বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলার ইটভাঁটা গুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ-উজার হচ্ছে বন

ভোলার ইটভাঁটা গুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ-উজার হচ্ছে বন

ভোলা প্রতিনিধিঃ চলতি বছরে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ভোলার ইটভাঁটা গুলোতে। স্থানীয় সংরক্ষিত বনের গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে জেলার শতাধিক ভাঁটায়।

আর কাজের সুবিধার্থে ভাঁটা এলাকার ভেতরেই স’মিল বসিয়েছে মালিকরা। এসবই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। শুধু তাই নয়, শতাধিক ইট ভাঁটার এক-তৃতীয়াংশের নেই কোনো প্রকার বৈধতা।

ভোলা সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চরফ্যাশন উপজেলা। বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করে সেখানেই গড়ে উঠেছে সবচেয়ে বেশি ইটভাঁটা। বনভূমির কাঠ পোড়ানোর দলে আছেন ওইখানকার বৈধ ভাঁটার মালিকরা। খালি চোখে দেখলে মনে হবে, এসব ভাঁটায় যেন জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

তারপরও অবাধে চলা এই কুকীর্তি নজরেই আসছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। যেন সবকিছুই হচ্ছে সবাইকে ম্যানেজ করে। অথচ এসব বনের গাছ ঝড় আর জলোচ্ছ¡াসে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় ভোলাবাসীর পাশে, আগলে রাখে উপকূল ও তার জনপদ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে।

জেলাটিতে পরিবেশ দূষণ করার মতো কল-কারখানা খুব একটা না থাকলেও বিষফোড়ার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে কাঠ জ্বালানো শতাধিক ইটভাঁটা। এদিকে প্রভাবশালী ভাঁটা মালিকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে ইটভাঁটার আশপাশে বসবাস করা সাধারণ মানুষ। দখলদারদের অত্যাচার-জুলুম সহ্য করে নিশ^াসের সঙ্গে বিষ গ্রহণ করছে এখানকার জনসাধারণ।

শুধু তাই নয় অভিযোগ রয়েছে, ভাঁটা মালিকরা ভেকু দিয়ে ভেঙে দিয়েছে তাদের ঘর-বাড়ি আর মিথ্যা মামলা দিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে ইটভাঁটার আশপাশের পরিবারগুলোকে। এখনও কেউ কেউ বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি রক্ষায় প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসি যানায়, চরফ্যাশনের চর মায়ার শানিমা-২ নামক ইটভাঁটার আশপাশের পরিবারগুলো রয়েছে বেশি যন্ত্রণায়। তাদের অনেক ঘর-বাড়ি দখলে নিয়ে ভেকু দিয়ে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে যারা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করার অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো। তাদের কথায় ওঠে এসেছে ভাঁটা মালিকদের নানা ধরনের অত্যাচারের বিবরন।

এ বিষয়ে জানার জন্য কথা হয় শানিমার মালিকদের একজন মোঃ শাহীন মহাজনের সঙ্গে। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, আসলে বাংলা আর ছোট চিমনি থাকায় লাইসেন্স পাচ্ছি না। আরেকটার কাগজ আছে তা দিয়ে এটা চালাচ্ছি। আমরা প্রশাসন, পরিবেশ, সাংবাদিক সবাইকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছি। এ ছাড়া জমি দখলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরাই সমাধান করে দিয়েছে। কাঠ জ্বালাচ্ছি সবাইকে ম্যানেজ করেই।

এরকমই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের ফকিরহাটে অবস্থিত মাইশা ইটভাঁটা। ওই ভাঁটায় ভিডিও এবং সংবাদ সংগ্রহে গেলেই ঘিরে ফেলে ইটভাঁটার লোকজন।

ভিডিও করতে দেখেই অফিস থেকে ছুটে আসেন ইটভাঁটার ম্যানেজার মোঃ ইউসুফ। ফোন দেন মালিককে। ফোনে কথা শেষ করেই বলেন, প্রশাসন সব ম্যানেজ করা। কেউ এখানে আসার সাহস করে না, তুই এলি কোন সাহসে?

এদিকে বিভিন্ন সরকারি বন থেকে গাছ কেটে ইটভাঁটায় পাঠানোর কথা স্বীকার করেন চরফ্যাশনের ঢালচর বনে গাছকাটায় জড়িত দুই শ্রমিক। তারা বলেন, প্রতিদিন বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলেমিশে এসব বনের গাছ কেটে একাধিক ট্রলারে বোঝাই করে ইটভাঁটায় পাঠানো হচ্ছে। প্রশাসনের কেউ আসে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আসে আবার দেখে চলে যায়।’ বনের গাছ বিক্রির টাকা পদবী অনুযায়ী ভাগ করা হয়ে থাকে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কায়চার আহন্মেদ জানান, চোরেরা রাতের আধারে বনের গাছ কেটে ভাটায় বিক্রি করতে পারে। তবে বনবিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এর সাথে জড়িত নয়, কাউকে জড়িতের প্রমান পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আর করাত কলের বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

অফিস সুত্র জানায়, সরকারি হিসাবে ১১২টি ইটভাঁটার তালিকা রয়েছে ভোলায়। এর মধ্যে ৭৮টি বৈধ আর ৩৪টি অবৈধ। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি ইটভাঁটা রয়েছে, সরকারি তালিকায় যাদের নাম নেই। তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ওইগুলো পরিচালনা করে।

বৈধগুলোর মধ্যে আবার বহু ইটভাঁটা রয়েছে যাদের ২০১৫-১৬ সালে নবায়ন হলেও এরপর আর নবায়ন করা হয়নি। তবে বৈধ আর আবৈধ, যাই আছে সবগুলোতেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বনের কাঠ।

এসব ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোঃ তোতা মিয়া বলেন, নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে, অভিযান চালানো হবে।

৭৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares