শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নদীতে আশা অনুরুপ মাছ না পেয়ে পটুয়াখালীতে হতাশ জেলেরা

নদীতে আশা অনুরুপ মাছ না পেয়ে পটুয়াখালীতে হতাশ জেলেরা

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকার করতে নেমে আশা অনুরুপ মাছ না পেয়ে হতাশ জেলেরা। আশানুরূপ মাছ না পেয়ে জেলেদের কষ্টই বৃথা হয়ে যাচ্ছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে জাল ফেলার পর আশা অনুরুপ মাছ পাচ্ছে না। ফলে জেলেরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

উপজেলার বাঁশবাড়িয়া, হাজীরহাট, গোলখালী মৎস্য ঘাট এবং বাঁশবাড়িয়াঘাটসহ হাট-বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে অনেক জেলে বসে আছেন। কেউ মাছ ধরতে জাল নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন। আবার কেউ জাল ফেলে তেমন মাছ না পেয়ে নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে আছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে যেখানে জালভর্তি মাছ পেয়ে জেলেদের মুখে সব সময় হাসির ঝিলিক লেগে থাকার কথা, সেখানে জেলের মুখ হয়ে আছে মলিন। কারণ নদীতে ইলিশ শিকারের আয়োজনে তাঁদের খরচের টাকাই উঠছে না।

দশমিনা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে কার্ডধারী ১০হাজার ১শ’ ৭১জন বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী জেলে রয়েছে। আর সরকারি সাহায্য সহযোগীতার আওতায় ভিজিএফ’র ৬ হাজার জেলে সমুদ্রগামী।

উপজেলার গোলখালী এলাকা থেকে শনিবার মধ্যরাতে মাছ ধরতে নদীতে নামেন জামাল হোসেনসহ চার জন এক নৌকায়। রাতে তিনটি ‘খেও’ (জাল ফেলে) দেওয়ার পর অল্প কিছু পোয়া মাছ ও রাম ছোর পেয়ে ঘাটে এসে নোঙর করে দুরচিন্তায় বসে আছে। জামাল বলেন, অভিযান (নিষেধাজ্ঞার) সময় আমরা নদীতে মাছ ধরতে যাইনায়। ওই সময় গেলে মাছ বেশি পাইতাম। অভিযান (নিষেধাজ্ঞা) শেষে নদীতি নামি দেহি কোনো মাছ নেই। রাতভর তিন খেপ দিয়া মাত্র ৭-৯ কেজি পোয়া আর ছোর মাছ পাইছি । তাও সব ছোট মাছ আর ১শ’ ৮০টাকা কেজি দরে বেঁচিছি । কি আর করমু। মনডা বেশি ভালা নাই। তাই চুপচাপ বইসা আছি।’

বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মাছ ধরতে আসা শাহ আলম খাঁ, জাহাঙ্গীর ও লাল মিয়াসহ আর প্রায় শতাধিক জেলে হতাশার সুরে বলেন, ‘নৌকা নামাতে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কেই গরু-বাছুর বিক্রি করে আর কেউ ঋন নিয়ে জাল-নৌকা নামাইছি। তয় নদীতে কোথাও মাছ নাই। গেল বছর প্রতি খেয় ২০-৩৫ কেজি কইরা বিভিন্ন প্রজাতের মাছ পাইছি। এবার দুই খেও দিইয়া মাত্র ৫কেজি মাছ পাইছি।’ তারা আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে যেখানে জালভর্তি মাছ পেয়ে জেলেদের মুখে সব সময় হাসির ঝিলিক লেগে থাকার কথা, সেখানে অধিকাংশ জেলের মুখ ছিল মলিন। কারণ, নদীতে ইলিশ শিকারের আয়োজনে তাঁদের খরচের টাকাই উঠছে না। বাজারে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে অনেক ইলিশ ধরা পড়বে ভেবে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন কিনতে এসেছেন বাজারে। না পেয়ে তাঁরা হতাশ মুখে ফিরে যাচ্ছেন। অধিকাংশ মাছের আড়ৎ ঘরের সামনে ডালায় সামান্য কিছু মাছ দেখা যায়। ক্রেতাদের ভিড়ে মাছের বাজারও বেশ চড়া। মৎস্য ব্যবসায়ী বাঁশবাড়িয়া ঘাটে মিরাজ খাঁ বলেন, ‘অন্যান্য বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেক ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতের মাছ ধরা পড়ত। গত বছর অনেক মাছ বেচাকেনা করেছি। অভিযানের সময় কেউ কেউ লুকিয়ে মাছ ধরেছে। মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছে অনেকে। অভিযান শেষে ভালো মাছ ধরা পড়বে এই আশায় অনেকে ধারদেনা হয়ে জাল ও নৌকা নামিয়েছে। নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে আমরা হতাশ হচ্ছি।’

এবিষয়ে দশমিনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্রের ওপর ভারসাম্যহীন আঘাতের এবং তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নদীতে মাছের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম

৭৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS