শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম-১ আসনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা নির্বাচনী গণসংযোগ চালাচ্ছে

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম-১ আসনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা নির্বাচনী গণসংযোগ চালাচ্ছে

মোঃ রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নিয়ে মহান জাতীয় সংসদের ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসন গঠিত। কুড়িগ্রাম-১ আসন দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে চলে যায়। স্বাধীনতার পর প্রথম দফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামছুল হক চৌধুরী বিজয় লাভ করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে চলে যায়। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাইফুর রহমান রানা এই আসনে জয়লাভ করেন। এর বাইরে প্রায় ৩৩ বছর আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী গণসংযোগ চালাচ্ছে। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন তাদের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও কোন্দল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে আওয়ামী লীগে। বিএনপির একক প্রার্থী আলহাজ্ব সাইফুর রহমান রানা মাঠে রয়েছেন। উত্তর জনপদের কুড়িগ্রাম-১ আসনটি উন্নয়ন বঞ্চিত দরিদ্র অধ্যুষিত নদীভাঙ্গন কবলিত জনপদ। নির্বাচন আসলে প্রার্থীরা আসেন নানা প্রতিশ্রæতির ঢালি নিয়ে। ভোট শেষে সবাই চলে যান, উন্নয়ন বঞ্চিত থাকেন দরিদ্র জনগোষ্ঠি। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামছুল হক চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ থেকে এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিন দফায় জাতীয় পার্টির আ.খ.ম শহিদুল ইসলাম বাচ্চু জাতীয় সংসদের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে আ.খ.ম শহিদুল ইসলাম বাচ্চু’র মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সব নির্বাচনে তার ভাগ্নে জাতীয় পার্টির প্রার্থী একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বলা চলে জাতীয় পার্টির মনোনীত একক প্রার্থী তিনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ঈদ-উল-ফিতর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। প্রার্থীদের ছবির সঙ্গে নেতা-নেত্রীর ছবিসহ বিল বোর্ড পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার ও গ্রামগঞ্জ। আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে আসনটি ধরে রাখতে লবিং অব্যাহত রেখেছে। বিএনপিও জয়ের স্বপ্নে এলাকায় এলাকায় সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী আলহাজ্ব সাইফুর রহমান রানা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া জাতীয় পার্টি।

এদিকে জাতীয় পার্টির কর্মী সমর্থকদের দাবী- ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি একেএম মোস্তাফিজুর রহমান তার দ্বায়িত্বকালীন সময়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। সাধারণ মানুষ যেকোন সমস্যায় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে গিয়ে সেবা নিয়েছেন। বর্তমান সময়ে আওয়ামীলীগের এমপি আছলাম হোসেন সওদাগর তার নির্বাচনী এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। একারণে সাধারণ ভোটাররা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগত ভাবে নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিতে হবে আওয়ামীলীগের দাবী সচেতন মানুষের। আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনে বর্তমান এমপি আছলাম হোসেন সওদাগর, দেশবন্ধু গ্রæপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা, ভ‚রুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন, কৃষকলীগ নেতা মজিবর রহমান বীরবল, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল, আওয়ামীলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম মাজু, সাবেক ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আখতারুজ্জামান মন্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণির নাম শোনা যাচ্ছে। শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা সোনাহাট স্থলবন্দর, কচাকাটা থানা, নাগেশ্বরী পৌরসভা, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, কুড়িগ্রাম-ভ‚রুঙ্গামারী বাস সার্ভিস চালু, ব্যক্তিগত চেষ্টায় শিল্পকারখানা ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কারণে আলোচনায় রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে অনুন্নত এলাকার বাসিন্দা। তাই এলাকার উন্নয়নের জন্য, কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি বøুমিং নিটওয়ার লিমিটেডের পরিচালক শিল্পপতি মাজহারুল ইসলাম মাজু। মনোনয়নের দৌড়ে এবারই প্রথম তিনি। তার বাবা মজিবুর রহমান বীরবল একবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে হেরে যান। জয় দিয়ে পরাজয়ের সে গøানি ভুলতে চান তার উত্তরসূরি মাজহারুল ইসলাম মাজু। ভ‚রুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন বলেন, আমি আমার বাবা সাবেক এমপি শামছুল হক চৌধুরীর মতো জনগণের পাশে থাকতে চাই। গত কয়েক বছর থেকে শুধু পোস্টার ও বিলবোর্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়ে আসছেন ষাটের দশকের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আখতারুজ্জামান মন্ডল। দলীয় মনোনয়নের আশায় যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি ভোটারদের মাঝে পরিচিত হতে অক্লান্ত চেষ্টা করছেন। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তার দাবি ক্লিন ইমেজ এবং নতুন ও তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্বের জন্য দল তাকে বিবেচনা করবে। আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য নতুন প্রার্থী হিসেবে সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু’র নাম সর্বত্র শোনা যাচ্ছে এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুভেচ্ছা সম্বলিত লিয়াকত আলী লাকুর বিলবোর্ড বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির দুর্গে হানা দিতে প্রস্তুত বিএনপির একক প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আলহাজ্ব সাইফুর রহমান রানা। তাকে বিজয়ী করতে রণকৌশল নির্ধারণে শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ঘন ঘন বৈঠকে বসছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) হয়ে গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন হাইকোটের অ্যাডভোকেট রশীদ আহম্মেদ। আগামী নির্বাচনেও তার কথা শোনা যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারও প্রতিদ্বন্দিদ্বতা করবেন ভুরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই মাস্টার। তিনি এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালের নির্বানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অভিনব প্রচার কৌশল অনেকেরই দৃষ্টি কাড়ে।

এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড অনেকটা আইনী কারণে সংকোচিত হলেও ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আজিজুর রহমান স্বপন এর নাম দীর্ঘদিন ধরে মাঠে শোনা যাচ্ছে। তিনি প্রার্থী হলে সব প্রার্থীকেই কোনঠাসা অবস্থায় পড়তে হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

১৬০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares