বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তেঁতুলিয়া মাদ্রাসার নিয়োগ বাণিজ্যের ঘুষের টাকা আদায়ে মাদ্রাসায় তালা দিল ভুক্তভোগীরা

তেঁতুলিয়া মাদ্রাসার নিয়োগ বাণিজ্যের ঘুষের টাকা আদায়ে মাদ্রাসায় তালা দিল ভুক্তভোগীরা

তেঁতুলিয়া  (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি  : তেঁতুলিয়া একটি মাদরাসায় নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদে ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থীর কাছে টাকা নিয়েও নিয়োগ না দেয়ায় ক্ষোভে মাদরাসা তালা লাগানোর ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (২৭ নভেম্বর) উপজেলার তেঁতুলিয়ার শিলাইকুঠি বালাবাড়ি দাখিল মাদরাসার অফিস কক্ষে তালা দিয়ে সে স্থানে কান্না করতে থাকেন ভুক্তভোগী পরিবার।
এ ঘটনায় সকাল ১০টায় মাদরাসার বার্ষিক পরীক্ষার প্রথম দিন হলেও তা দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এতে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। আর সকাল থেকে মাদরাসার সুপার বদিরুল আলম সরকারকেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। অভিযোগ উঠেছে, তারা নিয়োগে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্য করে গা ঢাকা দিয়েছেন।
জানা যায়, গতকাল শনিবার বিকেলে কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে মাদরাসাটির নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়োগে মাদরাসাটির দাতা সদস্য তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সোহেলকে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। তার কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষও নিয়েছে মাদরাসার কমিটি। কিন্তু নিয়োগ না দেয়ায় সকালে মাদরাসার অফিস কক্ষ তালা মেরে দেন ভুক্তভোগীরা। অফিস কক্ষের সামনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে জ্ঞান হারান সোহেলের মা আরজিনা বেগম।
সুয়েল রানা জানান, আমার পরিবারের কাছ থেকে আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে চাকরি বিজ্ঞপ্তির আগেই টাকা নিয়েছেন। চাকরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমাকে আবেদন করতে বলা হয়। আবেদন করি ও পরীক্ষাও দেই। কিন্তু আমাকে নিয়োগ না দিয়ে বেশি টাকা বাণিজ্য করে এই মাদরাসার সভাপতি তার ভাইয়ের ছেলেকে নিয়োগ দিয়েছেন। কেন আমাদের সাথে এমন প্রতারণা করা হলো। এ জন্য নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।
ভুক্তভোগী সোহেলের বাবা তোফাজ্জল হোসেন জানান, আমরা মাদরাসার দাতা সদস্য। এ মাদরাসার নৈশ প্রহরী পদে আমার ছেলেকে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। গত বছর থেকে চাকরি দেয়ার কথা বলে মাদরার সুপার বদিরুল আলম সরকার সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু গতকাল সভাপতি ভাইয়ের ছেলেকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে। তারা কেন আমাদের সাথে এভাবে প্রতারণা করতে পারে। এ জন্য উপজেলা ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, মাদরাসার নৈশ প্রহরী পদে চাকরি দেয়ার নামে দফায় দফায় এই ভুক্তভোগী পরিবারটির কাছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছে মাদরাসাটির সুপারিন্টেন্ডেন্ট বদিরুল আলম সরকার ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমিন আলী (আর্মি)। শনিবার বিকালে শূন্য নৈশ প্রহরী পদে সুয়েল রানাকে নিয়োগ না দিয়ে সভাপতির ভাতিজাকে নিয়োগ দেয়। কাজটি ঠিক হয়নি।
এদিকে দুপুর পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে। পরে দুপুর ২টার দিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার  ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে বিকেল ৩টায় বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাদরাসায় ভুক্তভোগীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে মাদরাসাটির সুপারিন্টেন্ডেন্ট বদিরুল আলম সরকার ছুটিতে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। সকাল থেকে সভাপতি আমিন আলীর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের মাধ্যমে ঘটনাটি জেনে ছুটে এসে ভুক্তভোগীদের বুঝিয়ে পরীক্ষা শুরু করা হয়। বিষয়টি প্রশাশনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। নিয়োগে অনিয়ম বা বাণিজ্য হয়েছে এরকম তথ্য প্রমাণের সত্যটা পেলে প্রশাসনিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর মাদরাসার তালা মারার বিষয়টি অবগত হওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়ে খুলে দেয়া হয়েছে।
২৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS