প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে আন্তদেশীয় সহযোগিতার নতুন অধ্যায় পাকিস্থানে জিজেইউএস এর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর


ভোলা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে গবেষণা, প্রযুক্তি ও শিক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রাণি সম্পদ উন্নয়নে কাজ করা গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস)-এর একটি প্রতিনিধি দলের চুক্তি ও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে,কয়েক দিন আগে পাকিস্থানের লাহোরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস (ইউভাস)-এর বিশেষ আমন্ত্রণে ৯ দিনের ( ১৯-২৭ এপ্রিল) এক শিক্ষা ও গবেষনায় অংশ নিয়ে এ অবধান রেখেছেন। জিজেইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক-জাকির হোসেন মহিনের নেতৃত্বে এই সফরে অংশ নেন তিন জন অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান ডাঃ খলিলুর রহমান, ডাঃ তরুন কুমার পাল এবং ডাঃ আব্দুর রহিম।
সফরের শেষে বুধবার (৭ মে) দুপুরে গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থার সন্মেলন কক্ষে আশা ও প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা সভায় নির্বাহী পরিচালক-জাকির হোসেন মহিন এসব চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি জানান,সফরের মুল কার্যক্রম ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে বিভিন্ন গবেষণাগার, প্রাণিসম্পদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও উন্নত জাতের পশুপ্রজনন খামার পরিদর্শন ও প্রশিক্ষন। বিশেষভাবে তারা শাহিওয়াল গরু ও নিলি-রাভি মহিষের ব্রিডিং খামার পরিদর্শন, শিক্ষা ও গবেশনার সুবিধা পরিদর্শন, বিশেষজ্ঞদের সাথে মত বিনিময়, উপাচার্যের সাথে মত বিনিময় ও কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। যা দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত প্রাণিজাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
সফরকালে প্রতিনিধি দল উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং দু’দেশের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারিয়েট হলে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক সভা এবং জিজেইউএস-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় দুই দেশের গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়, শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ইন্টার্নশিপ, যৌথ ওয়ার্কশপ ও প্রশিক্ষণ আয়োজন এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বাস্তবায়নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হয়।
ভেটেরিনারি অনুষদের চেয়ারম্যান ডঃ অনিলা জামির দুররানি, মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃ মোহাম্মদ ইজাজসহ বিভিন্ন অনুষদের সদস্যরা এই সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্বে দুই দেশের ভেটেরিনারি গবেষণার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে গঠন মূলক মতবিনিময় হয়।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পাকিস্থানের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে একটি টেকসই ও ফলপ্রসূ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে প্রাণিসম্পদ খাত কৃষি নির্ভর জনপদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেখানে এই ধরনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দেশের প্রযুক্তি, গবেষণা ও সম্পদ উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশিলষ্টরা।
জিজেইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন আরো জানান, এই সফর আমাদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টি ভঙ্গিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি,এই চুক্তির ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আরও গভীর পর্যায়ে কাজ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে উন্নয়নের জন্য এমন আন্তদেশীয় সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই এই সম্পর্ক কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব উন্নয়নেও পরিণত হবে।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা ভবিষ্যতে এই ধরণের যৌথ উদ্যোগ আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থাটির প্রত্যাশা,এ ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে শুধু আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করবে না, বরং এটি গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত করবে।