শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নবীন প্রজন্মের উন্নত জীবন গঠনে অভিভাবকের ভূমিকাঃ

নবীন প্রজন্মের উন্নত জীবন গঠনে অভিভাবকের ভূমিকাঃ

নবীন প্রজন্মের উন্নত জীবন গঠনে অভিভাবকের ভূমিকাঃ

অধ্যাপক মোঃ আবু সামা মিঞা (ঠান্ডু)

নবীন প্রজন্মের উন্নত জীবন গঠন ও পরিচালনার জন্য অভিভাবককে সচেতন ও সতর্ক থাকা বাঞ্চনীয়। নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকা জরুরী। অভিভাবককে আত্মযোগ্যতা ও আত্মনিয়ন্ত্রনে বিচক্ষণ হতে হবে। আত্মনিয়ন্ত্রণ হচ্ছে মানুষ তার নিজ প্রতিভা, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা, বিচেক্ষণতা নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করবে এবং অতীত, বর্তমান, ও ভবিষৎ জীবনকে কিভাবে সফল, সার্থক, সুন্দর করে, প্রকৃত মানুষ হিসেবে সফলতা অর্জণ করবে। সে কারণে অভিভাবকগণ নিজের সম্পর্কে জানবেন। সন্তানের সৌন্দর্যময় ভবিষ্যতের জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা। গভীরভাবে অনুধাবন করে চিন্তাকে বাস্তব রূপ দিতে কাজ করতে থাকা।

সন্তানের ভালো কিছু প্রত্যাশা করা সে বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া। প্রথমে যে বিষয়টি জরুরী তা হলো সন্তানকে পারিবারিক সম্প্রীতি এবং শৃঙ্খলা বোধে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া। নবীন প্রজন্ম তার পরিবার পরিবেশ ও আত্মীয় পরিজন থেকে শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। সন্তানের ভবিষ্যত জীবন সুখ শান্তি ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মানব চরিত্রের উত্তম ও নৈতিক গুণাবলি যেমন সততা, সত্যবাদীতা, পরিচ্ছন্নতা, দয়া, দানশীলতা, ন্যায়পরায়নতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী অর্জনের পথ দেখানো যাতে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে অলসতা ও উদাশীনতা, অনৈতিক ও অন্যায় কার্যাবলী হতে বিরত থেকে সৎ ও মানবিক জীবন যাপনে অনুপ্রাণিত হয়। মিথ্যা কথা বলা, প্রতারণা করা, পর নিন্দা, হিংসা- বিদ্বেষ, দলাদলি হতে দূরে থেকে সৎ ও কর্মশীল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়। আচার আচরণে বিনয়ী হয়ে ভ্রাতৃত্ত¡বোধ, মৈত্রী উদারতা, পরমত সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুণাবলী লালন করতে শিখে। নবীন প্রজন্ম ছোটবেলা থেকে পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের জন্য পিতামাতা ভাইবোন প্রতিবেশী সহ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সোহার্দ্য বজায় রাখে সেদিকে নজর রাখা। পিতামাতার প্রতি উত্তম ব্যবহার করা। শিক্ষকদের সম্মান করা, বড়দের শ্রদ্ধাভক্তি ও ছোটদের ¯েœহ দিয়ে প্রশংসনীয় আচরণে অনুপ্রাণিত হবে। একজন অভিভাবককেও ভালো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করতে হবে। আর ভালো মানুষ মানেই সৎ ও নীতিবোধ সম্পন্ন ধার্মিক মানুষ। ভালো মানুষ সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন। কারো ক্ষতি করে না, সকলের উপকার করেন এবং মন্দ কাজ থেকে দুরে থাকেন। যা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে নবীন প্রজন্মের মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব জাগ্রত হবে এবং প্রতিটি কথা ও কাজ মানব কল্যানে নিবেদিত হবে। জীবনকে সততা, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উন্নত ও মাহিমান্বিত করা সম্ভব। সত্যকে ধারণ করতে পারলে আদর্শ মানুষ হওয়া যায়। মনে রাখতে হবে সততাই সর্বোত্তম নীতি। নবীন প্রজন্ম নবীন বয়সেই কর্তব্য দায়িত্ব পালনে এবং চিন্তা চেতনায় উত্তম মানবিক গুণাবলী ও আদর্শ অনুশীলনের মাধ্যমে কর্মজীবনে সমাজের মানুষের কাছে ন¤্র, ভদ্র ও গ্রহন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

কর্ম বিমুখতায় মানুষের মেধা শক্তি ও সময়ের অপচয় হয়। কর্ম বিমুখতা ও অলসতা উন্নত জীবন গঠনের অন্তরায়। কর্ম বিমুখতার ফলে নবীন প্রজন্ম জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝায় পরিণত হয়। অভিভাবক গণ নবীন প্রজন্মের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে অলসতা ও উদাশীনতা, অশ্লীলতা ও মন্দ কর্মের চর্চা থেকে দূরে এনে কল্যাণকর জীবন গঠনে ভূমিকা রাখবেন। নবীন প্রজন্মের মধ্যে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ শৃঙ্খলাবোধ, শিষ্টাচার মিলেমিশে বাস করার মানসিকতা, মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও মানবিকতার বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। নবীন বয়সেই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ, নির্বিশেষে সকলের প্রতি ভালবাসা, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার, শ্রদ্ধা, সাম্য, সহমর্মিতা, ও সহযোগিতা বোধ জাগানো যাতে পরসপর একতাবদ্ধ হয়ে শান্তীময় পরিবেশের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে দেশপ্রেম জাতীয়তাবোধ, ত্যাগের মনোভাব সৃষ্টি করা, অন্যের সম্পত্তির প্রতি লোভ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ অনৈতিক ভাবে অর্জন করা থেকে বিরত থাকবে। জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান আহরণের জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌছার পর কর্ম জীবনে অন্যের অধিকার হরণ করা, অন্ন বস্ত্র উপার্জনের ক্ষেত্রে অবৈধ ও অনৈতিক পথ অবলম্বন ও অসৎ কর্মের মাধ্যমে নিজেকে কুলষিত করলে সফল কাম হবে না। নীতিবোধ ছাড়া শিক্ষা সমাজের কাছে ক্ষতিকর হয়ে উঠে। জনগনের সেবার মানসিকতা পরিহার করে, ত্যাগী মনোভাব নিয়ে কাজ না করে, নীতি নৈতিকতা আইনকানুন, বিধি বিধান না মেনে অসৎ পথে উপার্জন করে গাড়ী বাড়ী বিত্ত বৈভব, প্রভাব প্রতিপত্তি লাভ করার তীব্র আকাংখা বাস্তবায়নে মনোনিবেশন করলে ধ্বংশ অনিবার্য। দেশের মানুষের মনে দুঃখ কষ্ট পেতে পারে এমন আচরন থেকে বিরত থাকতে হবে। কেহ বিপদে পড়লে বিপদ দুর করার চেষ্টা করতে হবে। চরম ত্যাগ ও ধর্য্যের মাধ্যমে নৈতিকতার অনুশীলন করে জীবনের সব কাজেই সময় নিষ্ঠ, দায়িত্বশীল, সহানুভুতিশীল হয়ে দেশ ও জাতীর কল্যানে নিবেদিত হলে ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে সুখ শান্তী অর্জিত হবে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন “বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে নিজের জীবনের হিসাব করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য সৎ কাজ করে। নির্বোধ সে নিজেকে প্রবৃত্তির দাসে পরিনত করে আবার আল্লাহর অনুগ্রহের আশা করেন”। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আররা বলেন “হালাল রুজী বা সৎ উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু”।

সৎ উপার্জনে আল্লাহর অনুগ্রহ থাকে আর অসৎ পথে উপার্জন দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্চনা, অপমান ও দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে। মনে রাখতে হবে লোভী ব্যক্তি পাপী ও পথ ভ্রষ্ট। অপর পক্ষে নির্লোভ ব্যক্তি পাপাচার মুক্ত সত্য ও সুন্দর জীবন লাভ করে। নির্লোভ ও সৎ ব্যক্তি সকলের শ্রদ্ধা ভক্তি অর্জন করে। অভিভাবকের প্রত্যশা হচ্ছে নবীন প্রজন্ম উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে সচ্ছতা, পরিশুদ্ধতা, সততা, ধর্য্যশীলতা, বিচক্ষনতা ইত্যাদি মানবিক গুনাবলী লালন করে দেশের কল্যানে কাজ করবে। কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও বুদ্ধি মত্তা খাটিয়ে গর্বিত ও উন্নতজাতী গঠনে সফলতা অর্জন করবে।

২৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares