বুধবার- ২৬শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১২ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তন

ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তন

নাটোর প্রতিনিধি  :: নাটোরে ভোটের আগে রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই সাথে কোন ধরনের যাচাই-বাছাই না করে সাংবাদিক পর্যবেক্ষণ কার্ড দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের ঠিক আগের রাতে এমন পোলিং অফিসার এবং সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার পরিবর্তনের ঘটনায় জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে সচেতন মহলের মধ্যে। এদিকে
যাকে-তাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কার্ড প্রদানের করায় নির্বাচনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন জেলার মূলধারার সাংবাদিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাচনে কমপক্ষে ৪জন পোলিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়েছে অন্যদিকে গুরুদাসপুর উপজেলায় ১জন পোলিং অফিসার এবং একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার পরিবর্তন হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন খোদ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে সোমবার(২৮মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে দেখা যায় ১০-১৫জন লোক সেখানে ভিড় জমিয়েছেন। জানতে চাইলেই বেরিয়ে আসে পোলিং অফিসার পরিবর্তনের খবর। উপস্থিত কয়েকজন জানান, তাদের চিঠি তৈরি হয়েছে, সাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছেন। চিঠি পেলেই কেন্দ্রে যাবেন। সাংবাদিক পরিচয়ে এতো রাতে চিঠি নিতে আসার কারন জানতে চাইলে একে একে সবাই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এদিকে, ফেসবুক পেজ ও অনিবন্ধিত অনলাইন ও পত্রিকার পরিচয় দিয়ে  সাংবাদিক নন এমন বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ পেয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কার্ড। বিষয়টি নজরে এলে উপজেলা সহ জেলার মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান।
বৈশাখী টেলিভিশনের নাটোর প্রতিনিধি ইসাহাক আলী বলেন, অপসংবাদিকরা যদি এভাবে নির্বাচনের পর্যবেক্ষণকার্ড পেয়ে যায় তাহলে নির্বাচনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। যেহেতু তাদের পেশাদারিত্ব নেই সেখানে যেকোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ কার্ডের জন্য আবেদন যাচাই-বাছাই এর ক্ষেত্রে তাদের উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন এই সাংবাদিক।
বড়াইগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, বেশকিছু পোলিং অফিসার ফোন বন্ধ রেখেছেন। তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সেকারণে তাদের পরিবর্তন করে নতুন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই চারজনের নাম পরিবর্তন করে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন কিছু নাম ওভারলেপিং হয়েছিলো সেসব পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। কতজন এমন হয়েছে সেটি নিশ্চিত করতে পারেন নি এই কর্মকর্তা।
বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আনারস মার্কা প্রতীকের প্রার্থী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তন কিছুটা সন্দেহের বিষয়। তবে আমরা বিশ্বাস রাখছি সুষ্ঠু এবং দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন হবে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া মার্কা প্রতীকের প্রার্থী মো.আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কেন ভোটের আগের রাতে পোলিং অফিসার পরিবর্তন হলো সেটা নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আশা রাখি সুষ্ঠু ভোট হবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সালমা আক্তার বলেন, একজন নারী পোলিং অফিসারের ৮মাস বয়সী শিশু অসুস্থ এবং একজন সহকারী প্রিসাংডিং অফিসারের নাম দুইবার তালিকায় ওঠায় আরেকজন নতুন সহকারী প্রিসাংডিং অফিসার নেয়া হয়েছে। তবে সেটা মঙ্গলবার দিনের আলোতে সকলের সামনেই।
নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফ হোসেন বলেন, সব নির্বাচনেই এভাবে জরুরি কিছু পোলিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাংডিং অফিসার বা প্রিসাংডিং অফিসার পরিবর্তন করা হয়। এটা নতুন কিছু নয় আর এতে তেমন কোন সমস্যাও নাই। পর্যবেক্ষণ কার্ডের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আবেদন করেছে তারা সকলেই উপজেলার সাংবাদিক এবং সকলের পরিচিত হওয়ার কথা। আমরা সবাইকে বিশ্বাস করেছি। যদিও কার্ড প্রাপ্ত কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে আমাকে জানালে  আমি যাচাই-বাছাই করে ব্যাবস্থা নেব।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নাটোর জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ বলেন, পোলিং অফিসার, প্রিসাংডিং অফিসার এবং সহকারী প্রিসাংডিং অফিসার যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা অবশ্যই যাচাই-বাছাই হয়েই নিয়োগ পেয়েছেন। ভোটের আগের রাতে এভাবে পরিবর্তন জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করে। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই নেয়া উচিত নয়। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা প্রয়োজন। এমনও যদি হয় যে কোন পোলিং অফিসার আসেনি বা ফোন বন্ধ সেটা দায়িত্ব অবহেলার সামিল। নির্বাচনী দায়িত্ব কেউ যদি অবহেলা করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি কমিশনের কাছে। সেই সাথে সাংবাদিক নন এমন যারা নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ কার্ড পেয়েছেন , তারা নির্বাচনকে ম্যানুপুলেট করতে পারেন, তাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনো সময় রয়েছে। #
১৮ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS