মঙ্গলবার- ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
<span class="entry-title-primary">ভোলায় কিস্তির টাকা মওকুফের কথা বলে গ্রাহককে কুপ্রস্তাব</span> <span class="entry-subtitle"> উল্টো গ্রাহককে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ</span>

ভোলায় কিস্তির টাকা মওকুফের কথা বলে গ্রাহককে কুপ্রস্তাব  উল্টো গ্রাহককে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় কিস্তির টাকা মওকুফের কথা বলে গ্রাহককে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ উঠেছে কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলমের বিরুদ্ধে। কুপ্রস্তাব দেওয়ায় গ্রাহক ও তার পরিবারের লোকজন মুনছুরকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যায়। ২৪ ডিসেন্বর ভোলা সদরের ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চর ইলিশা গ্রামের কালাপোল নাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে এই ঘটনাকে আড়াল করতে কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম বাদী হয়ে উল্টো গ্রাহক ও তার স্বামীসহ ৪জনকে আসামী করে ভোলার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মুনছুরের দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকের স্বামী মোঃ রফিক।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সদরের ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চর ইলিশা গ্রামের কালাপোল নাম এলাকার বাসিন্দা মোঃ রফিকের স্ত্রী হাজেরা বেগম প্রায় ৩ বছর পূর্বে কোস্ট ফাউন্ডেশন এনজিও ইলিশা শাখা থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণ গ্রহণের পর নিয়মিত কিস্তি চালিয়ে যাচ্ছিলেন হাজেরা। প্রায় ১৯,৮৪০/- কিস্তি পরিশোধ করেন সে। কিস্তি চলমান অবস্থায় বাংলাদেশ মহামারী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে হাজেরা বেগমের স্বামী মোঃ রফিকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে হাজেরার স্বামী রফিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। একদিকে করোনার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ, অন্যদিকে স্বামী রফিক অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাজেরার সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। যার ফলে হাজেরা বেগম কোস্ট ফাউন্ডেশনের বাকি কিস্তি চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়ে পড়েন। কোস্ট ফাউন্ডেশনের ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম প্রায় সময় হাজেরা বেগমকে কিস্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন। হাজেরা বেগম স্বামীর অসুস্থতা ও করোনার কারণে আয়-ইনকাম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিস্তি দিতে পারছেন না বলে কিছু সময় চান মুনছুর আলমের কাছে। বিষয়টি কোস্ট ফাউন্ডেশনের এরিয়া ম্যানেজারকে জানালে তিনি গ্রাহক হাজেরা বেগমের বাসায় গিয়ে তাদের অসহায়ত্বের বিস্তারিত শুনে বাকি কিস্তি মওকুফ করার আশ্বাস দিয়ে হাজেরার স্বামী রফিককে ডাক্তারী সার্টিফিকেটসহ কাগজপত্র জমা দিতে বলেন। এরিয়া ম্যানেজারের কথা অনুযায়ী গ্রাহক হাজেরা বেগম ও তার স্বামী রফিক কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এর কিছুদিন পর কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম গ্রাহক হাজেরার বাড়িতে গিয়ে পুনরায় কিস্তির টাকা চান। এসময় মুনছুর আলম গ্রাহক হাজেরা বেগমকে কিস্তি মওকুফ করে দিবেন এই আশ্বাসে হাজেরাকে কুপ্রস্তাব দেন। হাজেরা বেগম তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে মুনছুর আলম সেখান থেকে চলে আসেন। এভাবে বিভিন্ন সময় মুনছুর আলম গ্রাহক হাজেরা বেগমকে কিস্তি মওকুফের আশ্বাসে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এক পর্যায়ে গ্রাহক হাজেরা বেগম বিষয়টি তার স্বামী, মেয়ে ও দেবরের স্ত্রীকে জানায়। ২৪ ডিসেম্বর-২০২২ইং তারিখে কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম গ্রাহক হাজেরার বাসায় গিয়ে পূর্বের ন্যায় আবারও কিস্তি মওকুফের কথা বলে হাজেরাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। হাজেরা বেগম মুনছুরের কাছ থেকে গিয়ে বিষয়টি তাৎক্ষনিক তার মেয়ে ও দেবরের স্ত্রীকে জানালে তারা মুনছুর আলমকে ধাওয়া করলে মুনছুর সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। লোক লজ্জার ভয়ে রফিক ও তার স্ত্রী হাজেরা বেগম বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে নিজেদের মধ্যে গোপন রাখেন। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম উল্টো গ্রাহক হাজেরা বেগম, তার স্বামী মোঃ রফিক, দেবর মোঃ বাবুল, দেবরের ছেলে মোঃ হোসেনকে আসামী করে ভোলা আদালতে একটি এমপি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং-এমপি ৭০০/২২(ভোলা সদর)। উক্ত মামলায় দেখা যায় হাজেরা বেগমকে যেদিন অর্থাৎ ২৪ডিসেন্বর শাখা ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম কিস্তি মুওকুফের কথা বলে কুপ্রস্তাব দিয়ে ধাওয়া খেয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে গেছেন সেদিনের তারিখ উল্লেখ করেছেন। মামলায় মুনছুর আলম বলেছেন, ২৪ ডিসেন্বর তারিখে সে হাজেরার বাড়িতে কিস্তি আনতে গেলে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে তাকে মারধর ও মটরসাইকেল ভাংচুর করে সমিতির বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা কিস্তির টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আদালতে দায়ের করা মামলায় মুনছুর বলেছেন, তাকে মারধর করে তার ব্যাগে থাকা প্রায় ১,০৭,৫৭০/- টাকা ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। এছাড়াও তার মটরসাইকেল ভাংচুর করায় সেখানে প্রায় ২৫,০০০/- টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। কিন্তু শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম প্রথমে ভোলা সদর মডেল থানায় মামলা দায়েরের জন্য একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগে মুনছুর আলম বলেছেন, তার সাথে থাকা সমিতির সংগ্রহকৃত ৪৪,৫০০/- টাকার ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। একই অভিযোগে তিনি মটরাসাইকেল ভাংচুরের প্রায় ৮,০০০/- টাকা ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। আদালত ও থানায় দেওয়া মুনছুর আলমের দুটি অভিযোগে দুই রকম তথ্য উল্লেখ্য করা হয়েছে। যার ফলে মুনছুর আলমের দায়ের করা মামলাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

গ্রাহক হাজেরা বলেন, কোস্ট ফাউন্ডেশন থেকে আমরা ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে প্রায় ১৯,৮৪০/- কিস্তি পরিশোধ করেছি। কিস্তি চলমান অবস্থায় করোনা মহামারী শুরু হলে আমার স্বামীর আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এসময় আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার ফলে আমি কিস্তি দিতে পারিনি। এরিয়া ম্যানেজার আমাদের বাসায় এসে সব শুনে কিস্তি মওকুফ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম প্রায় সময় আমার বাসায় এসে কিস্তি মওকুফ করে দেওয়ার কথা বলে আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। আমি বিষয়টি আমার স্বামী, মেয়ে ও আত্মীয়দেরকে জানাই। ২৪ ডিসেন্বর মুনছুর আলম পুনরায় আমাদের বাসায় এসে পূর্বের মতো কিস্তি মওকুফ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং আমার গায়ে হাত দেওয়ার চেস্টা করে। আমি মুনছুরের কাছ থেকে সরে গিয়ে আমার মেয়ে ও দেবরের স্ত্রীকে জানালে তারা মুনছুরকে ধাওয়া করলে মুনছুর দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আমরা লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে নিজেদের মধ্যে গোপন রাখি। এখন দেখি মুনছুর আলম ওই ঘটনাকে আড়াল করতে উল্টো ওই দিনের তারিখের একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়েছে। মুনছুরের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাদেরকে হয়রানী করার জন্যই এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা এই মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা সুষ্ঠ তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই।

হাজেরার স্বামী মোঃ রফিক বলেন, কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম আমার স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়। আমরা স্ত্রী রাজি না হয়ে তাকে ধাওয়া করলে সে পালিয়ে যায়। এখন মুনছুর আলম নিজের অপরাধকে আড়াল করতে উল্টো আমিসহ ৪জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দিয়েছে। মুনছুর আলম প্রথমে থানায় মামলা করার জন্য একটি অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু থানা পুলিশ তার মামলা গ্রহণ করেনি। মুনছুর বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আদালতের মামলার বিবরণ ও থানায় দেওয়া অভিযোগের বিবরণের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এতেই বুঝা যায় মুনছুরের মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও আমাদেরকে হয়রানী করার জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা এব্যাপারে প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কোস্ট ফাউন্ডেশন ইলিশা শাখার ব্যবস্থাপক মুনছুর আলম বলেন, আমি কিস্তি আনতে গেলে তারা আমাকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং আমার মটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। তারা উল্টো নিজেরা ওই ঘটনাকে ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমাকে মারধরের ঘটনায় আমি আদালতে মামলা করেছি।

২৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS