বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

ভোলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় গাড়ীচালক মোঃ হারুন আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছে। সাজাপ্রপ্ত হওয়ার পরও হারুনকে জেল হাজতে প্রেরন কিংবা আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো হারুন চাকরিতে বহাল থেকে মামলার বাদীকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। মামলার বাদী ওতার পরিবার হারুনের ভয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামী গাড়ী চালক হারুনসহ অন্যান্য আসামীদের দ্রæত গ্রেপ্তার করে শাস্তি কার্যকরের দাবী করেন।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকালে ভোলার একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী মোঃ শাজাহান এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ভোলায় বিচারক জেলা ও দায়রা জজ আদালতের গাড়ীচালক মোঃ হারুনসহ তার পরিবারের ৬জন জজ কোর্টে চাকুরী করেন। হারুন স্থানীয় গরীব, অসহায় মানুষের জমিজমা জোরপূর্বক দখল ও তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে। এদেরই একজন ভুক্তভোগী ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মুছাকান্দি এলাকার মৃত আসম আলীর ছেলে মোঃশাজাহান। হারুনের লোলপদৃষ্টি পড়ে অসহায় শাজাহানের জমির উপর। অসহায় ওই পরিবারের জমি দখলের পায়তারা করে হারুন ও তার লোকজন। গত ৩০/০৯/২০১৭ইং তারিখে গাড়ি চালক মোঃ হারুন ও তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে শাজাহানের জমির সুপারি পাড়তে যায়। এতে বাঁধা দিলে হারুন ও তার বাহিনী শাজাহানসহ তার পরিবারের লোকজনকে এলোপাথাড়ি পিঠিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। শাজাহানের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর চালিয়ে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, দামী মালামাল ও গৃহপালিত ৩টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় শাজাহানের শালি নাহার বেগম বাদী হয়ে ভোলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-জি.আর- ৫০০/২০১৭ইং। ওই মামলা দীর্ঘদিন চলার পর মামলায় বিজ্ঞ আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণ শেষে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট-৪ এর বিচারক সুলতান মাহামুদ মিলন গত ২২-০৮-২০২১ইং তারিখে আসামী হারুনসহ অন্যান্য আসামীকে ১ বছরের কারাদন্ড ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ডের রায় প্রদান করেন। কিন্তু রায় প্রকাশের দিন হারুনসহ অন্যান্য আসামীরা আদালতে হাজির থাকলেও তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়নি। অথচ গণকর্মচারী অধ্যাদেশ ১৯৮৫ আইন অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে রায় বা সাজার আদেশ ঘোষণার তারিখ থেকে তাৎক্ষনিক চাকুরি হইতে বরখাস্তের বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী মোঃ হারুন-কে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান থাকা সত্ব্যেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। গাড়ী চালক মোঃ হারুনের এক বছরের সাজা হওয়ার পরও সে গ্রেপ্তার না হয়ে কিভাবে চাকনি করে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে, ভোলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের গাড়ীচালক সাজাপ্রাপ্ত মোঃ হারুনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ আসে। যার স্মারক নং-১০,০০,০০০০, ১২৮,২৯,০০২.১৮.২২৯, তারিখ-১৫/০৬/২০২৩ইং। আইন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ আসার প্রায় ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হারুনসহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। হারুন বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী চাকরিতে বহাল তবিয়তে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় চরম হুমকি ও হতাশার মধ্যে আছেন মামলার বাদী ও তাদের পরিবার।

ভুক্তভোগী শাজাহান বলেন, গাড়ী চালক মোঃ হারুন ভোলা জজ আদালতে সরকারী চাকরী করে এই ক্ষমতা দেখিয়ে এলাকার গরীব, অসহায় মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়। মানুষের জমি জোর করে দখল, মামলা খালাস, রায় ও আসামীদের জামিন করিয়ে দিবে বলেও অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে। সে এলাকায় অনেক প্রভাব বিস্তার করে। তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। কেউ কিছু বলতে গেলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে। হারুন আমার জমি জোর করে দখলের চেষ্টা করে। আমাদের মামলায় হারুনসহ অনান্য আসামীরা ১ বছর সাজাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু রায়ের প্রায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হারুন গ্রেপ্তার না হয়ে এবং সাজা ভোগ না করে চাকরি বহাল রয়েছে। হারুনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আদেশ দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমি অসহায় বলে সরকারের বিভিন্ন উর্ধ্বতন মহলে ঘুরেও ন্যায় বিচার পাইনি।

শাজাহান আরও বলেন, উল্টো হারুন আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলে আমরা একই পরিবারে ছয় জন জজ কোর্টে চাকুরি করি। কোন কোর্ট কাচারীতে আমার কোন কিছুই করতে পারবেনা। বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ আমার খুব কাছের লোক। আমার চাকুরিরও কোন ক্ষতি হবে না। আমি যা খুশি তাই করতে পারবো। আমাদেরকে খুন-ঘুম করে বাড়ি থেকে উৎখাত করবে বলেও হারুন ও তার লোকজন হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়াও হারুন একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানী করছে। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন গাড়ী চালক মোঃ হারুন ও তার বাহিনীর ভয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছি। আমি হারুনের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচতে চাই। আমি উর্ধ্বতন মহলের কাছে ন্যায় বিচার এবং হারুনসহ অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের গ্রেফতার দাবী করছি।

অভিযুক্ত গাড়ী চালক মোঃ হারুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে তার পর তাৎক্ষনিক আমি আদালত থেকে স্থায়ী জামিন নিয়েছি। বর্তমানে আমি জামিনে আছি। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমি আদালতে আপিল করেছি। মামলাটির বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ স্যার তদন্ত দিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে সামাজিকভাবে হয়রানী করার জন্য একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার চাকরি জীবনে আমি কারও সাথে কোন খারাপ আচরণ কিংবা চাকরির কোন প্রভাব দেখাইনি।

১২২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares