বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আশুগঞ্জের প্রশাসা ও সাংবাদিক  হুমকির মুখে ফেক্টর মহিলা আওয়ামিলিগের নেত্রি আনার কলির

আশুগঞ্জের প্রশাসা ও সাংবাদিক  হুমকির মুখে ফেক্টর মহিলা আওয়ামিলিগের নেত্রি আনার কলির

আশুগঞ্জ থেকে মোঃ ফারুক মিয়া ; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন মহিলা আওয়ামিলিগের নেত্রি আনার কলি। রেলওয়ে সস্ম্রতি তার দখল বাণিজ্যের তথ্য অনুসন্ধ্যান করতে গিয়ে ওই নেত্রির হুমকি-ধামকিসহ তোপের মুখে পড়েছেন উপজেলা সহকারি (ভূমি) ও গনমাধ্যম কর্মিরা। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মিরা ওই নেত্রির বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা মহিলা আওয়ামিলিগের অর্থ সম্পাদক ও আশুগঞ্জের প্রভাবশালি নেত্রি আনার কলি স্থানীয় রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রেলওয়ের ১১৮৮ বর্গফুট জায়গা লিজ নেন মৎস্য, কৃষি ও নার্সারি করার শর্তে ।ওই জায়গা লিজ নিয়ে আনার কলি লিজের শর্ত ভঙ্গ করে সেখানে মার্কেট করার জন্য জলাশয় ভরাট করতে থাকেন। খবর পেয়ে গত ৩০ এপ্রিল আশুগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ মাটি ভরাটে বাঁধা দেন। এ সময় সেখানে থাকা আনার কলি ও তার সাথে থাকা অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জন সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করেন।

এ ঘটনায় সহকারি কমিশনারে পক্ষে নাজির মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে গত ৩০ এপ্রিল আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। জিডি নং-২৭৩৬।

এদিকে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আনার কলির জলাশয় ভরাট করে অবৈধভাবে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক লেখালেখি শুরু হলে সময় টেলিভিশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যুরো প্রধান উজ্জ্বল চক্রবর্তী তার ক্যামেরাপারসন মোঃ জুয়েলুর রহমানকে সাথে নিয়ে গত বুধবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে আশুগঞ্জে ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকলে খবর পেয়ে মহিলা মহিলা আওয়ামিলিগের নেত্রি আনার কলি ঘটনাস্থলে এসে চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘আপনারা ভুয়া সাংবাদিক, আমার কাছ থেকে টাকা নিতে এসেছেন।’ এ সময় আনার কলি তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং নারী নির্যাতনের মামলা করার হুমকি দেন। এ সময় আনার কলি মোবাইলে সাংবাদিক উজ্জল ও তার ক্যামেরাপারসন জুয়েলুর রহমানের ভিডিও ধারণ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ারও হুমকি দেন। এ সময় আনার কলি সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

এঘটনায় সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তী বুধবার দুপুরে আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।জিডি নং-১০৪৬।

স্থানীয়রা জানান, আনার কলি রেলওয়ে থেকে এগারশ আটাশি বর্গফুট জায়গা লিজ নিয়ে জলাশয় ভরাট করে কয়েকগুণ বেশি জায়গা জুড়ে মার্কেটের কাঠামো নির্মাণ করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, নূর উল্লাহ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ওই নেত্রী লীজ নেয়া জায়গায় অবৈধভাবে দোকান নির্মান করেছেন। অথচ এলাকায় কোন সিএনজিচালিত অটোরিকসা স্ট্যান্ড করার মতো কোন জায়গা নেই। প্রতিদিন এখানে যানজট লেগে থাকে। ওই নেত্রীকে কেউ কিছু বলতে পারে না। যে তার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাকে চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতন মামলা দেয়ার ভয় দেখায়।

মোঃ সালমান নামে আরেক বাসিন্দা মহিলা আওয়ামিলিগের নেত্রী আনারকলি রেলওয়ের কাছ থেকে এই জায়গা মাছ চাষ করার কথা বলে লিজ নিয়েছেন বলে শুনেছি। মাছ চাষ করার কথা বলে ওই জায়গা লীজ এনে তিনি জলাশয় ভরাট করে দোকানপাট নির্মান করেছেন। তার ভয়ে কেউ তাকে কিছু বলতে সাহস পায়না।

মার্কেটে দোকান ভাড়া নেয়া মোঃ আল-আমিন বলেন, আমি আনার কলির কাছ থেকে মাসিক ৪ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। সিকিউরিটি বাবদ দিয়েছি ৬০ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আনার কলি আমাদের সাথে আপত্তিজনক আচরণসহ চাঁদাবাজি নারী নির্যাতন করার হুমকি দেন এবং মোবাইলে আমাদের ভিডিও ধারণ করেন অসৎ উদ্দেশ্যে ।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দু বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লীজের শর্ত ভঙ্গ করে আনার কলি অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করছে খবর পেয়ে এসিল্যান্ড বাঁধা প্রদান করলে আনার কলি তার সাথে অশোভন ও আপত্তিকর আচরণ করেন। আমরা বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এ ঘটনায় এসিল্যান্ড আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা বিষয়টি রেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবো।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী সাংবাদিকদেরকে বলেন, উপজেলা পরিষদের আসার পথে আমি এই জায়গাটি দেখেছি। বালু দিয়ে ভরাটের সময় সময় আমি স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারি জায়গাটি আনারকলি ভরাট করছেন। পরে আনার কলির সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই জায়গা তিনি রেলওয়ের কাছ থেকে লীজ এনেছেন। তবে এখানকার অটোরিক্সা চালকদের দাবি ছিল এখানে একটি সিএনজি স্ট্যান্ড করার জন্য । কিন্তু রেলওয়ের জায়গা হওয়ার কারণে আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারিনি। জলাশয় ভরাটের বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি এবং এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারে রেলওয়ের ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লীজের শর্ত ভঙ্গ করলে এবং অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৬৯১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares