মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পটুয়াখালীতে মাছ শিকারের মহা উৎসব

পটুয়াখালীতে মাছ শিকারের মহা উৎসব

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি।।পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয়, ডোবা ও বিল-ঝিলে পানি কমে যাওয়ার ফলে পলো দিয়ে মাছ শিকারের মহা উৎসব। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এতে অংশ নেয়। চরহোসনাবাদ খালে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় থেকেই পেশাদার ও অপেশাদার জেলেরা মাছ ধরার পলো নিয়ে খালে ঝাপিয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার মাছের ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত আলীপুরা, বাঁশবাড়িয়া, রনগোপালদী, চরবোরহান, দশমিনা, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নসহ চরাঞ্চল এখন মাছ শূন্য হয়ে গেছে। উল্লেখিত এলাকায় বোয়াল, মাগুর, শিং, কৈ, টেংরা, শোল, টাকি, পুটি, গজার, চাপিলা, খৈইলশা, পাবদা, আইড়, চিংড়ি, মলা, বাইন, বেলে সহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হবার পথে রয়েছে। বিশেষ করে নদীর মাছ হিসাবে পরিচিত পোয়া, ইলিশ,আইড়, রিটা যার দেখা এখন অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সর্বত্র নিষিদ্ধ ঘোষিত জালের অবাধ ব্যবহার, কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, বর্ষাকালে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা মাছ সহ পোনা নিধন,শুস্ক মৌসুমে মাছ ধরার প্রবনতা এবং মাছের বিচরন ক্ষেত্র কমে যাওয়া সহ প্রভৃতি কারনে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ফসল হিসাবে পরিচিত মৎস্য সম্পদ আজ বিলুপ্ত হতে চলছে। এছাড়া মাছের প্রজনন মৌসুম ও পোনা মাছের বৃদ্ধিকালীন সময় অবাধে ছোট-বড় মাছ ধরা এবং মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় মৎস্য সম্পদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিগত ২০বছর আগে গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। চাষকৃত মাছের কাছে দেশী প্রজাতির মাছ টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে। মাছ না থাকায় পলো উৎসব এখন আর আগের মত জমছে না।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের হারুন, লাল মিয়া ও সেলিম হোসেন বলেন, তাদের বাড়ির পাশেই বিশাল বড় বিল। বর্ষা মৌসুমে টানাজাল পেতে বিল থেকে মাছ ধরেন। বিলের জল কোমর কিংবা হাঁটু সমান নেমে এলে গ্রামের মানুষ দলবেঁধে পলো নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। এ সময় আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ আসেন। তিনি আরও বলেন, সব দেশি প্রজাতির মাছ। অতি সুস্বাদু। পলো বাওয়ার দিন একেক জন গড়ে ৫-১০ কেজি মাছ ধরেন। পেশাদার শিকারিরা আধা মণ থেকে এক মণ মাছ শিকার করেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মাছ ধরায় কেউ বাধা দেয় না। গ্রামের মানুষেরা দলে দলে এসে বিলর পারে বসেন। গল্পগুজব করেন। এরপর সবাই একসঙ্গে নেমে পড়েন। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছেন, পলো দিয়ে মাছ ধরার বিরাট এ উৎসব হয়। উপজেলা সদর ইউনিয়নের এইচ এম ফোরকান বলেন, এক সময় তাদের এলাকার বিলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। বড় বড় বোয়াল, রুই, কাতলা পলোর নিচে আটকা পড়ত। তখন পাশের পলোওয়ালাও মাছটা তুলতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতেন। মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্যও ছিল অতি চমৎকার। প্রায় সবাই কোনো না কোনো পেয়ে আছি।
দশমিনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, নদীর পানি মিষ্টি। বর্ষা মৌসুমে এই পানি খাল বিলে প্রবেশ করে বিধায় এখানে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তবে এক শ্রেণির কৃষক নদীতে পাট পচান এবং ফসলি জমিতে বিষ দেন। এ কারণে প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে গেছে। দেশি মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিটি খাল, বিলসহ জলাশয়ে মাছের অভয়াশ্রম নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ রক্ষার্থে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে।

১২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS