শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আটোয়ারীতে মৃত্যুর সনদ না পেয়ে বিপাকে হত্যা মামলার বাদী

আটোয়ারীতে মৃত্যুর সনদ না পেয়ে বিপাকে হত্যা মামলার বাদী

পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় জমি জমা বিষয়ক দন্দ্বে একজনের মৃত্যু হলে আপোষের প্রলোভন দেখিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা প্রক্রিয়া স্থগিত করান স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রামের দালালরা। ময়না তদন্তের পর মরদেহ পুরিয়ে ফেললে আপোষের কথা অস্বীকার করছেন বিরোধী পক্ষ।
এমন একটি ঘটনায় আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের বারঘাটি গ্রামের একটি পরিবার বিপাকে পড়েছে। এলাকাতেও সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। এদিকে মৃত্যুর সনদও দিচ্ছেন না চেয়ারম্যান।
এসব অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন ওই গ্রামের মৃত: গবিন চন্দ্র দেবের ছেলে গোপাল চন্দ্র দেব।
অভিযোগে জানা যায় তড়েয়া মৌজার এস এ ১৬৬৮ নং দাগের ৯ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দন্দ্ব চলছিল মৃত: গবিন চন্দ্র এবং তোড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ অনিল চন্দ্র দেবের মধ্যে।
চলতি বছরের গত ১৬ এপ্রিল দুপুরে একই জমিতে দুপক্ষই কৃষি কাজ করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।এসময় গবিন চন্দ্রকে কোদালের ডাঠার আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পরে।
স্থানীয় ও পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে দ্রুত আটোয়ারী হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ খবর পেয়ে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নিয়ে যায় ।
মৃত: গবিন চন্দ্রের পরিবারের অভিযোগ কোদালের ডাঠা দিয়ে গবিন চন্দ্রের বুকে আঘাত করেন অনিল চন্দ্র দেব। এদিকে গবিন চন্দ্রের ছেলেরা এ ঘটনায় হত্যা মামলা করতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন প্রতিবেশি ও তোড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ তাদেরকে আপোষের প্রস্তাব দেন।
৫ লক্ষ টাকা ও ৯ শতক জমির মালিকানা নিশ্চিত করার প্রলোভন দেখিয়ে চুপচাপ থাকতে বলা হয় তাদেরকে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে আপোষের প্রস্তাবকারীরা তাড়াতাড়ি পুড়িয়ে ভেলার পরামর্শ দেন। মরদেহ পুড়ে ফেলার পরদিন থেকেই আপোষের আলোচনা অস্বীকার করছেন প্রতিপক্ষ ও দালালরা।
এদিকে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে গবিন চন্দ্রের মৃত্যুর সনদ চাইলেও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরিবারকে মৃত্যু সনদ দিচ্ছেনা। এসব অভিযোগ এনে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন অসহায় পরিবারটি।
গবিন চন্দ্রের স্ত্রী নলিতা রানী সংবাদ প্রতিক্ষনকে জানান আমার চোখের সামনে কোদালের ডাঠা দিয়ে আমার স্বামীর বুকে আঘাত করেছে। পরে তারা আপোষের কথা বলে। আমরা গরিব মানুষ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতাদের কথা ফেলতে পারিনি।
ছেলে গোপাল চন্দ্র রায় সংবাদ প্রতিক্ষনকে জানান, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহ এবং বেশ কয়েকজন প্রতিবেশি আমাদেরকে আপোষ করার জন্য প্রলোভন দিয়েছে। তারা হত্যার কথা চাপা রেখে পুলিশকে হার্ট এ্যাটাকের কথা বলতে বলেছে। এখন তারা মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে আপোষ মিমাংসার কথা অস্বীকার করছে। আমাদের কাছে সবকিছু মোবাইল রেকর্ড রয়েছে। তাদের জন্য আমরা আদালতে আশ্রয় নিতে পারিনি। এখন মৃত্যু সনদও দিচ্ছেনা। আমাদেরকে নানা রকম হুমকিও দিচ্ছে।
আমরা দুই ভাই মা এবং পরিবার নিয়ে গভীর সংকটে আছি।এদিকে জমি নিয়ে দন্দ্বের কথা স্বীকার করলেও সংঘর্ষ এবং আপোষের কথা অস্বীকার করেছেন অনিল চন্দ্র দেব। তিনি জানান গবিন চন্দ্র দেবের মৃত্যু হয়েছে এটা সত্য। তার মৃত্যুর ময়নাতদন্ত হয়েছে।পোষ্ট মর্টেমের রিপোর্ট যদি কোদালের আঘাতের মৃত্যু হয়,আইন আমাকে যে সাজা দিবে আমি তা মেনে নেবো।
গ্রাম পুলিশ অনিল চন্দ্রদেব অস্বীকার করলেও আপোষ প্রলোভনের কথা বলছেন একই গ্রামের নিতাই চন্দ্র।তিনি সংবাদ প্রতিক্ষনকে জানান গ্রাম পুলিশ অনিল চন্দ্র দেব ৫ লক্ষ টাকা ও জমির মালিকানা দিতে চেয়ে আমার মাধ্যমে আপোষের প্রস্তাব দিয়েছিল।
তোড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ সংবাদ প্রতিক্ষনকে জানান, মরদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট এখনো আসেনি। এ ঘটনায় আটোয়ারী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যু সনদ দেয়া যাবেনা।
আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা সংবাদ প্রতিক্ষনকে জানান, অনেক রাতে আমরা মরদেহ পোষ্ট মর্টেমের জন্য নিয়ে আসি।মরদেহটি পোষ্ট মর্টেম করা হয়েছে। ইউডি মামলা হয়েছে। পোষ্ট মর্টেমের রিপোর্ট পেলে আইনি প্রক্রিয়া নেয়া হবে।

৪৪৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares