বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলায় বিষ টোপ দিয়ে চলছে পাখি নিধন

ভোলায় বিষ টোপ দিয়ে চলছে পাখি নিধন

ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলা মেঘনা নদীর এপার-ওপার বিশাল বিশাল চর আর চর। আর চরের পাশে পাশে জলাধার। পৌষের শেষে কয়েকদিন যাবৎ সূর্যের দেখা নাই, হীমেল বাতাস আর হাড় কাপানো শীতে মানুষের জীবন জুবু থুবু সেখানে অতিথি পাখির জীবন সংকটাপন্ন। এই সময়কে কাজে লাগিয়েছে অবৈধ শিকারিরা। বিষ টোপ দিয়ে প্রতিরাতে হাজার হাজার অতিথি পাখি শিকার করছে শিকারিরা। এবারের মৌসুমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ায় প্রশাসনের নজর কম থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে তারা। মেঘনার পাড়ে পারে ও চরে ব্যাপক হারে মরা অতিথি পাখি পরে থাকতে দেখা গেছে।

সরে জমিনে রবিবার ভোলার মেঘনার পাড়ে চোখে পড়ে এ দৃশ্য। সামান্য টাকার লোভে বিষ টোপ দিয়ে পাখি ধরতে গিয়ে এরকম হাজার হাজার পাখি মারা হচ্ছে। মরে পরে থাকতে দেখা যায় নদীর পাড়ে ও চরে। এভাবে নির্বিচারে শিকার করার ফলে পাখিদের আগমন যেমন কমে যাচ্ছে। তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ও সৌন্দর্য হারাচ্ছে মনোমুগ্ধকর চর। অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা না থাকায় শিকারিদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভোলার উপকূলের বিভিন্ন চরে প্রতি বছরের মতো ২০২৩-২৪ সালের মৌসুমে সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে ভোলার মেঘনার এপার-ওপারের চরে এসেছে হরেক রকমের অতিথি পাখি। এর মধ্যে দুই প্রকারের বাধী হাসই বেশী। এসব পারিজাত অতিথি পাখির উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মাঝের চর, মেদুয়া, মদনপুর, নেয়ামতপুর, চরফ্যাশনের তারুয়া, কুকরী-মুকরী, মনপুরার ঢালচর, চর পালিতাসহ অর্ধশতাধিক ছোট-বড় চর আবাস স্থলে পরিনত হয়েছে। পাখিদের কলকাতনে মুখর হয়ে উঠেছে চরগুলো। কিন্তু এসব দুর্গম চরাঞ্চলে পাখির জন্য নিরাপদ আবাস স্থল হওয়ার কথা থাকলেও শিকারিদের কারনে তাদের নিরাপত্তা নেই। খাদ্যের সন্ধানে রং বেরংয়ের পাখা মেলা এসব পাখি ধানের সঙ্গে কার্বোটাফ বিষ,রাসায়নিক দ্রব্য,অচেতনা নাশক দ্রব্য ও জাল পেতে নির্বিচারে শিকার করছে। শুক্র ও শনিবার রাতে হীমেল বাতাস আর কনকনে শীতে দল বেধে থাকা কয়েক লাখ পাখি মারা পরেছে শিকারিদের হাতে। আর তারা কামিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে গেলে মেঘনায় অসংখ্য মরা অতিথি পাখি ভাসতে দেখা যায়। চরে হাজার হাজার অতিথি পাখি মরে পড়ে থাকে। অসাধু শিকারিরা ভাটার সময় নদীর কিনারের চরে কীটনাশক ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে ছিটিয়ে দেয়। ওই ধান খেয়ে পাখি অচেতন হয়ে যায়। অনেক পাখি উড়ে অন্যত্র গিয়ে মরে পরে থাকে। শিকারি দল অসুস্থ্য ও মৃত পাখি জবাই করে তা পাচার কারীদের দিয়ে বাজারের ব্যাগে করে বিভিন্ন হোটেলে, গ্রামাঞ্চলের বাড়ি ও শহরের বাসা বাড়িতে বিক্রি করে। এসব পাখি গোপনে প্রতি পিস বিক্রি হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকা করে।

অভিযোগ রয়েছে, ভোলা সদরের শিবপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ির ও এর আশপাশের ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সদস্য আবু মুসা, তার ভাই-খালেদ, আল আমিন, সায়েদ, রহমান, দৌলতখানের সাহেবের মোড় এলাকায় আলমগীর, শাহাবুদ্দিন, জাকির, মহিউদ্দিন, তজুমদ্দিনের সুমন, মাহে আলম, চরফ্যাশনের আলাউদ্দিন, মনপুরার জাকির চক্রের ২শ থেকে ৩শ সদস্য বিষ টোপ দিয়ে রাতে অতিথি পাখি নিধন করছে। এসব পাখি ভোলা জেলাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় নিয়ে বিক্রি করছে। এ পাখি বিক্রি করে প্রত্যেক সদস্য বাড়ি, গাড়ি করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। হঠাৎ এসব সদস্যের চোখ ধাধানো বাড়ি-গাড়ি দেখে এলাকার মানুষের মুখে মুখরোচক আলোচনার ঝড় বইছে। এ বিষয়ে তাদের সাথে আলাপ করলে তারা তারা সাংবাদিককে গালমন্দ করে সংবাদ প্রকাশ করলে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন।

সদর বন বিভাগের রেঞ্জার সাইফুল ইসলাম ও বিভাগীয় বনকর্মকর্তা ডঃমুহান্মদ জহিরুল হকের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

৫৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares