মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কয়রার বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন

কয়রার বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন

খুলনা ব্যুরো : খুলনা কয়রা কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ ফের সংস্কার সম্পন্ন করেছে এলাকাবাসি। এলাকাবাসির পাঁচ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রিংবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

১৭ আগষ্ট রোজ বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগেই এলাকার তরুণেরা প্রতিটি মসজিদের মাইকে এলাকাবাসিকে ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে বাঁধে আসার জন্য ঘোষণা দেয়। নিজেদের রক্ষার তাগিদে ভাঙা বাঁধের কাছে একের পর এক কোদাল হাতে জড়ো হতে শুরু করে হাজারও মানুষ। নদীতে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলেই কাঁধে কাঁধ হাতে হাত মিলিয়ে শুরু হয় কাজ। দুপুরে নদীতে জোয়ার আসার আগ পর্যন্ত একটানা মাটি কেটে, বাঁধ উঁচু করার চেষ্টা চলে।

প্রথমে ভাঙন কবলিত বাঁধের কিছুটা দূর থেকে বাঁশ পুতে টিনের বেড়া দিয়ে পানির প্রবাহ কিছুটা কমিয়ে ফেলা হয়। এরপর বস্তায় মাটি ভরে টিনের বেড়া ঘেঁষে মজবুত করে রাস্তা তৈরী করে হাতে হাতে মাটি দিয়ে বাঁধ উচু করা হয়। এভাবেই আস্তে আস্তে সামনে অগ্রসর হয় বাঁধ নির্মাণ কাজ।

বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

স্থানীরা জানান, গত ৪ দিন বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও আজ পঞ্চমদিনে সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের প্রচেষ্টায় তারা পুনরায় রিং বাঁধ দিয়ে কপোতাক্ষের নোনা পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছে। তবে শুধু এবার নয়, প্রতি দুর্যোগের পর এভাবেই ভাঙা বাঁধ মেরামতে স্থানীয় মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হয় বলে জানালেন তারা।

এর আগে গত ১৭ জুলাই ভোরে চরামুখার এই বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটারের মতো ধ্বসে যায়। সেসময় ভাঙা স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়। এর পর ১৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে উচ্চ জোয়ারে ওই রিং বাঁধটি পুনরায় ভেঙে যায়। সেই থেকে টানা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছে এলাকার বাসিন্দারা। গত (১৬ আগস্ট) মঙ্গলবার এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁধ নির্মাণ শেষে প্রবল জোয়ারে সেটি ভেঙে আবারো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এই ভাঙনে কপোতাক্ষের নোনা পানিতে ডুবে যায় ১০টির বেশি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।

স্থানীয় লোকজন জানান, ইউনিয়নটির চরামুখা, হলুদবুনিয়া, মেদেরচর, বীণাপানি ও দক্ষিণ বেদকাশি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমির চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ধসে গেছে। এতে ওইসব গ্রামে যাতায়াতের পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে আসবাব ও ধান-চাল নষ্ট হয়েছে।

কৃষকদের আমন মৌসুমের জন্য প্রস্তুতকৃত বীজতলা, বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আবার বাধ্য হয়ে পরিবার পরিজনদের নিয়ে বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ কেউ আবার উঠেছে সাইক্লোন শেল্টারে।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের হলুদবুনিয়া এলাকা থেকে বাঁধ মেরামতে আসা গোপাল সরকার বলেন, ‘এক দিন আয় না করলে তাদের সংসার চলে না, তবুও বাঁচার তাগিদে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা না করলে এ বাঁধ বাঁধতে অনেক দেরি হয়ে যেতো। তখন এলাকায় আর বাস করবার মতো পরিস্থিতি থাকবে না।’

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা স্থানীয়রা জানায়, নিজেদের ঘর বাড়ি রক্ষায় বাঁধ সংস্কারের বিকল্প নেই, তাই সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে এসেছেন তারা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টানা কয়েকদিন কাজ করার পরে আজ রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় খুশি সবাই।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, একমাস আগে নির্মাণ করা বাঁধ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে পুনরায় ভেঙেছিল। টানা ৫ দিন স্বেচ্ছাশ্রমে ঘাম ঝরিয়ে কয়রার সাধারণ মানুষ আবারও বাঁধটি আটকাতে পেরেছে। এবার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রতিনিয়ত সংষ্কার কাজ অব্যাহত রাখতে হবে কর্তৃপ‌ক্ষের কা‌ছে এমন আহবান জানান তি‌নি। বেড়িবাঁধ সংষ্কার না করে যত উন্নয়নই করা হোক না কেন তা ভেসে যাবে পানির সাথে, উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন শুরু হওয়া উচিত দুর্বল বেড়িবাঁধ সংষ্কারের মাধ্যমে। কয়রায় দীর্ঘদিন পরে মজবুত বাঁধের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। তবে এটা হবার কথা ছিল আরও আগে, যাইহোক দেরিতে হলেও পেয়েছি। এখন দ্রæত বাস্তবায়ন হোক এটাই চাই।

বারবার চরামুখা এলাকার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতিকেই দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাদের দাবি, এক মাস আগে রিং বাঁধ দেওয়া হলেও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মজবুত করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ। এ কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

৮৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares