সোমবার- ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সবুজ পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ ঘুঘু

সবুজ পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ ঘুঘু

বিটন চৌধুরী, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি। খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা এলাকায় পাকুড় ফল গাছের নিচে পড়ে থাকা পাকুর ফল খুঁড়িয়ে খেতে দেখা যায় চোখ জুড়ানো সবুজ ঘুঘু পাখি। সবুজ ঘুঘু পাখির রঙের বর্ণ সবাইকে মুগ্ধ করে। আগেরমত আর দেখা যাচ্ছে না।

সারাদেশেরমত পাহাড়েও আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে সবুজ ঘুঘু। বাঁশঝাড় ও ঝোঁপ-জঙ্গল কমে যাওযায় বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না বিপন্ন। বন উজাড়ের কারণে পাখিটিকে পাহাড়ে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না মনে করছেন পাখি বিশেষজ্ঞ ও ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফাররা।

খাগড়াছড়ির শৌখিন ফটোগ্রাফার সবুজ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বনভুমি পরিমান কমে যাওয়াতে তাদের আবাসনস্থল ছোট হয়ে গেছে। ওইবাবে আমরা আর দেখছি না। গবির জঙ্গলে চলে গেছে এমন হতে পারে। শুধু সবুজ ঘুঘু না পাখি রক্ষা করতে আমাদের বন রক্ষা করতে হবে। বনভুমি সিজন করতে হবে।আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় সবুজ ঘুঘু বিপদগ্রস্ত পাখি।

এক সময় সবুজ ঘুঘু সারাদেশেরমত পাহাড়েও ভালো পরিমাণেই ছিল। এখন দেখা যায় না বললেই চলে। অবাদে শিকার করার কারণে এদের অস্তিত আজ হুমকির মুখে বলে জানান বন্যপ্রাণি গবেষকরা।

শৌখিন ফটোগ্রাফার সবুজ চাকমা জানান, সবুজ ঘুঘুকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবুজ ঘুঘু, বাঁশ ঘুঘু, রাজ ঘুঘু, বা কোথাও কোথাও এদেরকে পাতি শ্যামাঘুঘু নামেও পরিচিত। সবুজ ঘুঘু ইংরেজি নাম ঊসবৎধষবফ উড়াব এর বৈজ্ঞানিক নাম ঈযধষপড়ঢ়যধঢ়ং রহফরপধ।

পাখি ও বন্যপ্রাণী লেখক-গবেষকরা জানায়, অন্য পাখি যেমন তাদের বাসার পাশে কেউ গেলে বা পাখি বাসা দেখলে পাখিরা তাদের বাসাতে ফিরে আসে বা তাদের বাসাটি পরিত্যক্ত করে চলে যায় না। কিন্তু সবুজ ঘুঘু বেলায় তা নয়। প্রজনন মৌসুমে তাদের বাসার আশেপাশে কেউ হেঁটে গেলে বা সে যদি ভয় দেখায় বা শিকারের চেষ্টা করে তবে তারা বাসাটি পরিত্যক্ত করে অন্যত্র চলে যায়।

পাখি ও বন্যপ্রাণী লেখক-গবেষকদের তথ্যমতে, ঠোঁট লাল এবং পা ও পাতা সিঁদুরে লাল। স্ত্রী জাতীয় ঘুঘুর রং প্রায় পুরুষেরমত, কপাল ও ভ্রু ধূসর, মাথা এবং ঘাড় বাদামী। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য ছোট। লেজ ও ডানার ডগা কালো। বাচ্চা দেখতে অনেকটা মায়েরমত মতো হলেও এদের ঠোঁট বাদামি-ধূসর, কপালে দুটো ধূসর দাগ, লেজের দিকটা লালচে-বাদামি, গলা ও দেহের নিচের অংশের পালকের প্রান্ত হলদে। দৈর্ঘ্যে কম-বেশি ২৬/২৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৩০ থেকে ১৩৫ গ্রাম। এদের আয়ু প্রায় সাত থেকে আঁট বছর। হেঁটে বেড়ায় মাটিতে পড়ে থাকা ফল ও তার বিচি, শস্যদানা, বীজ এবং কিছু কীটপতঙ্গ, বিশেষ করে উইপোকা খায়।

পাখি লেখক-গবেষকরা জানায়, এদের প্রধান খাদ্য ধান ও অন্যান্য শস্যদানা। মাটিতে বিচরণকালে খুঁটে খুঁটে মাটি এবং উইপোকা খায়। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। মাটি থেকে ৫ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে বাসা বাঁধে। নরম ও শুকনো ঘাস-লতা দিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ১ থেকে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭ থেকে ১৮ দিন।

পাখি ও বন্য প্রাণী লেখক শরীফ খান বলেন, এখন সবুজ ঘুঘু পাহাড়ে আছে সংখ্যায় কম। অতি দ্রæত বেড়ে চার ফুঁট নিচুঁতে গাছের ফাঁকে উড়ে যেতে পারে। সহজে উড়ে না। যখন উড়ে দ্রæত উড়ে। লাজুক স্বভাবের পাখি এরা। পোকামাকড় ও শস্য দানা খায়। শতকরা ৯০টা বাসা করে বাঁশ ঝাড়ের কঞ্চির ঘোড়ায়। যেহেতু লাজুক সহজেই শিকারিদের টাগেট হয় না।

খাগড়াছড়ির ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার সবুজ চাকমা বলেন, পাহাড়ে এক সময় প্রচুর দেখা যেত। এখন খুব কম দেখা যায়। নিচু জায়গাতে খুব দ্রæত গতিতে উড়তে পারে। বাঁশ ঝাড়ে বেশি সবুজ ঘুঘু পাওয়া যায়। মানুষ থেকে একটু দুূরে নিরিবিলিতে থাকতে পছন্দ করে। ঠান্ডা ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকে। বাঁশ ঝাড়ে থাকতে পছন্দ করে তাই অনেকে বাঁশ ঘুঘু বলে ডাকেন। ঝড়ে পড়া ফল মাটি থেকে খুঁড়িয়ে খাই।

১২৯ বার ভিউ হয়েছে
0Shares