মঙ্গলবার- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বরিশালে খোকন সেরনিয়াবাতের সংবর্ধনায় মঞ্চ ভড়া নেতা দর্শক সারি ফাঁকা

বরিশালে খোকন সেরনিয়াবাতের সংবর্ধনায় মঞ্চ ভড়া নেতা দর্শক সারি ফাঁকা

বরিশাল ব্যুরোঃ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পাঁচ দিন পর বরিশালে এসেছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে তাঁকে বহনকারী গাড়ির বহর নগরীর সদর রোডে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছায়। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন তিনি। এসময় তিনি এক বারের জন্যও তার ভাতিজা এবং বর্তমান মেয়রের নাম উচ্চারণ করেননি।

তাছাড়া মেয়র প্রার্থীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থল ছিল একেবারেই ফাঁকা। ছোট-বড় সব নেতাই ছিলেন মঞ্চে। সামনের সারিতে সাংবাদিক আর নেতাদের কয়েকজন কর্মী ছাড়া অন্য তেমন কেউ ছিলেন না।

তাছাড়া মঞ্চে দাঁড়ানো নিয়ে কয়েক দফা ধাক্কাধাক্কি করতেও দেখা গেছে নেতাদের। এতে বিব্রত হয়ে তাদের নিবৃত করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে আ’লীগ নেতাদের দাবি প্রচন্ড গরমের কারণে নেতাকর্মীরা চেয়ারে বসতে পারেনি।

এদিকে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পরবর্তী বক্তব্যে বরিশাল নগরীকে অবহেলিত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত লিখিত বক্তব্যে বলেন, বরিশালকে আমি ভালোবাসি।

এখানকার মানুষকে সেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আপনাদের সমর্থন পেলে বরিশালকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে উপহার দেব।

তিনি বলেন, আমি বরিশাল নগরীকে আধুনিক ও শান্তির নগরী গড়ে তুলব। বেঁচে থাকতে কোনো অন্যায়, অপরাধ হতে দেব না। আমাদের অঙ্গীকার নতুন বরিশাল গড়া, এই ব্রত নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

তিনি এ সময় নৌকা মার্কায় ভোট চান। পাশাপাশি নতুন সেøাগান তুলে ধরে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, এখন থেকে বরিশালের নতুন সেøাগান হবে “নতুন বরিশাল, শেখ হাসিনার বরিশাল।

এর আগে বরিশালের সীমান্তবর্তী ভুরঘাটা থেকে বরিশাল নগরী পর্যন্ত ৯টি স্থানে আলাদা সংবর্ধনা জানানো হয় আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে। তাছাড়া নগরীর গড়িয়ারপাড় এলাকায় মেয়র প্রার্থীকে বরণ করেন সাদিক আবদুল্লাহ বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীরা।

সেখান থেকে বিভিন্ন যানবাহনের বহরে অংশগ্রহণ করেন সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারীরা। দুপুর ১টার দিকে তাঁকে বহনকারী গাড়ি বহর নগরীর সদর রোডে শহীদ সোহেল চত্বরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছায়।

এসময় তার সাথে ছিলেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।

মেয়র প্রার্থী খোকন নগরীতে প্রবেশের সময় ছাদ খোলা জিপে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নগরবাসীকে অভিনন্দন জানান। এসময় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে ফুলেল পাপড়ি ছিটিয়ে ঊষ্ণ সংবর্ধনা জানান।

তবে নগরীতে প্রবেশের আগে থেকেই গাড়ি বহরে থাকা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ছাদ খোলা জিপে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নগরবাসীকে অভিভাদন জানান।

এ নিয়ে মেয়র প্রার্থীকে বরণ করতে আসা অনেক নেতা-কর্মী এবং তাদের সমর্থকরা সমালোচনা করেন। যদিও তারা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে, মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত মঞ্চে ওঠার পরে তাঁকে প্রথমে বরিশাল মহানগর এবং পরে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুল দিয়ে তৈরি প্রতীকী নৌকা দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়।

এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বিসিসি’র প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পরে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিমের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একটি বার্তা দিয়েছেন। খোকনকে ভোট দিলে বরিশালকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করা হবে।

এসময় মনোনয়ন পরবর্তী বরিশালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের ইঙ্গত দিয়ে নানক নেতাকর্মীদের বলেন, আমরা একটি প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচন করতে চাই।

এমন কোন কর্মকান্ড করবেন না যাতে মানুষের দুর্ভোগ হয়। তিনি নৌকার প্রার্থীর বিজয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহŸান জানান।

দলের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝি নেই। কিছু কথা বাতাসের আগে ভেসে বেড়ায়। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর ভাই এবং সাদিক আবদুল্লাহ ভাতিজা।

প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাদের মধ্যে থেকে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই কোনো পক্ষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

তাছাড়া দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন বিরোধ নাই। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা এক এবং অভিন্ন। আগামী ১২ জুন জনগণের ভোটের বরিশালে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে বলেন তিনি।

এছাড়া পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, আমি মনে করি বরিশালবাসী মুক্ত হয়েছে। আপনারা যদি শান্তিতে থাকতে চান তাহলে খোকন সেরনিয়াবাতকে ভোট দিন।

তিনি নির্বাচিত হলে নতুন বরিশাল সৃষ্টি হবে। এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ক্ষোভ ঝাড়েন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর।

এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন,মিষ্টি খাইয়ে, মিছিল করে বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না। আর বিভাজন টিকিয়েও রাখা যাবে না। মনে রাখবেন খোকন ভাই সেরনিয়াবাত পরিবারেরই সন্তান।

সরেজমিনে দেখা গেছে,‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরে রাজনীতিতে নিস্কৃয় হয়ে যান তাঁর অনেক অনুসারী। খোকন সেরনিয়াবাতের বরিশাল আগমন ঘিরে সেই সব নেতাদের দেখা গেছে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। তারাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন।

৯২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares