মঙ্গলবার- ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হার্ট ব্লকের কারণ ও লক্ষণ

হার্ট ব্লকের কারণ ও লক্ষণ

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়েছে। হার্টের ব্লক বর্তমান সময়ের সব থেকে আলোচিত এবং আতঙ্কের নাম। চর্বিজাতীয় পদার্থ জমা হতে হতে রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পথকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ (ব্লক) করে দেওয়াকেই হার্টে ব্লক বলা হয়ে থাকে। কারও কারও জন্মগতভাবে হার্টে ব্লক (কনজেনিটাল হার্ট ব্লক) থাকতে পারে।
এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ব্লকেজ ডেভেলপ করতে পারে। হার্ট ব্লক প্রধানত দুভাবে হয়। প্রথমত, হার্টের ধমনিতে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত বা স্তব্ধ হয়ে যায়, যাকে হার্ট অ্যাটাক বা করোনারি থ্রম্বোসিস বলা হয়। দ্বিতীয়ত, হার্টের জন্মগত গতি নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে তাকে বলা হয় অ্যারিদমিয়া। ফলে হার্টবিট অতি দ্রুত হয়ে যায় অথবা খুব শ্লথ। এই দুধরনের অবস্থাতেই দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে প্রাণহানি ঘটতে পারে।
হার্টের ব্লকের কারণ:
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত মাত্রায় ঘুম না হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। শরীর যদি সঠিক পরিমাণে বিশ্রাম না পায়, তা হলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো মতো হয় না। ফলে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বেশি মাত্রায় হয়। হৃদরোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
অফিসের কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো বাড়েই, সেসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, বেশি খাওয়া, ঘুমের সমস্যা, মানসিক ক্লান্তি দেখা দেয়।
অলস জীবনযাপন
অলস জীবনযাপন করলে হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অলস সময় না কাটিতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
ধূমপান করা
ধূমপান হৃদরোগ এবং ক্যানসারের কারণ হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটের ধোঁয়া আপনার হৃদয় এবং রক্তনালিগুলোকে সঙ্কীর্ণ করে এবং রক্তের পক্ষে আপনার অঙ্গে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে শক্ত করে তোলে।
স্যাচুরেটেড ও ট্র্যান্স ফ্যাট গ্রহণ
যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট বাঁধা চর্বি থাকে, সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কুট ও নারিকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
রাত জেগে কাজ করা
অনেকেই রাত জেগে অফিসের কাজ করে থাকেন। রাত জেগে কাজ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করা, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখার কারণেও হার্টে ব্লক হতে পারে।
হার্ট ব্লকের লক্ষণ
* হৃৎপিণ্ডে বেশি পরিমাণে ব্লক থাকলে বুকে ব্যথা হয়। আস্তে আস্তে ব্যথা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। হাঁটার সময় ও সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বুকে ব্যথা হয়। থামলে ব্যথা কমে যায়।
* দম নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়।
* বুকে জ্বালাপোড়া ও ধড়ফড় করে।
* গলা, কপাল ও মাথা ঘেমে যাওয়া।
* নিচের দিকে হেলে কিছু করার ও একটু ভারী কিছু বহনের সময় কষ্ট হয়।
* খাবার হজম না হওয়ার মতো অস্বস্তি লাগে।
হার্ট ব্লক হলে করণীয়
বর্তমানে হার্ট ব্লকে উপযুক্ত মেডিসিন গ্রহণের মাধ্যমে সুচিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। সেই সঙ্গে রোগীকে অবশ্যই নিরাপদ মাত্রায় কায়িক শ্রমে অভ্যস্ত হতে হবে এবং হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন করতে হবে। জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হার্ট ব্লকের কারণে যাদের হার্ট ফেইলর দেখা দিয়েছে অথবা হার্ট ব্লক অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের রিং, বাইপাস অথবা ইসিপি
থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হয়। তবে মনে রাখতে হবে, এসব পদ্ধতি গ্রহণ করেও রোগী সুস্থ থাকতে পারবে না, যদি না জীবনধারা পরিবর্তন না করে উপযুক্ত মেডিসিন গ্রহণ না করে এবং হৃদবান্ধব খাদ্যাভ্যাস অনুশীলন না করে।
৫৪৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares