রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বেপরোয়া গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির আহবাহক আব্দুল আজিজ-নিরাপদে নেই নিজ দলের কর্মীরাও

বেপরোয়া গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির আহবাহক আব্দুল আজিজ-নিরাপদে নেই নিজ দলের কর্মীরাও

৭১ Views

ইসাহাক আলী, নাটোর-বিগত ফ্যাসিস্ট স্বৈর-শাসকের সময় সুবিধা নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়াও নিজ দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনের মত আত্মঘাতি অভিযোগ উঠেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে। এছাড়া দোকান দখল, সরকারি কর্মকর্তাকে নির্যাতন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল ও এমনকি বিএনপির নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়েও বঙ্গবন্ধুর প্রতি পুষ্পমাল্য প্রদানসহ শ্রদ্ধা নিবেদনের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নানা অভিযোগ, এমনকি মামলা হলেও কোন প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। অবশেষে দলীয় প্রতিকারের আশায় বিএনপির প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে ধরনা দিয়েছেন ওইসব নির্যাতিত ও ভুক্তভোগীরারা।
তারা মনে করেন, আগামী দিনে বিএনপিকে রক্ষা করতে এমন সিন্ডিকেট ও নির্যাতনকারীর হাত থেকে দলকে রক্ষা করা না গেলে একদিকে যেমন দল জনপ্রিয়তা হারাবে, তেমনি সাধারণ জনগণও মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই অবিলম্বে দল বাঁচাতে চেয়ারপারসনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি’র নেতারা, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তারা বলেছেন, দলের শৃংখলা ও অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। স¤প্রতি এক উন্মুক্ত সভায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু দলের মধ্যে বিশৃংখলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুল আজিজ। আর বিরোধী পক্ষের সাথে আঁতাতের প্রমাণ মিললে তার দলীয় পদ বাতিল সহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা যায়নি।
স্থানীয় লোকজন, ভুক্তভোগী ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কাছে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণসহ আঁতাত করে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড করেন আব্দুল আজিজ। যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ। এছাড়া দলের তৃণমূল দুইজন নেতার ফোনালাপেও বিরোধী পক্ষের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অডিও ফাঁস হলে টনক নড়ে দলের উর্ধ্বসন নেতৃবৃেন্দর। এমন কি শিহাব নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার ছবিসহ টাকা পয়স্ লেনদেনের অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি দলটি। বিষয়টি তৃণমূল থেকে ঊর্ধ্বতন অনেক নেতাদের কানে পৌঁছালেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অর্থনৈতিক অনিয়মের বিষয়টি সবাই বিশ^াস করতে শুরু করেছ। ফলে তৃণমূলের অনেক নেতা কর্মী হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
এক ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদকের সাথে অন্য এক ইউনিয়নের নেতার ফোনালাপে দেখা যায় উপজেলা বিএনপির এই আহবায়কের অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ থাকলেও পদ বাঁচানোর ভয়ে তারা সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ। তাদের ফোনালাপে গত নির্বাচনে টাকা নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে কাজ করার কথাও উঠে এসেছে। গত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা ও আঁতাত রেখে নানা অপরাধ কর্মকান্ডের প্রমাণ থাকলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। সেই সুযোগ তার বেপরোয়া জীবনের পালে হাওয়া দিচ্ছে বর্তমান পটপরিবর্তন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর স্বৈরশাসকের দেশত্যাগের কারণে আওয়ামী লীগের পতনের পর পরই আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন আব্দুল আজিজ।
এক সরকারি কর্মকর্তাকে নিজ কর্মী সমর্থকদের দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, দোকানপাট দখল, জায়গা দখল ও প্রতিষ্ঠান দখল করার মতো অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
দোকান দখল করার প্রতিবাদ করায উপজেলার মোসিন্দা এলাকার মোবারক আলী নামে এক সরকারি প্রকৌশলীকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বেও ওই কর্মকর্তাকে মারপিট করার ঘটনাও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় চাউর হয়েছিল। সে সময়ও ড্যামকেয়ার ভূমিকায় ছিল আব্দুল আজিজ। পট পরিবর্তনের পর বেপরোয়া আজিজ আবারও নিজ কর্মীদের দ্বারা পিটিয়েছেন ওই সরকারি কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ব্যক্তি। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, তাদের নিজস্ব দোকান রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছে ১০ বছর হলো ভাড়া দেয়া থাকলেও তা দখলে নিতে তালা মেরে দিয়েছেন আজিজের কর্মীরা। গত ৫ই আগস্ট থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে দোকানটি। এছাড়া ভুক্তভোগী ওই সরকারি কর্মকর্তার ভাইকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধা প্রদান করছে আজিজ সমর্থকরা।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি জানান, বেপরোয়া বনে যাওয়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ এর বিরুদ্ধে এখনই লাগাম ট্রেনে না ধরলে বিএনপি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি আগামী দিনে বিএনপি’র উপর আস্থাহীন হয়ে পড়বে দলের তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। শুধু মোবারক নয় সাইফুল ইসলাম নামে এক সেনা সদস্যকেও মারপিট ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আজিজের কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সাইফুল ইসলামের বাড়ি বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রখইর গ্রামে। বগুড়ায় কর্মরত সাইফুল ইসলাম এ ঘটনায় বিচার চেয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এসব নির্যাতনের কথা জানানো হয়েছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকেও।
এদিকে শুধু ব্যক্তি নির্যাতন নয় প্রতিষ্ঠান দখলের মত অভিযোগও আছে আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে। উপজেলার হাঁসমারী এলাকার ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের পরিবারের প্রতিষ্ঠিত উচ্চ বিদ্যালয়ৃৃৃ দখলের উন্মুক্ত অভিযোগ এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের নিজস্ব জায়গাযয় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে তিনি সভাপতি থাকলেও তাকে সেই প্রতিষ্ঠানে যেতে দেওয়া হয়নি দীর্ঘদিন। নিজ আঙ্গিনায় প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও এখন তিনি সেখানে যান না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণের পর দুর্নীতিগ্রস্থ সুব্রত কুমার নামের এক শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন আজিজ। যদিও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বি.এড সনদ সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য শিক্ষা বোর্ড থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে ওই নির্দেশ উপেক্ষা করে তদন্ত বন্ধ রেখেছিল সাবেক সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। স¤প্রতি তদন্ত শেষ করেছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
এমন নানা ঘটনায় বেপরোয়া বনে যাওয়া আব্দুল আজিজ এর বিরুদ্ধে নিজ দলের আরো কর্মীদের নির্যাতনের কাহিনীও নানা দিক থেকে দানা বেঁধে উঠছে। মশিন্দা ইউনিয়নের আরো এক বিএনপি কর্মীর জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ কর্মীকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আব্দুল আজিজ এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে নিজ নিরাপত্তার কথা ভেবে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি ভুক্তভোগী ঐ বিএনপি কর্মী।
স্থানীয়রা জানান, বংশীয় প্রভাব ও আঁতাতের রাজনীতির কারণে এলাকায় প্রাব বিস্তার করে অন্যদের কোণঠাসা করে রাখেন বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের এই নেতা।
তবে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এর সত্যতা মিলেছে। তবে পদ পদবি খোয়া যাওয়ার ভয়ে মুখ খুলতে চান না কেউই।
এদিকে পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন সভা সমাবেশে সন্ত্রাস ও দখল বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিলেও বিএনপি নেতাদের এমন হুঁশিয়রিতেও এখনো নিজের বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে এক বিন্দু সরে আসেননি সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান। তবে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নেতারা দৃঢ় ভাবে আবারো সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
এঢাড়া তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন স্বৈও সরকারের সাবেক এমপির সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর মশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য প্রদান সম্মান প্রদর্শনসহ যার একাধিক প্রমান রয়েছে। যা নিয়ে নেতাকর্মিদেও ক্ষোভকে পাত্তা দেননি তিনি। নানা বিতরর্ক কর্মিরা এর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে নাটোর জেলা বিএনপি’র আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেছেন, তিনি একটি মামলায় হাজিরা দিতে বর্তমানে আদালত প্রাঙ্গণে রয়েছেন। পওে কথা বলবেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার স¤প্রতি উপজেলার নাজিরপুর এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ সভায় আবারও সন্ত্রাসের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রকাশ্য ঘোষণা দিলেও সেই সভায় সভাপতিত্বকারী উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক এই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে এমন নানা বিতর্কিত অভিযোগে বিব্রত দলটির নেতা কর্মীরা। ওই জন্য সভায় নেতারা বলেন, দলের কেউ যদি সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করে তার স্থান বিএনপিতে হবে না তাকে আপনারা আইনের হাতে তুলে দিবেন।
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Share This

COMMENTS