বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কলমাকান্দায় ইউনিয়ন পর্যায়ে মিলছে না স্বাস্থ্যসেবা

কলমাকান্দায় ইউনিয়ন পর্যায়ে মিলছে না স্বাস্থ্যসেবা

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোনার কলমাকান্দায় জনবল-সংকটে তৃণমূল পর্যায়ে মিলছে না স্বাস্থ্যসেবা। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা পাচ্ছেন না চিকিৎসাসেবা। ফলে গ্রাম্য চিকিৎসক ও ঔষধ ব্যবসায়ীদের ওপর রোগীদের ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে কলমাকান্দা সদর, নাজিরপুর, খারনৈ, রংছাতি ও পোগলা এই ৫টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং লেংগুরা ও কৈলাটীর সিধলী এই ২টি ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ভিজিটর, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন আয়া এবং একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা। আর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মিডওয়াইফ, একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা।

কিন্তু কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কোন জনবল নেই। সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভিজিটর স্বাস্থ্যসেবা দেন। পোগলায় একজন ভিজিটর ও একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী। তারমধ্যে ভিজিটর মেহেরুননেছা দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা সদরে ডেপুটেশনে আছেন। পিয়নও আবার মাসের পর মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছে। নাজিরপুর ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ভিজিটর ও একজন আয়া ছাড়া আর কেউ নেই। তারমধ্যে ভিজিটর সুরাইয়া আফসানা দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা মাতৃসদনে ডেপুটেশনে আছেন। খারনৈ ইউনিয়নে একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। রংছাতি ইউনিয়নে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন আয়া, একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই। তারমধ্যে পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী তোফায়েল আহম্মেদ কলমাকান্দা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে রয়েছেন। আর লেংগুরা ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ছাড়া আর কেউ নেই। কৈলাটী ইউনিয়নের সিধলীতে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও একজন পিয়ন কাম নৈশ্যপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই।

দীর্ঘদিন ধরে ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে রংছাতি ও নাজিরপুর ছাড়া সবকটিতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে । ফলে গ্রামের লোকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর লেংগুরা ও সিধলী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও সেখানে কোন মেডিকেল অফিসার না থাকায় জটিল রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পোগলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি তালা বদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরে এ বিষয়ে কথা হলে কেন্দ্রে পাশের বাসিন্দা জালাল উদ্দীন (৫০), নাসিমা আক্তার (২৫), সোহাগ মিয়া (২১), শ্যামল সরকার (২০), কুলসুমা বেগম (৩৫) ও পলাশহাটি গ্রামের রুকুজ্জামান (৩৩) বলেন, গত কয়েক মাস ধরে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খুলেনা। এখানে নাকি ডাক্তার নেই। আমাদের অসুখ-বিসুখ হলে ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। এতে করে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

পোগলা ইউপির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, আমার ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেটি বন্ধ আছে। সেকারণে ইউনিয়নবাসী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কেন্দ্রেটিতে আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সরঞ্জাম থাকলেও বিনাচিকিৎসায় ফিরতে হচ্ছে রোগীদের।

কলমাকান্দা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. বিজয় প্রকাশ বিশ^াস বলেন, জনবল কম থাকায় অসুবিধে হচ্ছে। এবিষয়টি আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আল মামুন, সিধলী ও লেংগুরায় মেডিকেল অফিসার না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তাছাড়া লেংগুরা ও সিধলী এ’দুটি কেন্দ্রে উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

৩২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares