মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঈদের আনন্দ কেমন ? ভোলায় ৭৯ হাজার জেলে চাল পাননি

ঈদের আনন্দ কেমন ? ভোলায় ৭৯ হাজার জেলে চাল পাননি

ভোলা প্রতিনিধিঃ ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ভোলায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা দুটি অভয়াশ্রমে ১ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা, বিক্রি, মৌজুদ, পরিবহন নিষেধ। সরকারী হিসাবে ভোলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৫ জন। বেসরকারী ভাবে এর সংখ্যা দ্বিগুন। নিবন্ধনের মধ্যে ৭৯ হাজার জেলে সরকারি সহায়তার চাল পাবেন না। তাদের ঘরে ঈদের আনন্দ কেমন ? তাঁরা বলেন, মাছ ধরাও নিষেধ, সরকারি সাহায্যও পাচ্ছেন না। তাঁরা কীভাবে সংসার চালাবেন? আর যারা সরকারী সহযোগীতা পান তারা আবার নেতা ও কর্মকর্তাদের সহায়তায় রোটেশন করে মাছও শিকার করেন।
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভোলার চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ইলিশের অভয়াশ্রম। ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ দুটি অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ। এ দুই মাস মাছ বহন,মৌজুত ও ক্রয়-বিক্রয়ও নিষেধ। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকার করলে কারাদন্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা সফল করার লক্ষ্যে র্দূবল প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, প্রচারপত্র বিতরণসহ মাছঘাটগুলোয় লোক দেখানো সচেতনতা সভা করা হচ্ছে। তার পরেও নেতা, কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী জেলেরা মাছ শিকারে থেমে নাই। সাধারন জেলেরা সরকারের সহযোগীতা ও মাছ শিকার থেকেও বঞ্চিত। তারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন।
মৎস্য কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ২২ দিনের প্রজনন মৌসুমে সাড়ে ৫৩ শতাংশ মা-ইলিশ নদীতে ডিম ছেড়েছে। সেই ডিম থেকে ফোটা ইলিশ জাটকা চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ১২-১৬ সেন্টিমিটার লম্বা হবে। এই ছোট ইলিশ যেন নিরাপদে সাগরে পৌঁছাতে এবং বড় হয়ে নদীতে আবার ডিম ছাড়তে আসতে পারে, সে কারণে মেঘনা, তেঁতুলিয়ায় মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন, এ নিষেধাজ্ঞার জন্য ভোলার সাত উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সরকারি নিবন্ধন আছে, ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৫ জনের। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ৮৯ হাজার ৬০০ জনকে ৪ মাসে (ফেব্রæয়ারী-মে) ১২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ হিসাবে প্রায় ৭৯ হাজার জেলে কোনো সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। এ জেলেরা কি করবেন, এদের পরিবারের মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীদের পেটে পাথর দেয়া ছাড়া উপায় আছে কি ? এদেরকে বাহিরে রেখে নিষেধাজ্ঞা কতটুকু সফল হবে।
সদর শিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে ২১১২ জন, চাউল দেয়ার কথা ৮০ কেজি করে, কিন্তু বরাদ্ধ পাওয়া গেছে ১৪৩০ জনের। এটাই সবাইকে ভাগ করে দিতে হবে।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম নাছির উদ্দিন বলেন, তাঁর ইউনিয়নে সবাই হতদরিদ্র জেলে। নিবন্ধিত জেলে আছেন ১ হাজার ৭০০ জন। চাল বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৯৭৮ জনের নামে। এখন তিনি কী করতে পারেন? যারা চাল পাবেননা তারা কি মাছ শিকার বন্ধ রাখবেন। পেটে ক্ষুধা লাগলেই জাল নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করবেন, কারো প্রতিরোধ মানবেননা।
লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের জেলে আবদুল হক ও মোঃ হোসেন বলেন, তাঁদের কার্ড থাকার পরেও চাল দেওয়া হয়নি।
ভোলার বিভিন্ন মাছঘাটের সহ¯্রাধীক জেলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে মাছ না ধরতে গেলে, তাঁদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। যাঁদের বিকল্প কর্মস্থান আছে, তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে দুই বেলা ভাত খেতে পারেন। প্রতিবছর সরকার যে বরাদ্দ দেয়, তা জেলেদের কোনো কাজে আসে না। কারণ, ইউপি সদস্যরা জেলে ছাড়াও অন্য পেশার দলীয় ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও তাঁদের স্বজনদের চাল দিচ্ছে। তাঁরা এ অবস্থার অবসান চান। এ ছাড়া অনেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালায়। নিষেধাজ্ঞার এ সময়টা কিস্তি আদায় শিথিল করা দরকার।
জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির সভাপতি মোঃনুরুল ইসলাম বলেন, জেলের ছেলে জেলে হচ্ছে। তাঁরা নৌকা চালানো, মাছ ধরা ছাড়া কিছু করতে পারে না। এ কারণে দিনে দিনে জেলের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে জেলে সন্তানদের প্রনোদনা দিয়ে বিনা মূল্যে পড়ার সুযোগ দেয়ার দাবী জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কি কারনে সব জেলে চাল পাচ্ছেননা তা আমার জানা নাই, আর জানলেও বলতে পারবোনা, আপনারা বুঝে নিতে হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় ভোলার জেলেরাই বেশি বেকার হয়। এখানে কোনো কলকারখানা না থাকায়, তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থান নেই।

৩৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares