বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগমারার দুই পৌরসভায় নেই ভাগাড়’ ভাসছে ময়লা-আবর্জনা নদীতে

নাজিম হাসান,রাজশাহী থেকে: নামেই প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে একই বেহাল দশায়। তাহেরপুর ও ভবানীগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন ভাগাড় নেই। যত্রতত্র যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। সর্বশেষ এসব ময়লা আবর্জনার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে নদীতে। আর এভাবেই সদ্য খননকৃত বারনই ও ফকিরানী নদী দুষিত ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এই দুটি পৌরএলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখানকার ঘিঞ্জি দূর্গন্ধময় নোংরা পরিবেশের কথা। বাসিন্দারা জানান, বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাগমারার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বারনই ও ফকিরানী নদী খনন করা হয়েছে। ফকিরানী নদীর ১৬ কিঃমিঃ ও বারনই নদীর ১৪ কিঃমিঃ মিলে মোট ৩০ কিঃমিঃ নদী খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে সরকারের ব্যয় হয় পনের কোটি টাকা। নদী দুটি খনন করার ফলে এলাকাবাসী ব্যাপক উপকৃত হয়েছেন। এখানে বন্যার ব্যাপকতায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। ফসল সহ কৃষকের ঘরবাড়ি রক্ষা পেয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন নদী খননের এক বছর না পেরোতেই যে ভাবে দুই পৌরসভার শত শত টন ময়লা আবর্জনা নদী গর্ভে ফেলা হচ্ছে তাতে এই দুই নদী অচিরেই ভরাট দূষিত হয়ে যাবে। এছাড়া এসব ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এই পানি ফসলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত দুই দিন তাহেরপুর পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন জায়গা নেই। রাস্তা ঘাট সহ অন্যান্য অবকাঠামোয় প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভা মোটামুটি উন্নত হলেও এখানে নেই কোন ভাগাড়। তাহেরপুর পৌর হাটের কসাইখানা, মুরগিহাটা ও তরকারি হাটা সহ গোটা হাটের মহল্লাবাসীদের প্রতিদিনের ময়লা আবর্জনা ফেলা নদীতে। হাটের ময়লাগুলো পেয়াজটাহা সংলগ্ন বারনই নদীতে ফেলে দেয় হাটের ব্যবসায়ীরা। তবে এই কাজে তারা সুইপার নিয়োগ করেছে। কিন্তু ময়লা যাচ্ছে সব নদীতে। এছাড়া হাটের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে আজবর্জনা ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই হাটেই রয়েছে বেশ কিছু ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্যগুলোও ফেলা হচ্ছে ওই নদীতে। হাটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাজশাহী ঢাকার মত ময়লা ফেলার ব্যবস্থা চান। কিন্তু পৌরসভা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহেরপুরে পৗরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদির পৌরসভার ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলার কথা স্বীকার করে জানান, এভাবে নদী দুষন হোক ও ভরাট হোক এটা আমরা চাই না। পৌরসভায় একটি আধুনিক ভাগাড় নির্মানের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা প্রকল্প গ্রহন করেছি। ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। আশা করি আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। অপরদিকে ময়লা আবর্জনা ফেলা নিয়ে একই উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার অবস্থা আরো করুন। এটিও প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। শুরু থেকেই কোন ভাগাড় নেই। হাটের ময়লা ও মহল্লা বাসীর ময়লা সবকিছুই ফেলা হয় পাশ্ববার্তী ফকিরানী নদীতে। এছাড়া কসাইখানা, হিন্দুপাড়া ও মুরগী হাটার শত শত মণ ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। ভবানীগঞ্জ হাটের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, গোটা পৌরসভাই এখানে ময়লা ফেলার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। সবাই যে যার মত নিজেদের ভাগ্যগড়া রাজনীতি ও ব্যবসা নিয়ে মহা ব্যস্ত। অথচ ময়লা আবর্জার মত একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। প্রতিদিন শতশত মণ ময়লা আবর্জনা এখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লার অধিকাংশই চলে যাচ্ছে ফকিরানী নদীতে। পাড়া মহল্লায় যত্রতত্র ময়লা ফেলার ফলে দূগন্ধময় পরিবেশে মশা মাছির উপদ্রপ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সরকারের কোটি কোটি কোটি টাকা( যা জনগনের ট্যাক্্েরর টাকা) গচ্চা যাচ্ছে নদী ভরাট দূষনের মাধ্যমে। এ বিষয়ে ভবনাীগঞ্জ পৌরসভার সহকারি প্রক্যেশলী লিটন মিয়া পৌরসভার ময়লা আবর্জনাগুলো নদীতে ফেলার কথা স্বীকার করে জানান, আমরা পৌর ভাগাড়ের জন্য জমি ক্রয় করেছি। সেখানে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। অচিরেই এর সমাধান করে দ্রুত ভাগাড় নির্মানের কাজ শুরু করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,এফ,এম আবু সুফিয়ান জানান, এভাবে ময়লা আবর্জনা গুলো নদীতে ফেলা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি দুই পৌরসভাকে আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তারা অচিরেই এই সমস্যার সমাধান না করলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হবে।

৪৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares