শনিবার- ১লা জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভোলায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মাছ-মাংস-আলু-ডিম-পেঁয়াজ,সবজি

ভোলায় ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মাছ-মাংস-আলু-ডিম-পেঁয়াজ,সবজি

মিজানুর রহমান-ভোলাঃ ভোলার বাজারে সিন্ডিকেটের কারনে সবজি, মাছ, মাংস, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাউল,ডাল, চিনি, লবনসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমানে পণ্য থাকলেও দাম কিছুতেই কমছেনা। প্রতিটি পণ্য ব্যবসায়ীদের সমিতি আর সিন্ডিকেটের রুটেশনের কারনে নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রতিদিন দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানছেনা। মাঝে মাছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনের কর্মকর্তারা বাজার পরিদর্শনে আসলেও মূল্য তালিকা খুজে পাওয়া যায়না।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) ভোলা সদরের অর্ধশত বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এখনো কোনো পণ্যের দাম কমেনি। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে আরও বেড়েছে। এর পিছনে কারন রয়েছে আড়তদারদের রুটেশন ও সিন্ডিকেট। যার ফলে সব কিছুই রয়েছে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। প্রতিদিন বাজার তদারকী না থাকায় চাহিদা মত কিছুই কিনতে পারছেননা ভোক্তারা। রুটেশন করে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। ভোলার বাজারে শতাধীক কাচা বাজারের আড়তদার রুটেশন করে প্রতিদিন ৪ জন করে আড়তদার প্রতিদিন-সবজি, মাছ, মাংস, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, চিনি, লবনসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে আমদানি করে তাদের ইচ্ছে মত দামে বিক্রি করে। তাই তাদের কাছে অসহায় ভোক্তারা, মধ্য বিত্ত, নিন্ম মধ্য বিত্ত ও নিন্ম আয়ের ভোক্তারা তাদের সংসারের চাহিদামত পণ্য কিনতে হিমশিস খাচ্ছে। রুটেশন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খুচড়া বিক্রেতারা বেশী দামে পণ্য কিনে নিয়ে বেশী দামে বিক্রি করছেন। সিন্ডিকেট আড়তদারদের মধ্যে রয়েছেন-আবুল হোসেন, শাহে আলম, এমরান, শাজাহান, কামরুল, সিরাজ, মাহে আলম, মোস্তফা, মনির, সুলতান আহন্মদ, ওহাব মিয়া, মিলন সাজি, মনির(২), সিরাজ (মহলদার)। ডিম ব্যবসায়ী রয়েছেন ১০ জনের অধিক। তাদের হাতে জিন্মি রয়েছেন ভোলা বাসি।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে মিলছে না পেঁপে ছাড়া অন্য কোনো সবজি। অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে। অন্যদিকে, প্রতি কেজি চাষের মাছের দাম এখন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। আর দেশী মাছগুলোর দাম যেন আকাশছোঁয়া, বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় কেজি প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তিতে। ডিমের বাজারে বেশ কয়েক মাস হলো চলছে অস্থিরতা। এখন প্রতি হালি ডিমের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া আরেক পণ্য পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। ফলে পণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ মানুষ অস্বাভাবিক বাজারদরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ভোক্তা ওমর ফারুক বলেন, দামের চোটে আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। আগে মাছ-মাংস না খেতে পারলে শাক-সবজি খেয়ে থাকতাম। এখন সেটাও সামর্থের বাইরে চলে গেছে। এভাবে চললে মধ্য বিত্ত, নিন্ম মধ্য বিত্ত ও গরিব মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, রুটেশন ব্যবসায়ীদের কারনে সরবরাহ বিঘœ হওয়ায় দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে আলু-৬০, গোল বেগুন-১২০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন-৮০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুরমুখি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা। আর ঢেঁড়স, পটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, রেখা-১০০-১২০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। কম দামের মধ্যে মুলার কেজি ৮০-১০০ টাকা, আর পেঁপে ৪০-৫০ টাকা। বয়লার মুরগি-২২০ থেকে ২৫০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০০ টাকার নিচে কোন লাউ পাওয়া যায়না। লাল মাকের কেজি-৫০০ টাকা। পাতা কপি-২০০ টাকা। ধনেপাতা কেজি-৪০০টাকা। কম আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনেন পাঙ্গাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ, তাও ২৫০ টাকার নিচে দাম নাই। এছাড়া ছোট রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ক্রেতা রমেশ বলেন, এমনিতেই আয় নেই অনেক কষ্টে চলতে হচ্ছে। বাড়তি দামের ফলে নূন্যতম শাক-সবজি কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মাছের বাজারে তো ৫০০ টাকার নিচে মাছ পাওয়াই স্বপ্নের ব্যাপার। শতাধীক আড়তে চাউল-প্রকার ভেদে ৪ থেকে ৬, আটা-১০, ডাল-৫, সাবান-১০, তেল-১৮ বেড়েছে। সবার আয় তো সমান নয়। এভাবে চলতে থাকলে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পরবে। নিত্যপন্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিরা জানান, মুল মোকামে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা চালায়। আমরা বেশী দামে ক্রয় করে এনে বেশী দামে বিক্রি করি। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি। তারা সবাই অফিসের কাজে বাহিরে রয়েছেন বলে অফিস সুত্রে জানা গেছে।

৪৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares