শুক্রবার- ২৮শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৪ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিরলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে করাতকল

বিরলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে করাতকল

আতিউর রহমান, বিরল (দিনাজপুর) ::  দিনাজপুরের বিরলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে করাতকল (স’মিল)। সরকারের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা এসব করাতকলের কারণে ধ্বংস হচ্ছে বনজ, ফলজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির গাছ। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমানের রাজস্ব। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই উজার হবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সৃজিত উভয় বাগান।
বন বিভাগের কর্মকর্তারাও এসব করাতকলের অনুমোদন প্রদানে সরকারি নিয়মনীতি না মেনে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অলিখিত অনুমোদন দিয়েছে এমনটি অভিযোগ জনসাধারণের। ফলে বিরলের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে লাইসেন্স বিহীন করাতকল (স’মিল)।
আর এসব করাতকলে (স’মিলে) উজার হচ্ছে বনের শাল, সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতীর গাছ। অবৈধভাবে চলা এসব করাতকল (স’মিল) মালিকদের বিরুদ্ধে নেই কোন প্রশাসনিক তৎপরতা। এ পর্যন্ত বিরল উপজেলায় করাতকলের (স’মিলের) সংখ্যা দাড়িযেছে ২৯ এ। আবেদন করেছে আরোও নতুন ১ টি। যা ধর্মপুর ফরেস্ট বীট কর্মকর্তা মহসিন আলী এর তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুর বন বিভাগসহ ধর্মপুর ফরেস্ট বীটের নাকের ডগায় রাত দিন চলছে লাইসেন্সবিহীন এসব করাতকল (স’মিল)। বিশেষ করে ধর্মপুর ফরেস্ট বীট এলাকায় রাণীপুর মৌজায় সংরক্ষিত শাল বন এর সাথেই পানি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এলাকায় মোতালেব মেম্বার  অনুমোদন ছাড়াই করাতকল (স’মিল) স্থাপন করে চোরাই কাঠ চেরাই করে অতি সহজেই দিনাজপুর শহরে পাচার করছে চোরাই কাঠ।  যেন দেখার বা বলার কেউ নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বীট কর্মকর্তার সহযোগিতায় দিনের পর দিন এসব করাতকল (স’মিল) চালু রয়েছে। এসব করাতকল ও অতিরিক্ত গাছ চুরির কারনে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। করাতকলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান না থাকায় অনুমোদনহীন এসব অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে চলছে বৃক্ষ নিধন।
বন বিভাগের ধর্মপুর ফরেস্ট বীট কর্মকর্তা মহসিন আলী জানান, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা নিষিদ্ধ হলেও অবাধে চলছে করাতকলে কাঠ চেরাই কার্যক্রম। সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়ন এলাকাসহ ৮ থেকে ৯ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। বনাঞ্চলের পাশেই এসব অবৈধ করাতকলে চোর ও কাঠ ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে চেরাচ্ছে বনের গাছ। ফলে উজার হচ্ছে বন ও বিভিন্ন সড়কে মুল্যবান গাছ।
রাণীপুর ফরেস্ট এর আওতায় মোতালেব মেম্বার নামের ওই ব্যাক্তি আইনকে তোয়াক্কা না করে রাত দিন কাঠ চেরাই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। মানছে না কোন আইন। এক সময় বিরল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমান আদলত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করার পরও চ্যালেঞ্জ দিয়ে করাতকল চালিয়ে আসছে সে। ধর্মপুর ফরেস্ট বীট কর্মকর্তা মহসিন আলী এর কাছে মোতালেব মেম্বার বনাঞ্চলের এরিয়ায় কিভাবে করাতকল চালু করেছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, একাধিকবার তাঁকে করাতকল বন্ধ করতে তাগিদ দেয়ার পরও চালু রাখার অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক করাতকল মালিক বলেন, আইনানুযায়ী এসব করাতকল স্থাপন হওয়ার কথা না। কিন্তু তারপরও স্থাপন করা হয়েছে। এতেই বুঝতে হবে। কেন কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে। অনেকের অনুমোদন না থাকলেও কিন্তু তাদের করাতকল রাত দিন চলছে। বাঁধা দেয়ার কেউ নেই। বেশিরভাগ করাতকলের অনুমোদন নাই। মাঝে মধ্যে অবৈধ করাতকলের অভিযান চালানোর কারণ মাসোহারা আদায়ের জন্য। বন বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে এসব অবৈধ করাতকল মালিকদের সাথে গোপন আঁতাত রয়েছে বলেও অনেকের অভিযোগ রয়েছে।

বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS