মঙ্গলবার- ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে ন্যানো প্রযুক্তি উদ্ভাবন

গমের ব্লাস্ট রোগ দমনে ন্যানো প্রযুক্তি উদ্ভাবন

আব্দুল মান্নান, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সিনথেটিক কেমিক্যালের বদলে ন্যানো-পার্টিকেলকে (অতিশয় ক্ষুদ্র কণা) গমের ব্লাস্ট রোগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে সফল হয়েছেন বাংলাদেশের একদল কৃষি গবেষক। গবেষণা প্রকল্পটির নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বাংলাদেশ ও বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো প্রফেসর ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম। ব্লাস্ট রোগ দমনে কার্যকরি টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড ন্যানো কণা তৈরিতে কারিগরি সহযোগীতা প্রদান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদযালয়ের অধ্যাপক ড. ইউসুকে ইয়ামাউচি এবং সিনিয়ার লেকচারার ড. শাহরিয়ার হোসেন।

প্রতিবছর Magnaporthe oryzae Triticum(MoT) প্যাথোটাইপ দ্বারা সৃষ্ট গমের ব্লাস্ট বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে গম উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলে। মারাত্মক এই ছত্রাকজনিত রোগটি মোকাবেলায় কার্যকর কোন ছত্রাকনাশক কিংবা সম্পূর্ণ প্রতিরোধী গমের জাত নেই। বর্তমান গবেষণায় বিজ্ঞানীদল করা কীভাবে একটি ন্যানোস্ট্রাকচারযুক্ত TiO2 টাইপ P-25 ন্যানোক্যাটালিস্ট (NCs) দিবালোকের অধীনে ফটোক্যাটালাইটিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতি তৈরি করে মারাত্মক গমের ব্লাস্ট রোগকে দমন করতে পারে তা উদ্ভাবন করেন।

গবেষক দল জানায়, সূর্যালোকের অধীনে ন্যানো কণাগুলি  জীবাণুটির বৃদ্ধি এবং অযৌন প্রজননকে সম্পূর্ণভাবে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে। উদ্ভাবিত ন্যানো কণা ব্যবহারে গমের চারাগাছ এবং মাঠে গমের শীষ প্রায় ৯০% ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। ফটোক্যাটালাইটিক টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড ন্যানো কণাগুলি সূর্যালোকের ঊপস্তিতিতে অক্সিজেন এবং বায়ুর আর্দ্রতায় নানারকম সুপারঅক্সাইড তৈরি করে যা ছত্রাক জীবাণুটির সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। আমাদের ফলাফল প্রথমবারের মতো প্রমাণ করেছে যে, দিনের-আলো কার্যকরী অ্যান্টিফাঙ্গাল TiO2 টাইপ P-25 ন্যানো ক্যাটালিস্ট বিধ্বংসী গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। ছত্রাকনাশক প্রতিরোধ এবং ছত্রাকনাশকের কারণে পরিবেশ দূষণের উদ্বেগ হিসাবে, আমাদের অনুসন্ধানগুলি গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য TiO2 টাইপ P-25 ন্যানো ক্যাটলিস্ট প্রয়োগের জন্য একটি নতুন দিবার উন্মুক্ত করেছে এবং এই ন্যানো কণাগুলিকে  আরও শক্তিশালী নভেল ন্যানোপেস্টিসাইড সংশ্লেষণের জন্য গবেষণা করা যেতে পারে। ফলে গমের ব্লাস্টসহ ফসলের অন্যান্য ধ্বংসাত্মক রোগ দমনে একই কৌশল ব্যবহার করা যাবে। ন্যানো পার্টিকেলের মাধ্যমে ব্লাস্ট প্রতিরোধ সম্পর্কে ড. তোফাজ্জল বলেন, ‘গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধে আমরা টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড পি-২৫ টাইপ পার্টিকেল (কণা) ব্যবহার করেছি। যা সূর্যের আলোতে সক্রিয় হয়ে অক্সিজেন ও পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন সুপার অক্সাইড তৈরি করে। এই সুপার অক্সাইডগুলো ছত্রাকের জন্য বিষাক্ত। ফলে ছত্রাক সেখানে বাঁচতে ও বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। প্রথাগত ছত্রাক নাশক সিস্টেমিক বা স্পর্শক যাই হোক এগুলো উদ্ভিদ ও পরিবেশের জন্য বিষাক্ত। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আট জেলায় প্রথম মহামারি ব্লাস্ট দেখা দেয় । এ সময় ব্লাস্ট রোগে ১৫ হাজার হেক্টর জমির প্রায় শতভাগ গম নষ্ট হয়ে যায়। এর আগে ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে প্রথম ব্লাস্ট রোগটি দেখা যায় । পরে তা দক্ষিণ আমেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে গম আমদানির ফলে বাংলাদেশ ব্লাস্টের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অত্যাধুনিক ফিল্ড প্যাথোজ্নোমিক্স, মুক্ত তথ্য বিনিময়, মুক্ত বিজ্ঞান প্রয়োগে চারটি মহাদেশের ৩১ জন গবেষককে নিয়ে প্রফেসর ইসলামের নেতৃত্বে জীবাণুটির কৌলিক পরিচয় এবং উৎপত্তি নির্ণয় করা হয়। পরবর্তীতে যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং পলিসি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে রোগটি আর গমের ফসলে মহামারী আকারে দেখা দেয়নি।এরপর চারটি মহাদেশে সময়ের ব্যবধানে গম, ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্লাস্ট প্রতিরোধে বিভিন্ন রাসায়নিক ছত্রাকনাশক বাজারে এসেছে।

২৮১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares