শনিবার- ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১লা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আত্মহননেই পরিসমাপ্তি হলো অসম প্রেম ও ভাইরাল বিয়ের

আত্মহননেই পরিসমাপ্তি হলো অসম প্রেম ও ভাইরাল বিয়ের

ইসাহাক আলী, নাটোর, ১৪ আগস্ট- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় থেকে প্রণয় অতঃপর বিয়ে। আর সেই বিয়েও ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিয়ের পর সংসারের স্থায়িত্ব আর ধরা দিলোনা সুখের বাসর হয়ে তাদের জীবনে। বছর না ঘুরতেই আত্মহননে পরিসমাপ্তি হলো একটি অসম প্রেমের। ৪৭ বছরের কলেজ শিক্ষিকার জীবনের অবসান ঘটলেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে জনমনে। আর সেই প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে ২২ বছরের মামুন হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে রাত আড়াইটার দিকে মামুনকে শহরের স্টেশন এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শি জানিয়েছে।

গত রবিবার ভোররাতে নাটোর শহরের বলারীপাড়ার ভাড়া বাসার চার তলায় সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না ঁেপচিয়ে নাহার আত্মহত্যা করেন বলে মামুন দাবি করেন। তবে হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভবনের অন্য বাসিন্দারা স্বামী মামুনকে আটক করে রাখলে পুলিশে তাকেও আটক করেছে। মামুন-নাহার দম্পতি নাটোর শহরের বলারীপাড়ার হাজী নান্নু মোল্লা ম্যানশনের চারতলায় ভাড়া থাকতেন।

ওই ভবনের সিকিউরিটি গার্ড নিজাম উদ্দিন জানান, মামুন ও নাহার গত রাত ১১টার দিকে বাইরে থেকে বাসায় প্রবেশ করে। পরে রাত দুইটার দিকে মামুন গেটে নক করে একটু প্রয়োজনের কথা বলে বাইরে চলে যায়। রাতে সে আর বাসায় ফেরেনি। আজ ভোর ৬টার দিকে মামুন বাসায় প্রবেশ করে। এর কয়েক মিনিট পরেই নাইট গার্ডকে সে ডাকতে ডাকতে নিচে আসে। পরে নাইট গার্ড গিয়ে নাহারের দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখে। পরে মামুন ফ্যান থেকে নাহারের মরদেহ নামায়। বিষয়টি নৈশ প্রহরী ভবনের মালিককে জানালে মালিক ওই ভবনে ভাড়া থাকা একজন বিচারককে জানালে তিনি পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

ভবনের বাসিন্দা ও এলাকাবাসী জানান, মামুন অন্যদের জানান স্ত্রী খুবজিপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার শেষ রাতে আত্মহত্যা করেছেন। লোকজন তার বাসায় গিয়ে খায়রুন নাহারের লাশ মেঝেতে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা মামুন বাসার মধ্যে আটকে পুলিশে খবর দেন। সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার মো. খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তার স্বামী মামুন হোসেন একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামেরর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এর আগে ছয় মাসের প্রেমের পর স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননী খায়রুন নাহার গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কাজী অফিসে গিয়ে দুজন গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের ৬ মাস পর গত জুলাই মাসে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে বেশ আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।

নাটোর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাছিম আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, বিষয়টি তারা তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত ও লাশের ময়নাতদন্ত হলে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এ ঘটনার পর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, পিবিআই এর জেলা পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনসহ পুলিশ ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মেয়ের চাচাতো ভাই সাব্বির উদ্দিন জানান, তাদের ফোনে বলা হয় তার বোন আত্মহত্যা করেছে খবর দেয় মামুন। খবর পেয়ে তারা এসে তার বোনের মরদেহ মেঝেতে শোয়া অবস্থায় পেয়েছেন তার গলায় একাধিক দাগ আগে আছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি তার। এর বিচার চান তিনি।

তবে অভিমানের কারণে চাচাতো ভাই সাব্বির ও সাব্বিরের স্ত্রী নূর জাহান ঘটনাস্থলে আসেন। নূর জাহান বলেন, এই বিয়েকে স্বীকৃতি দেননি নাহারের পরিবার ও সন্তানরা।

এদিকে বিয়ের পর থেকেই আলোচনা সমালোচনার জন্মদেয় অসম এই বিয়ে ও প্রেমের। এছাড়া পারিবারিক স্বীকৃতি না পেয়ে সন্তান ও পরিবার থেকে দূরে থাকায় মানসিক চাপে ছিলেন নাহার। এছাড়া মামুনও নেশায় আসক্ত ছিলেন অনেকেই এই প্রতিবেদককে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শি গতরাত আড়াইটার দিকেও শহরের স্টেশন এলাকায় ঘুরতে দেখেছেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন , মামুন ওই এলাকায় গিয়ে মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের সাথে ঘোরাফেরা করেন। গতরাতেও সে মাদক সেবন করতেই স্টেশন এলাকায় যান বলে স্থানীয়রা জানান।

আর সেসব কারণেই রাত ১১টায় বাসায় ফিরলেও পরে দুইটার দিকে নৈশ প্রহরীকে ঔষধ কেনার কথা বলে বাইরে যায়। এই অভিযানেই নাহার আত্মহত্যা করে বলে প্রতিবেশি ও কাছের লোকজনের ধারণা। মামুন ঘুরে এসে ভোরে বাসায় ঢুকলেও তখন নাহারের মরদেহ ঝুলছে ফ্যানের সাথে। তড়িঘড়ি করে সেই মরদেহ নামায় মামুন। গলায় পেচানো ওড়না কাটার কোন কিছু না পেয়ে আগুনে ওড়না পুড়িয়ে মরদেহ নামায় সে।

এর আগে ঘটনার পর থেকেই নানা নেতিবাচক সমালোচনা ছিল মামুন হোসেনের বিরুদ্ধে। সেই সব সমালোচনা আরো প্রকট আকার ধারণা করলো নাহারের এই আত্মহননের মাধ্যমে। মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না এমন ডায়ালগে পরিচিতি পাওয়া মামুনের গন্তব্যের ভবিষ্যত কি তা জানা যাবে নাহারের ময়না তদন্ত শেষে।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, এই মরদেহ নামানোর আদালতের মধ্যেও কোন সুরভিসন্ধি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।

৪২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares