রবিবার- ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চামড়া খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে

চামড়া খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে

চামড়া খাতে ধারাবাহিকভাবে কমছে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ। চলতি বছর কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়ায় ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ২৫৯ কোটি টাকা। গত বছর এই বরাদ্দের অঙ্ক ছিল ৪৪৩ কোটি টাকা। আর ২০২১ ও ২০২০ সালে ছিল যথাক্রমে ৫৮৩ কোটি এবং ৬৪৪ কোটি টাকা। আর বরাদ্দকৃত অর্থের একেবারে ক্ষুদ্র একটা অংশই চামড়া ব্যবসায়ীরা পেয়ে থাকে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- চামড়া খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো উদাসীনতা দেখাচ্ছে। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ডজনখানেক ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দেয়। যদিও ঈদের আগে প্রতিবছরই রাষ্ট্রীয় মালিকানার ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক চামড়া খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু বিতরণ কখনো ১০০ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করেনি। চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোরবানির ঈদেই দেশের ট্যানারি শিল্পের কাঁচামালের মূল জোগান আসে। এ সময়ে ট্যানারিগুলোর চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। আর তার ওপর ভর করেই সারা বছর ট্যানারিগুলো সচল থাকে। চামড়া সংগ্রহে ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত নগদ অর্থের প্রয়োজন পড়ে। আর সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক তা পূরণ করে থাকে।

চলতি বছর ১২টি ব্যাংক মিলে ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে। এবার ব্যাংকটি কোরবানির চামড়া ব্যবসায়ীদের ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। সূত্র জানায়, চলতি বছর কোরবানীর চামড়া খাতে অগ্রণী ব্যাংক ৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৩০ কোটি, সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি, ইসলামি ব্যাংক ৫ কোটি ৩১ লাখ, বেসিক ব্যাংক ৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৫ কোটি, আল-আরাফাহ্ ইসলামি ব্যাংক ৬ কোটি ৫০ লাখ, এনসিসি ব্যাংক ২ কোটি এবং সিটি ব্যাংক মাত্র ২০ লাখ টাকা দেবে। আর সাউথইস্ট ব্যাংক বলেছে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে। বিগত ২০২০ সালে কোরবানীর চামড়া খাতে ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।

তবে বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। আর ওই ঋণের ৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। চামড়া খাতে ব্যাংক যে টাকা ঋণ দেয় তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খেলাপি। এদিকে ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, চামড়া খাতে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ট্যানারিগুলোর তা পরিশোধ না করার প্রবণতা রয়েছে। তবে ২ বা ৩ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুরোনো ঋণ পুনঃতফশিলের সুবিধা দেওয়া হয়। আগের টাকা পরিশোধে আগ্রহ দেখায় না বলেই তারা নতুন ঋণ পায় না। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন নীতিমালার আলোকে ঋণ দেয়া হয়। গত বছর কোরবানির ঈদে ঋণ নিয়ে যারা পরিশোধ করেছে, তারা ঋণ পাবে।

যদি তারা অর্ধেক ঋণ পরিশোধ করেন, তাহলে ঋণও অর্ধেক পাবেন। চামড়া শিল্প রক্ষায় এ খাতে অর্থায়ন যেন সমস্যা না হয় সেজন্য ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। কিন্তু চামড়া খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বেশি। তাই ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, মাত্র কয়েকটি ব্যাংক কোরবানি ঈদের চামড়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিলেও তা শুভংকরের ফাঁকি। কারণ বরাদ্দ করা অর্থের মাত্র ১০ শতাংশ বণ্টন হয়। তাও আবার যেসব ট্যানারি ব্যবসায়ীর সক্ষমতা আছে কেবল তাদেরই পুনরায় ঋণ দেয় ব্যাংক। যারা বকেয়া পরিশোধ করতে পারে না, তাদের ঋণ পুনঃতফশিল করে কিছু অংশ ঋণ দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে তারা নতুন ঋণ পায় না। চামড়া খাতে নতুন করে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা প্রয়োজন। তা না হলে কঠিন হবে চামড়া খারতন সংকট কাটিয়ে ওঠা।

১৭৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares