বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
 ইভটিজিং ও প্রকাশ্য মেলামেশার প্রতিবাদ ; নাটোরে মেয়ের বাবা ও চাচাকে এবং লালপুরে শিক্ষককে মারধর

 ইভটিজিং ও প্রকাশ্য মেলামেশার প্রতিবাদ ; নাটোরে মেয়ের বাবা ও চাচাকে এবং লালপুরে শিক্ষককে মারধর

ইসাহাক আলী, নাটোর, ০৮ নভেম্বর-  নাটোর সদর উপজেলার গাওপাড়া ঢালান বাজার এলাকায় ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করায় মেয়ের বাবা ও চাচাকে এবং লালপুরের গোপালপুর বাজার এলাকায় বাড়ির সামনে প্রেমিক যুগলের প্রকাশ্য অবৈধ মেলামেশার প্রতিবাদ করায় শিক্ষিকা ও তার ছেলেকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে।

নাটোর সদর উপজেলায় স্বর্ণালী আক্তার সূচি (১৪) নামে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার বাবা মোঃ সেলিম (৫০) ও চাচা মোঃ শামীমকে (৩২) মারপিট, ঘরবাড়ী থেকে উচ্ছেদ ও প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সদর উপজেলার গাওপাড়া ঢালান বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই শিক্ষার্থী সদর উপজেলার গাওপাড়া সেনভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

থানায় করা অভিযোগে জানা গেছে, কথিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সিজান (১৬), হেদায়েত(১৬), তুষার(১৬), প্রান্ত(২০), শাওন (১৯), হৃদয় অভি (১৬), আজাহার(৫৩), কালাম (৫০)সহ অজ্ঞাত আরো বেশ কয়েকজন ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ে যাওয়া- আসার পথে উত্ত্যক্ত ও কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি সইতে না পেরে ওই ছাত্রী তার বাবাকে জানায়। পরে ছাত্রীর বাবা সেলিম মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করলে ওই ছাত্রীর মুখে এসিড নিক্ষেপ ও অপহরণের হুমকি প্রদান করে বখাটেরা। তারপর থেকে সেলিম মেয়েকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ে দিয়ে যাওয়া আসা করে। এরই এক পর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে বাবা মেয়ে একসাথে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে গাওপাড়া ঢালান এলাকায় পৌছালে সিজান, হেদায়েত, তুষার তাদের পথরোধ করে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এ সময় ওই ছাত্রীর বাবা উত্ত্যক্তে নিষেধ করলে বখাটেরা তাকে এলোপাতারি মারপিট করতে থাকে। পরে স্থানীয়রা বাবা মেয়েকে উদ্ধার করে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, এই ঘটনার প্রায় আধা ঘন্টা পর বখাটেরা দলবদ্ধ হয়ে পুনরায় ভুক্তভোগীর বাড়ি গিয়ে হামলা ও বাড়ী থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে। পরে সেখানেও প্রতিবেশীদের সহায়তায় ভুক্তভোগীরা নিস্তার পান। এর পরেও থেমে থাকেনি বখাটেরা। এরপর ঢালান এলাকায় মাছ বিক্রির সময় ভুক্তভোগী ছাত্রীর চাচা শামীমকে মারপিট ও তার কাছে থাকা প্রায় ২৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে বখাটেরা। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং হৃদয় অভি জানান, পৃথক একটি মেয়ের বাবা প্রকৃত ইভটিজারের পরিবর্তে ভুলবশত নিরহ একটি ছেলেকে ধরে মারপিট করেছে । এখানে ভুল বুঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নাসিম আহমেদ জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নাটোরের লালপুরে বাড়ির সামনে প্রেমিক যুগলকে অবৈধভাবে মেলামেশার প্রতিবাদ করায় স্কুল শিক্ষিকা ও তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর ২০২২) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার শান্তিপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন, কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃত গোলাম তৌহিদ ভুট্টুর স্ত্রী শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন (৫০) এবং তাঁর ছেলে গোপালপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ফয়সাল তৌহিদ তরঙ্গ (২২)। তাঁরা গোপালপুর পৌরসভার শান্তিপাড়া মহল্লায় বাস করেন।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ওই শিক্ষিকার বাড়ির গলিতে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে অনৈতিকভাবে মেলামেশা করে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পৌরসভার শিবপুর খাঁপাড়ার বাবুর ছেলে আশিক (১৮) ও হিরুর ছেলে মিতুল বান্ধবী নিয়ে কথা বলার সময় তরঙ্গ তাদের নিষেধ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারামারি বেঁধে যায়। এ সময় আশিক ও মিতুলসহ একই এলাকার মাসুদের ছেলে মো. সাইফ (১৮), সবুরের ছেলে রিজভী (২৪), মধুবাড়ির খোকনের ছেলে মো. শান্ত (১৮), বৈদ্যনাথপুরের রাশিদুল ইসলাম (৪০) এলোপাথরি মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় তরঙ্গের মা ফরিদা বেগম ছেলেকে মারতে দেখে এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে গোপালপুর মুক্তার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুরুজ্জামান শামীম বলেন, লাঠির আঘাতে তরঙ্গের মাথা কেটে যাওয়া ৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাঁর মায়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনআনুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১১৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares