মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপনির্বাচনে প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপনির্বাচনে প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি

মোঃ ফারুক মিয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আশুগঞ্জ-সরাইল আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। আগামীকাল বুধবার এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, গতকাল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। তবে শেষ মূহুর্তের প্রচারণাও ছিল অনেকটা নিরুত্তাপ। নির্বাচনী আমেজ বলতে যা বুঝায়, এর কিছুই উপস্থিত নেই। এ অবস্থায় ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিত নিশ্চিত করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ভোটের দিন প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ছাড়াও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। নিরুত্তাপ এই ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। উপনির্বাচনে মোট পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তারা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার (কলারছড়ি প্রতীক), আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেরা বিএনপির সাবেক সভাপতি (বহিষ্কৃত) স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ (মোটর গাড়ি প্রতীক), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী (লাঙল), জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল (গোলাপ ফুল) এবং এই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (আপেল প্রতীক)। এরমধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রচারণার শেষ দিনে সোমবার সকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তারের পক্ষে আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা কেবি স্কুল মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জাপা প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী গণসংযোগ করেছে সরাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এবং জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল গণসংযোগ করেছে আশুগঞ্জে। আর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ নিখোঁজ কিংবা আত্মগোপনে থাকায় গত ৪-৫ দিন যাবত তার নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটি উম্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় কোনো প্রার্থী দেয়নি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেও দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার (কলারছড়ি) পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা আজাদ শিউলী আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকারের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কলারছড়ির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আব্দুস সাত্তারকে জেতানো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামীলীগ। উল্লেখ্য যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন গঠিত। দুই উপজেলায় মোট ১৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় রয়েছে নয়টি ইউনিয়ন ও আশুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে আটটি ইউনিয়ন। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপনির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় দু’লাখ ৪১ হাজার ৭৯টি এবং আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার এক লাখ ৩২ হাজার। উপনির্বাচনে মোট কেন্দ্র ১৩২টি। এর মধ্যে সরাইল উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ৮৪টি ও আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ৪৮টি ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে। এদিকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উপনির্বাচন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নির্বাচনে সংসদীয় আসনে অফিসারস এক হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার কথা রয়েছে। এছাড়াও থাকবে চার প্লাটুন বিজিবির সদস্য, রুবের নয়টি টিম, পুলিশের নয়টি মোবাইল টিম ও চারটি স্ট্রাইকিং টিম। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাত্তার দায়িত্ব পালন করবে তিনজন পুলিশ, অস্ত্রধারী দু’জন আনসার, লাঠিধারী ১০ জন আনসার ও দু’জন গ্রাম পুলিশ। উপনির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপনির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো: শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উপনির্বাচন উপলক্ষে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে অফিসারসহ এক হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও থাকবে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের একাধিক মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। জানা গেছে, উপ-নির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দু’জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

৫১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares