বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অনুমোদনহীন হাসপাতাল অপারেশন : নার্ভ কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৩ সন্তানের জননী সুফিয়া

অনুমোদনহীন হাসপাতাল অপারেশন : নার্ভ কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৩ সন্তানের জননী সুফিয়া

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি:  পিত্তথলীর পাথর অপসারন করার সময় নার্ভ কেটে ফেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিন সন্তানের জননী নেত্রকোনা কলমাকান্দা উপজেলার লেংঙরা ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন (২৫) । নগরীর অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ এ ঘটনা ঘটে ।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী পাথর অপসারনের সময় সুফিয়ার পেটের নার্ভ কেটে ফেলেন বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীর পরিবার। দিন দিন অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হলে নার্ভ কাটার বিষয়টি ধরা পড়ে।
সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী ও বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে এর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আইনি আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বামী সিদ্দিক মিয়াসহ এলাকাবাসী ।
এবিষয়ে ভুক্তভোগীর স্বামী দিনমুজুর সিদ্দিক মিয়া ডাকযোগে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর সভাপতি, ময়মনসিংহের, বিভাগীয় কমিশনার,  জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আর অনুলিপি দিয়েছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক (প্রশাসন), নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন, কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা,স্থানীয় ও জেলা এবং বিভাগীয় প্রেসক্লাবে । সিদ্দিক মিয়া এ ঘটনার তদন্ত করে দোয়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে সিদ্দিক মিয়া জানান, তিন সন্তানের জননী সুফিয়া খাতুন আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে অসুস্থবোধ করলে তাকে ময়মনসিংহে বেসরকারি হাসপাতাল ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ নিয়ে গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পর তার পিত্তথলীতে পাথর পাওয়া যায় । গত ২৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী তার অপারেশন সম্পন্ন করেন ।  কিন্তু বাড়ী আসার পর সুফিয়া অবস্থার অবনতি হলে সাতদিন পর আবার ডা. খাইরুজ্জামান চৌধুরীর নিকট যান। তখন আবার আল্ট্রাসনোগ্রামসহ পরীক্ষা- নিরীক্ষা শেষে নতুন ঔষধ লিখে দেন তিনি । কিন্তু বাড়ি আসার পর সুফিয়ার অবস্থার আরো অবনতি হলে ময়মনসিংহে ডা. ফখরুজ্জামান ও ডা. মো. শফিকুল ইসলামের নিকট গেলে জরুরি ভিত্তিতে রের্ফাড করেন ঢাকার বারডেমে। ওখানেই আবার সুফিয়ার অপারেশন হলে সুফিয়ার একটি নার্ভ কেটে ফেলার বিষয়টি ধরা পড়ে ।
ঢাকা বারডেম হাসপাতালে একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ছাড়পত্র দিয়ে বলা হয়েছে আরো একটি অপারেশন করে নার্ভে সংযুক্ত টিউবটি বের করতে হবে।
ডাক্তারের খামখেয়ালিপনায় পাথর অপসারন করার সময় নার্ভ কেটে ফেলা ও চিকিৎসার কারণে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত সিদ্দিক মিয়া জানান চিকিৎসার জন্য তার শেষ সম্বল ২৪ শতক ফসলি জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পরেছেন । রোগীর জন্য প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে তার । ডাক্তারের খামখেয়ালিপনায় এ পর্যন্ত আমার প্রায় আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে । আগামী সপ্তাহে আরো একটি অপারেশন করার জন্য বলা হয়েছে আর এতে আরো এক লাখ সত্তর হাজার টাকা খরচ হবে, বলেন সিদ্দিক মিয়া ।
এভারকেয়ার হসপিটাল-এর চেয়ারম্যান শিপন আকন্দ বলেন, তার হাসপাতলে প্রথম অপারেশন হয়েছে । তবে তিনি কোন অভিযোগের কথা শুনেননি বলে দাবি করেন ।
এ বিষয়ে ডা. এ.কে.এম খাইরুজ্জামান চৌধুরী জানান পাথর অপসারন করার সময় নার্ভ কেটে ফেলার মতো কোন ঘটনা তার জানা নেই । অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন এটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ।
ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের  বলেন, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। শীঘ্রই কমিটি গঠন করে অভিযোগটি তদন্ত করা হবে। তবে ‘এভারকেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনো কমপ্লেক্সে’ এর কোন অনুমোদন নেই বলেও জানান সিভিল সার্জন ।
৪২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares