![রাজশাহী অঞ্চলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন মেয়ররা রাজশাহী অঞ্চলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন মেয়ররা](https://spnewsbd.com/wp-content/uploads/2023/03/img20230315_180003.jpg)
রাজশাহী অঞ্চলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন মেয়ররা
![](https://spnewsbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ পৌর মেয়র একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এসব মেয়রদের নানা ধরণের বির্তকে জড়িয়ে পড়ায় নাগরিকগণ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, গত ৬ মার্চ সোমবার
রাজশাহীর কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজশাহীর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত ও জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলা করেছেন ওই পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল। তিনি আইনজীবির মাধ্যমে আদালতে মামলাটি করেন।৷ এখবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়রের বিরুদ্ধে নাগরিকগণ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
এর আগে তানোর পৌরসভা প্রায় ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু এই পৌরসভার নিবন্ধিত ঠিকাদারদের লাইসেন্সের মেয়াদ আগেই শেষ হওয়ায় তাঁরা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেনি। এতে প্রশ্ন উঠে তাহলে কাজ পাবেন কে ? ঠিকাদারেরা বলছেন, মেয়র ইমরুল তাঁর পছন্দের লোককে নতুন করে লাইসেন্স দিয়ে কাজটি দিতে চান। তাই দরপত্র আহ্বান করার আগেই নিবন্ধিত ঠিকাদারেরা একাধিকবার লাইসেন্স নবায়নের জন্য গেলেও তা করে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ঠিকাদারেরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করার পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিটপিটিশন করেন। গত বছরের ১৮ অক্টোবর ঠিকাদারেরা দ্বিতীয়বার লাইসেন্স নবায়নের জন্য পৌরসভায় যান। তখন মেয়র ইমরুল হকের সামনেই পৌরসভার এক কর্মী ঠিকাদারদের লাঞ্ছিত করে। শেষ পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন করে না দেওয়ায় ঠিকাদারেরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে নৌকা নিয়ে প্রথমবারের মতো মেয়র হন ইমরুল হক। এর কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁকে নিয়ে উঠেছে নানা বিতর্ক। এছাড়াও মশক নিধন ও করোনা সামগ্রী বিতরণে অনিয়ম,অনুমতি ব্যতিত পৌরসভা চত্ত্বরের গাছ কাটা, সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, কর্মচারী নিয়োগ এবং ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ভোট করা ইত্যাদি তাকে নিয়ে নানা নেতিবাচক আলোচনা রয়েছে পৌরবাসীর মাঝে। জুলেখা কাহিনী নিয়েও গুঞ্জন আছে।
এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। তবে মেয়র ইমরুল হকের দাবি এসব অভিযোগ অসত্য ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।
অন্যদিকে তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান গণশুনানী না করে একক ক্ষমতা বলে উচ্চ হারে পৌর কর বর্ধিত করেন এবং পৌরসভায় কোনো নাগরিক সেবা নিতে গেলে আগেই বাধ্যতামুলকভাবে বর্ধিত কর আদায় করা হয়। এতে পৌরবাসী ফুঁসে উঠে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এমনকি এ ঘটনায় পৌরবাসী স্মরণকালের সর্ববৃহত মানববন্ধন ও বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধী নেতা শামসুল আলমকে হত্যার চেষ্টা করে মামলার আসামি হয়েছেন এবং মেয়রের কক্সবাজার ভ্রমণ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র আল মামুনের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তার ব্যবসায়িক পার্টনার মনিরুজ্জামান আইনজীবী আজমত হোসাইনের মাধ্যমে ওই টাকা পরিশোধের জন্য মেয়রকে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়র একেএম আতাউর রহমান স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র আব্দুল মজিদের ঘাড়ে ভর করে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্ত্ত নির্বাচিত হবার পরপরই সাংসদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এতে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়ে বলে মনে করছেন নাগরিকগণ। ফলে তাকে নিয়েও উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ওদিকে পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করে কথা বলায় দলীয় পদ হারিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে। অপরদিকে নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী।বিতর্কে পড়ে নিজের মেয়র পদটিও ধরে রাখতে পারেননি বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা থেকে নির্বাচিত মুক্তার আলী। প্রথমবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে মেয়র হয়েছিলেন তিনি। পরের বার দলীয় মনোনয়ন না পেলেও প্রভাবশালী এক নেতার প্রশ্রয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে মেয়র হন। এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণে গত জুলাইয়ে এলাকার এক শিক্ষককে মারধর করেন দলবল নিয়ে গিয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষক মামলা করলে মুক্তারের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। মেলে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক এবং কোটি টাকা। গ্রেপ্তার করা হয় স্ত্রী ও ভাতিজাকে। পরে গ্রেপ্তার হন মেয়র ও তাঁর ছেলে। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মুক্তারকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তিনি এখন কারাগারে। মুক্তারের বিরুদ্ধে পৌরসভায় লাখ লাখ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও আছে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান চালিয়েছে পৌরসভায়।
এদিকে বিয়ের ‘খায়েশ’ মিটছেই না বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল মালেকের। ৪০ বছরের ঘরসংসার বাদ দিয়ে পরপর দুই অল্প বয়সী তরুণীকে বিয়ে করে সমালোচিত হন আওয়ামী লীগের এই নেতা। সর্বশেষ গত এপ্রিলে নূপুর আক্তার নামের এক তরুণীকে তৃতীয় বিয়ে করেন ৫৫ বছর বয়সী মালেক। তালাক দেন প্রথম স্ত্রী কোহিনূর বেগমকে। প্রথম স্ত্রী ও ছেলেকে বাড়িছাড়া করতে মেয়র মামলা করেন তাঁদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার হয়ে ছেলে জেলও খাটেন। এর আগে গত বছরের মে মাসে এক নাবালিকাকে বিয়ে করে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তবে মেয়রের দাবি, ‘পরিস্থিতি’ তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য করছে। আবার গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র মারা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন কাউন্সিলর মোহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ। এরপরই তিনি পৌরসভার মাসিক সভা স্থগিত করে ঠিকাদারের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন প্রমোদভ্রমণে। সঙ্গে নেন সচিবকেও। কক্সবাজারে গিয়ে ওঠেন বিলাসবহুল রিসোর্ট হোটেল সি-গলে। ভারপ্রাপ্ত মেয়র, ভারপ্রাপ্ত সচিব ও ঠিকাদার আকবর আলী সুইমিং পুলে জলকেলি করছেন এমন ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ওই সময় পৌরসভার ১২ কোটি টাকার একটি কাজ করছিল ঠিকাদার আকবর আলীর প্রতিষ্ঠান সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ। জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের পৌর মেয়ররা। কেউ ক্ষমতার প্রভাব দেখাতে গিয়ে সমালোচিত হচ্ছেন, আবার কেউ অনিয়ম, নৈতিক স্খলন কিংবা বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বিতর্কে পড়ছেন। এ অবস্থায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বাছবিচার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। নানা কারণেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নৈতিক স্খলন ঘটছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, জনপ্রতিনিধিদের হতে হয় অনেক বেশি দায়িত্বশীল। বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছে না। আগে তো মানুষ জনপ্রতিনিধি হতো জনগণের হৃদয়ে স্থান নিতে। এখন সেই চর্চা নেই। কারণ, এখন মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগ্যতার চেয়ে অন্য যোগ্যতা দেখা হয়। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
৭২ বার ভিউ হয়েছে