির ¯্রােতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের নির্মাণ সামগ্রী জোয়ারের ¯্রােতের পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর সংরক্ষণ কাজে দুইটি প্যাকেজের প্রায় চার হাজার ব্যাগ সিমেন্ট পানিতে ভিজে শক্ত হয়ে গেছে। সেখানে রাখা বালুস্তুপ থেকে অধিকাংশ বালু নদীতে নেমে গেছে। সেখানে থাকা নির্মান কাজের মিক্সার মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ ছুই ছুই হয়েছে। অনেক যায়গায় বেড়িবাঁধ নিচু থাকায় পানি বাঁধের ভিতরেও প্রবেশ করছে। এ রকম পানি বিগত ৩০-৪০ বছরেও হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
ভোলা পনি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাÐবে ভোলার সাত উপজেলায় প্রায় ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এ পাঁচ কিলো মিটার, ডিভিশন-২ এ পাঁচ কিলোমিটার। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলা বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপজেলায়। সেখানে প্রায় ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলায় ১২টি পয়েন্ট দিয়ে বাঁধ ছুটে গিয়ে ১৫-২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকাগুলো এখনো দিনে দুই বার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে থাকে। এছাড়াও জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য রাখা চার হাজার ব্যাগ সিমেন্ট ও ৫০ হাজার ঘনফুট সিলেটস্যান্ট বালু ও ৯ থেকে ১০ হাজার ঘনফুট পাথর পানির ¯্রােতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ কাজল জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তার এলাকার বেড়িবাঁধের চারটি পয়েন্ট দিয়ে ছুটে যায়। এতে করে ইউনিয়নের দক্ষিণ সাকুচিয়া ও রহমানপুর গ্রামসহ ২,৩, ৫, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। বন্যা চলে গেলেও বাঁধগুলো সংস্কার না করায় এখনো দৈনিক দুই বার এ এলাকাগুলোতে পানি ওঠে। এতে করে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকেন।
এছাড়াও উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচর ও চরযতিন এলাকার পূর্বপাশে বেড়ীবাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। এতে ওই এলাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার। তিনি জানান, প্রায় আধা কিলোমিটারের ওপরে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে পুরো এলাকা ডুবে গেছে। আনুমানিক ওই এলাকার ১০ হাজার মানুষ এখনো জোয়ারের সময় পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী বাঁধ নির্মানের কাজে নিয়োজিত এস-এম জয়েন ভেঞ্চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা এ জেড এম মনিরুল ইসলাম জানান, ওই এলাকায় তাদের ২৮ কোটি টাকা ব্যায়ে দুইটি প্যাকেজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ চলছিলো। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে তারা কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেই কাজের জন্য সেখানে সিমেন্ট, বালু ও পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী এনে রেখেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তাদের সেখানে প্রায় ৮-১০ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এতে তাদের প্রায় চার হাজার ব্যাগ সিমেন্ট পানিতে গলে শক্ত হয়ে যায়। প্রায় ৫০ হাজার ঘনফুট সিলেটসেন্ট বালু ও ৯-১০ হাজার ঘনফুট পাথর পানির ¯্রােতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে সঠিক সময়ে এ কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণের অপর একটি কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাড়া করে আনা একটি ৩০০ টনের কার্গো সদর উপজেলার ইলিশা ঘাটে বেঁধে রাখা হয়। ঝড়ের দিন ২৬ মে গভীর রাতে এ্যাংকর ছিড়ে কার্গোটি মেঘনায় তলিয়ে যায়। সেটি উদ্ধারের জন্য ডুবুরী ও ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে অনেক খোঁজাখুজি করা হয়। কিন্তুএখনো পাওয়া যায়নি। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড সহায়তা না করলে এ কাজ সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। কার্গো তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ভোলা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। যার জিডি নং-২০৩, তারিখ-০৪/০৬/২০২৪ইং।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃহাসান মাহমুদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তার নিয়ন্ত্রনাধীন চারটি উপজেলায় ৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ২০০ মিটারই হলো মনপুরা উপজেলায়। এ উপজেলায় ১২টি পয়েন্ট দিয়ে ১৬৫ মিটার বাঁধ ছুটে গেছে। তারা এ বাঁধগুলো মেরামতের কাজ করছেন। দ্রæত সময়ের মধ্যে এ বাঁধগুলো সংস্কার করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃহাসানুজ্জামান জানান, তার আওতাধীন তিনটি উপজেলায় পাঁচ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশী ক্ষতি হওয়া বাঁধ সংস্কারে তারা কাজ করছেন। বাকী যায়গাগুলোও পর্যায়ক্রমে সংস্কার করবেন। এছাড়াও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হওয়া নির্মাণসামগ্রীর বিষয়ে এই মূহুর্তে তাদের কিছু করণীয় নেই।

৩০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares