শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নীলফামারী ০১ আসনে বিরোধী দলে একক, আ’লীগে প্রার্থীজট

নীলফামারী ০১ আসনে বিরোধী দলে একক, আ’লীগে প্রার্থীজট

রবিউল হক রতন, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনে আসা না আসার ওপরই নির্ভর করছে সব হিসাব-নিকাশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনে এই চিত্র দেখা গেলেও নীলফামারী-১ আসনে বিএনপি-জামায়াত সহ অন্যান্য বিরোধী দলের চিত্রটা একটু ভিন্ন। নির্বাচনের প্রায় এক বছর বাকি থাকলেও এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আসনের দুই উপজেলা ডোমার ও ডিমলায় জোর প্রচার শুরু করেছে দলগুলো। এমনকি দলে নেই কোনো কোন্দল। একক প্রার্থী নিয়ে কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত সহ অন্যান্য দলগুলো।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। আওয়ামী লীগে বর্তমান এমপি ছাড়াও এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন আরও সাতজন। সবাই এগিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। কেন্দ্রে শুরু করেছেন তদবির। এলাকায় নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে করছেন উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তামূলক কর্মকাণ্ড।

আসনটি গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এবারও নিজেদের দখলে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বর্তমান এমপি ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকার। তবে দলে একক অবস্থান তৈরি করতে পারেননি এই নেতা। তাই দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে আগে লড়তে হবে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. মনোয়ার হোসেন, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সরকার ফারহানা আক্তার সুমি, সাবেক এমপি হামিদা বানু শোভা, সাবেক রাষ্ট্রদূত আমিনুল ইসলাম সরকার, ডোমার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, ডোমার জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও উপজেলা সদস্য খায়রুল আলম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাবেক এমএলএ আব্দুর রহমান চৌধুরীর নাতি ইমরান কবির চৌধুরী।

এই আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে গত দুই নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিনা ইসলামের স্বামী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি থেকে তিনিই একক প্রার্থী। এ কারণে নির্বাচনের ব্যাপারে তেমন জটিলতা নেই দলে।

ডোমার পৌর বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমান আনু জানান, এখানে রফিকুল ইসলামের কোনো বিকল্প নেই। তিনি শুধু দেশে নন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা করেছেন। এই এলাকায় তাঁর পরিবারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাঁকে সামনে রেখেই। এগিয়ে যাচ্ছে সব কর্মসূচি।

জাতীয় পার্টিতে রয়েছেন দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি এন কে আলম চৌধুরী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) তছলিম উদ্দিন।

প্রার্থীর জট দেখা দেওয়া আওয়ামী লীগের আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সাধারণ ভোটাররা আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা করেছি। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পেলে আবারও জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকব।’

মনোনয়ন পেতে ঢাকা ও নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত করছেন মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের পাশে থেকে কাজ করছি। দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী।”
১৩ বছর ধরে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন সরকার ফারহানা আক্তার সুমি। তিনি তদবির করে এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন করেছেন। সুমি মনে করেন, এবার তাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।

জাতীয় পার্টির তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি প্রাথমিকভাবে এই আসনে আমার মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। এ জন্য আমি দুই উপজেলায় জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করছি।’ তবে এন কে আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই আসনে আমি সংসদ সদস্য ছিলাম। পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে জেলা জাতীয় পার্টির দায়িত্ব দিয়েছেন। নেতা-কর্মীরা আমাকে এই আসনে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করছেন। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনে জয়লাভ করব।’

নির্বাচনী এলাকায় বন্যার্তদের সহযোগীতা, কম্বল বিতরণ, সভা, মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী। তারাও ভেতরে- ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। মনোনয়ন চাইতে পারেন নীলফামারী জেলা জামাতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার।

এদিকে মাঠে নেমেছেন জেবেল রহমান গানি। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) চেয়ারম্যান। তাঁর বাবা বাংলাদেশ ন্যাপের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী শফিকুল গানি স্বপন।

ভোটের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ভোটার মনে করছেন, বর্তমান এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, এমপির বেশ কয়েকজন আত্মীয় মাঠে তাঁর সুনাম নষ্ট করছেন । অনেকেই বলছেন, বিএনপি অথবা জামায়াত নির্বাচনে আসুক, এটা তাঁরা চাচ্ছেন। আর এই দুই দলের মধ্যে একটি দল যদি নির্বাচন করে, তবে এই আসনে লড়াইটা হবে ত্রিমুখী। বিএনপি বাদেও জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও বেশ অভিজ্ঞ।

১৬৯ বার ভিউ হয়েছে
0Shares