শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জলঢাকায় বিলুপ্ত প্রায় গরুর লাঙ্গল  হাল

জলঢাকায় বিলুপ্ত প্রায় গরুর লাঙ্গল  হাল

 আনোয়ার হোসেন, জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ একমাত্র গরু আর লাঙ্গল ছিল এদেশের কৃষকের চাষাবাদের অবলম্বন। কালের স্রোতে গরু দিয়ে হালচাষ আজ বিলুপ্তির পথে। সাত সকালে কৃষকের লাঙ্গল ও জোয়াল কাধে নিয়ে জমি চাষ করতে  মাঠে যাওয়ার দৃশ্য এখন আর নজরে পরে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারে  কৃষি মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরু, লাঙ্গল,জোয়াল ও মই।
 নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা কৃষি, মৎস্যসহ নানা রকম  ফসল উৎপাদনে অন্যতম। এ উপজেলার তিস্তা নদীর চরসহ কৃষি মাঠের দিকে তাকালেই দেখা যেত সারি বেঁধে লাঙ্গল, জোয়াল আর গরু দিয়ে জমি চাষ করার দৃশ্য।
বর্তমানে গরু ও লাঙ্গলের জায়গা  দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার যন্ত্র ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। এক সময়ে দেশে  কৃষক বানিজ্যিকভাবে গরু পালন করতো হাল চাষ ও মোটাতাজা করার জন্য।  তারা নিজের জমি ও অন্যের জমি চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। আর  হালের গরু দিয়ে অন্যের জমিতে হাল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতো।  আধুনিক যন্ত্র কৃষি মাঠ দখল করায় গরু দিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করে বেছে  নিয়েছে তারা অন্য পেশা।
এজন্য দেশের ঐতিহ্য গরুর গাড়ি ও লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ আজ  বিলুপ্তির পথে। বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২/১ জন কৃষক আজও লাঙ্গল ও গরু  দিয়ে হালচাষ করছে।  কৈমারী ইউনিয়নের গাবরেল গ্রামের কৃষক মোঃ সুবহান বলেন, গরু  দিয়ে জমি চাষ  করাই আমার কাম ছিল। গরু দিয়া আল বাওয়ার  কদর ছিল আগে, এখন  আর তা নেই, যন্রপাতি আসাতে আল বাওয়া  বর্তমানে ডিজিটাল হয়ে  গছে। ছোট বেলায় ক্ষেতে কাজ করতাম,বাড়িতে আল বাওয়ার জন্য ২ থেকে ৪  জাড়া গরু পালতাম। জমিতে কাম করার জন্য ১ জোড়া বলদ ও ১ জোড়া গাভি পালন করতাম, আর  কাঠ, লোহার ফাল দিয়ে লাঙ্গল, বাঁশ দিয়ে জোয়াল, মই, লড়ি ও গরুর মুখের  টানা ব্যবহার হতো।
উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন আহম্মেদ বলেন, লাঙ্গল ও গরু দিয়ে হালচাষ কৃষি  মাঠ থেকে বিলুপ্ত প্রায়। সরকার কৃষি মাঠকে যান্ত্রিকরণ করেছে। এতে উৎপাদন  খরচ কমেছে এবং কৃষক লাভবান হচ্ছে।
সম্প্রতি পৌরসভার পূর্ব চেরেঙ্গা বটতলী এলাকার ব্রিজেরপাড় মাঠে গিয়ে দেখা যায় বিলুপ্ত প্রায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙ্গল দিয়ে দুইজন কৃষক জসিম ও সেলিম জমি চাষ করছেন। তারা বলেন পূর্বপুরুষের পেশা ছাড়িনি হাল চাষের জন্য একজোড়া বলদ গরু ক্রয় করেছে।
এ বিষয়ে জলঢাকা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা জুয়েল সরকার বলেন, হয়তো কোনো কোনো জায়গায় এমন জমি আছে যেখানে হাল চাষের জন্য ট্রাক্টর পাওয়ারটিলার দিয়ে সম্ভব হয় না। তাই এসব জমিতে কৃষক প্রয়োজনে লাঙ্গল-গরুর হাল ব্যবহার করে থাকতে পারেন। তবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এই যুগে পশু দিয়ে হালচাষ ছেড়ে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। এতে করে সময় কম লাগে ও খরচ কম হয়।
৩২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares