শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পানছড়ির শারীরিক প্রতিবন্ধী ববিতার সংগ্রাম চলছেই

পানছড়ির শারীরিক প্রতিবন্ধী ববিতার সংগ্রাম চলছেই

পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি :  ছোট থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ববিতা চাকমা। হাঁটতে হয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অনেক কষ্ট করে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে ডিগ্রি পাস করেছেন। একটি চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পাননি। তবে থেমে নেই তিনি। অসুস্থ বৃদ্ধ মাকে নিয়ে তাঁর সংগ্রাম চলছেই।
ববিতা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার চেংগী ইউনিয়নের মঙ্গলধন পাড়ার মৃত পিয়াস কান্তি ও নিরবালা চাকমার মেয়ে। চার ভাই ও দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তারা আলাদা থাকেন। মাকে নিয়ে থাকেন ববিতা। এখনো তাঁর বিয়ে হয়নি। দোকানদারি করে সামান্য যে কয়েকটা টাকা পান, তাই দিয়েই চলে সংসার। অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী হিসেবে ২০২১ সালের জন্য ববিতাকে উপজেলায় সেরা জয়িতার সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
চেংগী ইউনিয়নের বৈশাখ কুমারপাড়ায় ববিতার দোকান। দোকানে গেলে দেখা যায়, হাসিমুখে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন ববিতা। প্রয়োজনীয় পণ্য দিচ্ছেন, সতর্কতার সঙ্গে মোবাইল রিচার্জ করে দিচ্ছেন।
ববিতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১১ বছরে বয়সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। ডায়রিয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে ডান পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলেন, পাটি বাঁকা হয়ে যায়। এরপর থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয় ববিতাকে। ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না।
প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পানছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৯ সালে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে সফলতার সঙ্গে ডিগ্রি পাস করেন। বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু হয়নি। এদিকে চাকরির বয়সও পেরিয়ে গেছে। ববিতার বয়স এখন ৩০ বছর ৯ মাস।
নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন সমিতি ঋণ নিয়ে চেংগী ইউনিয়নের বৈশাখ কুমারপাড়ায় একটি দোকান ভাড়া নিয়েছেন। দোকানে বিক্রির জন্য প্রসাধনী সামগ্রী, শিশুদের কিছু কাপড়-চোপড় ও পাঁচ-ছয়টি তরলীকৃত প্রাকৃতিক (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার রয়েছে। সেইসঙ্গে মোবাইলে টাকা রিচার্জ এবং বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা লাভ হয়। সেই টাকা দিয়ে মাকে নিয়ে কোনোমতে চলছে ববিতার জীবন।
ববিতা জানান, তাঁর কৃষক বাবা বেঁচে নেই। তাই মাসহ পরিবারের খরচপাতি তাঁকেই চালাতে হয়। তাঁর দুঃখ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষা দিয়েও পাননি। এজন্য শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ও অর্থনৈতিক দুর্বলতাকেই দায়ী করেন।
চেংগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইন্দ্রজিত ত্রিপুরা বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ববিতা খুব অসহায়ভাবে মাকে নিয়ে আছেন। তাঁর যোগ্যতা আছে। একটা চাকরি জরুরি দরকার।
পানছড়ি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মনিকা বড়ুয়া জানান, প্রতিবন্ধী হয়েও ববিতা চাকমার জীবন চলার সংগ্রাম সত্যিই প্রশংসনীয়। অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী হিসেবে ববিতাকে উপজেলায় সেরা জয়িতার সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

৭৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares