বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কলমাকান্দার ‘ চান্দুয়াইল সেতু’ নির্মাণ কাজের যথাযথ সুরক্ষা না থাকায় সড়কটি ধসে পড়ার আশঙ্কা

কলমাকান্দার ‘ চান্দুয়াইল সেতু’ নির্মাণ কাজের যথাযথ সুরক্ষা না থাকায় সড়কটি ধসে পড়ার আশঙ্কা

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কে ‘চান্দুয়াইল সেতু’ নির্মাণ কাজ শুরুর আগে যথাযথ সুরক্ষা না থাকায় যে কোনো মুহূর্তে সড়কটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

কলমাকান্দায় নির্মাণাধীন ‘চান্দুয়াইল সেতু’ সংলগ্ন সড়কের একটি বড় অংশে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ব্যাপক ফাটল দেখা দিলেও এখনো কোনো যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম । রাস্তাটি সোজা কাটা ছিল এবং রাস্তার দুই পাশে জলাশয়ের কারণে ভাঙনের বিরুদ্ধে যথাযথ সুরক্ষা ছিল না।

নেত্রকোনা এলজিইডির সুত্রে জানা গেছে,  ১২ কোটি ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৮ টাকার ব্যয়ে ‘প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছরের মার্চ মাসে সেতুটির কাজ শুরু হয় এবং কলমাকান্দায় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) দ্বারা বাস্তবায়িত ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।

এপ্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এলজিইডি কলমাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী কন্সট্রাকশন ফার্মে কোনো ভুল থাকার কথা অস্বীকার করেন। যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন প্রকৌশলী। সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে বিলম্বের কথা স্বীকার করে প্রকৌশলী বলেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। “আমরা ইতিমধ্যেই নির্মাণ খামার মালিকদের তাদের কাজের গতি বাড়াতে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে এখনও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি”, অভিযোগ প্রকৌশলী।

তিনি আরও বলেন, রাস্তার ভাঙ্গা অবস্থা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে তারা লাল কাপড় ঝুলিয়েছে। প্রকৌশলী আরও বলেন, অতিরিক্ত ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকটি নদীর সাথে সংযুক্ত জিয়া খালে বৃষ্টির পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সড়কের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

স্থানীয়রা আরও জানান, বর্ষার শুরুতেই রাস্তার অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে রাতের বাস, ভারী যানবাহনসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে।

নাজিরপুর গ্রামের কৃষক মোঃ শামসুদ্দিন জানান, সড়কটি ভেঙ্গে গেলে এসব পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হবে। একই গ্রামের আরেক কৃষক সাবেদ আলী জানান, দাঁড়িয়ে থাকা আউশ ফসল ও গ্রীষ্মকালীন সবজিরও ক্ষতি হবে।

ঢাকা-কলমাকান্দা যাত্রীবাহী বাসের চালক তরিকুল ইসলাম চান্দুয়াইল ব্রীজের দুপাশে  সড়ক ধসে সরু হয়ে গেছে বাস চলাচলের বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন , যদি জরুরী ভিক্তিতে সড়ক সুরক্ষা কাজ করা না হয় তাহলে কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী লেঙ্গুরা ও নাজিরপুর, নলছাপ্রা বাজার থেকে সরাসরি যাত্রীবাহী বাস এই সড়ক দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত বন্ধ থাকবে। এর জন্য আমরা চরম টেনশনে আছি ।

এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ, তারাও এই সড়কে ওভারলোড পণ্য ও ভারী যানবাহনসহ ট্রাকের চলাচলে কঠোর ও সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধের দাবি জানিয়ে আসছেন কিন্তু এখনো তেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সড়কের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে লেঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, তারা ইতোমধ্যে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়কটি ভাঙন থেকে রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপের জন্য অবহিত করেছেন।

নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলী বলেন, সড়কটি ভেঙে গেলে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের প্রায় ৫০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ হবে। চেয়ারম্যান আরো বলেন, কলমাকান্দা ও রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য গন্তব্যে যাওয়ার প্রধান উৎস সড়ক।

ওই সড়কের বিপজ্জনক অবস্থার কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তারা ইতিমধ্যেই উপজেলা প্রকৌশলীকে গাইড ওয়াল নির্মাণ ও বালির ব্যাগ ডাম্পিংসহ পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং রাতে এই সড়কে কোনো যানবাহন চলাচলের অনুমতি নেই বলে জানান সহকারী কমিশনার।

যোগাযোগ করা হলে নেত্রকোনার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহিম শেখ বলেন, ভাঙন থেকে সড়ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১২২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares