শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কলমাকান্দায় ভূমি কার্যালয়ে টাকা ছাড়া মেলেনা সেবা, হয়রানির অভিযোগ

কলমাকান্দায় ভূমি কার্যালয়ে টাকা ছাড়া মেলেনা সেবা, হয়রানির অভিযোগ

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি:   নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ভূমি কার্যালয়গুলোতে ঘুষ দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে অসাধু কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে। মন খুশি করা টাকা না পেলেই সেবাগ্রহিতাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের সহায়তায় এসব অসাধু ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কোন কাজে আসছে না। বরং উল্টো হয়রানি বাড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জমির নামজারি, ডিসিআর, মিসকেসসহ জমিসংক্রান্ত কারণে স্থানীয় লোকজন উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে যান। কিন্তু সেবা নিতে আসা এসব লোকজন কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না চাইলেই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে নামজারি ও মিসকেস নিয়ে। অথচ ভোগন্তি কমাতে সরকার বর্তমানে ই-নামজারি চালু করেছে। একজন নামজারি গ্রহিতা প্রথমে অনলাইনে আবেদন করবেন। এরপর তার হার্ড কপি কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে জমা দিবেন। আবার জমি সংক্রান্ত সকল সেবার জন্য নিয়ম অনুয়ায়ী লিখিত অবেদনও জমা দিতে হয়। তারপরে শুরু হওয়ার কথা সেই ফাইলের কার্যক্রম। নিয়ম অনুযায়ী আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর ডিসিআর এর জন্য ১১০০ টাকা জমা দিলে জমির নামজারি হয়ে যাওয়ার কথা। সব মিলিয়ে সর্ব্বোচ ২৮ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কিছু দালালসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতি নামজারিতে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয় সেবাগ্রহিতাদের। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে দিনের পর দিন ভূমি কার্যালয়ে ঘুরতে হয়। আবার টাকা না দিলে শুনানীর নিদৃষ্ট সময়ের আগেই আবেদন নামুঞ্জুর করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নাজিরপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের ভূক্তভোগী রাজিয়া বেগম জানান, গাখাজুরা মৌজায় স্বামী ও তার নামে প্রায় ৫ একর জমি আছে। গত জানুয়ারি মাসে রাজিয়া নাজিরপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে জমির নামজারি করতে যান। সেখানের ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মীর মাসুদ তার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চান। পরে অবশ্য ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। কিন্তু রাজিয়া সেই টাকা জোগার করতে না পারায় এখনো নামজারি করতে পারেননি। তবে কাগজপত্র তিনি কার্যালয়ে জমা দিয়ে রেখেছেন বলে জানান।

কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র কর বলেন, গত মাসে দুইটি খারিজের জন্য সদর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় যাই। সেখানে প্রতিটি খারিজের জন্য আমার কাছে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। পরে বাইরে থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করি। ১২ জুলাই মোবাইলে এসএমএস দিয়ে জানানো হয় ২৩ জুলাই শুনানি হবে। কিন্তু শুনানির আগেই ১৬ জুলাই মোবাইলে এসএমএস দিয়ে জানানো হয় নামজারিগুলো নামঞ্জুর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০ হাজার টাকার চিন্ত না করে যদি অফিসের লোক দিয়ে নামজারিগুলো করাতাম তাহলে হয়তো নামঞ্জুর হতো না।

ডোয়ারিকোনা গ্রামের আবুল কালাম বলেন, আমার খারিজের শুনানির জন্য এসএমএসের মাধ্যমে তারিখ জানানো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমার খারিজটি নামুঞ্জুর করা হয়েছে। এরকম আমার সাথে চার বার হয়েছে। একবারও শুনানিতে অংশ নিতে পারিনি। এই ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া কোন সেবা পাওয়ার চিন্তাও করা যায় না।

খারনৈ ইউনিয়নের লক্ষীপুর মৌজার জালাল মিয়া বলেন, জমি-জমা নিয়ে আদালতে তার একটি মামলা চলছিল। এ নিয়ে তিনি উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কেশব লাল দেব আদালতে সঠিক প্রতিবেদন পাঠাবেন বলে তার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু আদালতে যে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয় সেটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। পরে তিনি ঘুষের টাকা ফেরৎ চাইলে বলে পুনরায় মামলা করতে তখন তার পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন পাঠাবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিজ্ঞ আদালতে যে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে তা যাচাই বাচাই করে যা সঠিক তাই দেওয়া হয়েছে।

নাজিরপুর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মীর মাসুদ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, নামজারি করা নিয়ে কারও সাথে তার টাকার চুক্তি হয়নি।

কলমাকান্দার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ভূমি কার্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ নিয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুনানির আগেই আবেদন নামঞ্জুর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনানির জন্য সফটওয়্যারের নির্দেশ অনুযায়ী সেবাগ্রহীতাদের কাছে মোবাইলে মেসেজ যায়। তার সঙ্গে অফিসের তারিখের অনেক সময় মিল থাকে না। তাই উভয় ক্ষেত্রে তারিখের ভিন্নতার কারণে সেবাগ্রহীতা অফিসে উপস্থিত না থাকলে এবং কাগজপত্রে ক্রুটি থাকলে তা নামঞ্জুর করে থাকি।

৭৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares