শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দ্বৈত নাগরিক নাগরিক হয়েও নাটোরে স্কুল কমিটির সভাপতি!

দ্বৈত নাগরিক নাগরিক হয়েও নাটোরে স্কুল কমিটির সভাপতি!

ইসাহাক আলী, নাটোর, ২০ অক্টোবর-বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বৈত নাগরিক হয়েও নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কালী প্রসন্ন সিকদার  নামে এক ব্যক্তি। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্টাতা সদস্য হাবিবুর রহমান মিঞা বিদ্যালয় পরিদর্শক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহী , নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন অফিসার ও জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষাবোর্ড। ইতোমধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে সাক্ষাতকার দিয়েছেন অভিযোগকারী।

লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে কালী প্রসন্ন সিকদার নির্বাচিত হন। তিনি তার একমাত্র  সন্তান এবং ভাই ভারতীয় নাগরিক। এই ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে সভাপতি নির্বাচিত কালী প্রসন্ন সিকদার নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের গ্রামের কালিগঞ্জ গ্রামে কার্তিক চন্দ্র সিকদারের ছেলে। অভিযোগ সূত্রে জানা  যায়, তিনি একই সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ থানার সাহেবঘাটা এলাকার বাসিন্দা। সেখানে কালিয়াগঞ্জ থানার মালগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটার তালিকায়ও তার নাম রয়েছে। ভারতের ভোটার তালিকা অনুযায়ী কালী প্রসন্ন সিকদার পিতা কার্তিক সিকদার, বাড়ি নং-এন০৩৭৯, ৩৪ কালিয়াগঞ্জ তপশীলি জাতি হিসেবে ভোটার তালিকায় ১১৩৯ নম্বরে তাঁর নাম রয়েছে । তার ভোট কেন্দ্র ১৯৩ সাহেবঘাটা এম ,এন হাইস্কুল। এছাড়া তার মেঝ ভাই গৌড় শিকদার ও ছোট ভাই গৌতম সিকদার প্রায় ২০ বছর আগে ভারতে গেছে। তারা ভারতের  দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর থানার পাশে ধলাহাটের ভোটার। সেখানে তিন ভাইয়ের  ৩০ থেকে ৪০ বিঘা জমি বসতবাড়ি ও ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে।  একমাত্র ছেলে প্রার্থ প্রতিম শিকদার ৮ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছে। সে বর্তমানে সেখানকার রায়গঞ্জ জেলা শহরের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিদ্যায় সম্মান শ্রেনীতে অধ্যায়ন করছে। কালী প্রসন্ন সিকদারের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই ভারতের নাগরিক। তিনিসহ তাঁর  পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন ।  ভারতের পশ্চিম বঙ্গের প্রধান  নির্বাচন  কর্মকর্তার (যঃঃঢ়://পবড়বিংঃনবহমধষ.হরপ.রহ) ওয়েবসাইটে তাদের নাম ও ঠিকানা রয়েছে।

এ বিষয়ে কালী প্রসন্ন সিকদার  বলেন, আমি এবং আমার পরিবারের সব সদস্য শুধুমাত্র বাংলাদেশি নাগরিক। ভারতে আমার কোনো নাগরিকত্ব নেই। কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই। একটি কুচক্রী মহল আমার বিরদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ভারতের পশ্চিম বঙ্গের প্রধান  নির্বাচন  কর্মকর্তার (যঃঃঢ়://পবড়বিংঃনবহমধষ.হরপ.রহ) ওয়েবসাইটে আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যের নাম রয়েছে কেন?- এমন প্রশ্নে কালী প্রসন্ন সিকদার  বলেন, ওয়েব সাইটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওয়েবসাইট বুঝি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন , এ বিষয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে। তদন্তের ফলাফল আমি জানিনা। তাকে অভিভাবকরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন । নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, অমি নতুন এসেছি এধরনের কোন অভিযোগ এখনো পায়নি ।তবে নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী কোন ব্যক্তির নাম বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকায় থাকলেই তিনি যে কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে আদালত অথবা সরকারের সাংবিধানিক কোনো প্রতিষ্ঠান যে নির্দেশনা দেবে নির্বাচন কমিশন তা বাস্তবায়ন করবে।

নাটোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আখতার হোসেন বলেন, কালী প্রসন্ন সিকদারের দুই দেশের নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি । ম্যানেজিং কমিটি গঠনে প্রবিধান ২০০৯ অনুযায়ী ১১ নং এর খ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যদি কেহ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারান কিংবা কোন বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেনে তাহলে সদস্য হবার যোগ্যতা হারাবে। তদন্ত স্বাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজিনা আকতার বলেন, আমি সবেমাত্র উপজেলায় যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো ।

৩০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares