শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নদী ভাঙ্গন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বসতবাড়ি নির্মানে পটুয়াখালীতে কমছে ফসলের জমি

নদী ভাঙ্গন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বসতবাড়ি নির্মানে পটুয়াখালীতে কমছে ফসলের জমি

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় প্রতিবছর তেতুঁলিয়া ও বুড়াগৌঁরাঙ্গ নদীর তীর্ব ভাঙ্গনে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বসতবাড়ি নির্মাণের ফলে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। নদীর ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও বসতবাড়ি নির্মাণে বিধি বিধান না থাকায় প্রতিবছর শত শত একর জমি নদী গর্ভে বিলীন  হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার চর-বোরহান, চর-শাহজালাল ও চর হাদিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অস্বাভাবিক এবং অব্যাহত নদী ভাঙ্গন ও বসতবাড়ি নির্মাণের ফলে ফসলি জমি দিনদিন কমে যাওয়ারই প্রধান কারন হয়ে দাড়িয়েছে। জনগুরুত্বপুর্ন এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে  অদুরভবিষৎ খাদ্য ও বাসস্থানের চরম সংকটে পড়বে উপকূলীয় দশমিনাবাসী। উপজেলার প্রধান তিন চরে প্রায় ২১ হাজার ৫শত বসতি রয়েছে।এসব চরে শিক্ষা ও অসচেতনতার কারনে জনসংখ্যা হৃ-হু করে বেড়েই চলেছে । চর হাদির বারেক গাজীর স্ত্রী শাহিনুরের ৬ সন্তান, হেলেনার ৫ সন্তান ও চর শাহজালালের হাসিনার ৪ সন্তান।এসব প্রতি পরিবারে গড় লোকসংখ্যা ৬/৭জন। জনসংখ্যা ও পরিবারের বৃদ্ধি কারনে প্রতিদিন ফসলী জমি কেটে তৈরি হচ্ছে নতুন বসতবাড়ি। উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস স‚ত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের জরিপে দশমিনা উপজেলায় ১লাখ ২৩ হাজার ৩শ’ ৮৮জন মানুষ গননা করা হয়। বসত বাড়িঘরের সংখ্যা ছিল ২৮হাজার ৪শ’ ৯০টি। দশমিনা উপজেলার স্বাস্থ্য ইপিআর জরিপ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০সালের জরিপে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট লোকসংখ্যা ১লাখ ৫৩হাজার ১শ’ ২২জন। বসত বাড়ি সংখ্যা ৪৯হাজার। ফলে ৯বছরে উপজেলায় মোট লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৯হাজার ৭শত ৩৪জন। নতুন বসত বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ২১হাজার ৫শ’ ১০টি’তে। উপজেলার বুড়াঁগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদীর র্তীরবর্তী এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরে নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে উপজেলার বীজ বর্ধন খামার, বাঁশবাড়িয়ার ঢনঢনিয়া, হাজির হাট, চরহাদি ও চরবোরহানসহ মোট ১ হাজার ৭শ’ ৯৪ একর জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দেশের সর্ববৃহত বীজ বর্ধন খামারের আওতায় ১ হাজার ৪৪ একর জমি অধিগ্রহন করা হলেও এবছর চাষাবাদ করা হয় সাড়ে ৩শ’ একর জমি। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৬শ’ ৯৪ একর জমি। নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে ঢনঢনিয়া ও হাজির হাট এলাকার ৫শ’ একর ফসলী জমি, চরহাদির ৪শ’ একর এবং চরবোরহানে ২শ’ একর জমি।

এদিকে, উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের জরিপে আবাদযোগ্য জমির পরিমান ছিল ১৮হাজার ৮শ’ ১০ হেক্টর। এক ফসলি জমি ১হাজার ৬ হেক্টর, দু’ ফসলি ১৪ হাজার ৩শ’ ৪১হেক্টর, তিন ফসলি ৩ হাজার ৪শ’ হেক্টর। দশমিনায় মোট খাদ্য উৎপাদন হয় ৫৮হাজার ৩শ’ ৩৪ মেট্রিক টন। ওই সালের লোকসংখ্যা অনুসারে দশমিনায় খাদ্যের চাহিদা ৭৬হাজার ৫শ’ ৬১মেট্রিক টন। খাদ্যের ঘাড়তি থাকে ১৮হাজার ২শ’ ২৭মেট্রিক টন। অথচ ২০১৮ সালে লোকসংখ্যা অনুপাতে ৩৪হাজার ২শত ৭৯ মেট্রিক টন খাদ্য অতিরিক্ত থাকত। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে খাদ্যের ঘাড়তি দেখা দিচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাফর আহম্মেদ জানান, নতুন বাড়িঘর নির্মাানের বিষয় বিধি বিধান তৈরি করার জন্য বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং প্রতি বছর ভূমি জরিপ করা হলে প্রকৃত জমির সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

৪৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares