রবিবার- ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নাটোরে চিকিৎসক-কলেজ শিক্ষিকার একান্ত ভিডিও ভাইরাল \ ধিক্কার, ক্ষোভ বিচার দাবী

নাটোরে চিকিৎসক-কলেজ শিক্ষিকার একান্ত ভিডিও ভাইরাল \ ধিক্কার, ক্ষোভ বিচার দাবী

ইসাহাক আলীঅ, নাটোর- নাটোরের এক স্বনাম ধন্য কলেজের শিক্ষিকা হলেও অবাধ চলাফেরা ও এক চিকিৎসকের সাথে রহস্যজনক মেলা মেশার আলোচনা ঢাকতে নিজের পরিচয় দিতেন সাংবাদিক পরিচয়ে। প্রথমে জেলার স্বনামধন্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের রোগী হিসাবে যেতেন সেবা নিতে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই পরিচয়ের মাত্রা গড়ায় বিছানাতে। ইতোমধ্যে সেই চিকিৎসক ও শিক্ষিকার যৌনাচারের ভিডিও অনেকের হাতে হাতে। তবে বিষয়টি অনেক দিন লোক চক্ষুর অন্তরালে স্মার্টফোনের স্ত্রিনে জায়গা করে নিয়ে ঘোরাফেরা করলেও এক সেবিকার করা অভিযোগ তা ভাইরাল হয়েছে ব্যাপক আকারে। এরই মধ্যে ওই অভিযোগে বেড়িয়ে এসেছে যৌন লালসা পূরণে কতোটা মরিয়া বনে গিয়েছিল তারা তার নানা তথ্য বেড়িয়ে আসছে। সেবিকার অভিযোগ মতে জানা গেছে শিক্ষিকা ও চিকিৎসকের যৌনাচারে সহযোগিতা না করার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী কারাবাস করে। দীর্ঘ কারাবাস শেষে বের হয়ে এসে জেলা প্রশাসকের কাছে এমন অভিযোগই করেছেন তিনি। এর পর থেকেই মানুষের আলোচনায় চাউর হয়েছে বিষয়টি। দুটি মহান পেশার মানুষ হয়েও এমন মানসিকতার লম্পট চিকিৎসক ও শিক্ষিকার সমালোচনা এখন মানুষের মুখে মুখে। সমালোচনা আলোচনা থেমে নেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। আর ২৮ মিনিটের সেক্স ভিডিওটি ঘুরে বেড়াচ্ছে স্মার্ট দুনিয়ার নীল পর্দায়। ভিডিওটি কয়েক মাস আগে শীতকালীন সময়ের বলে মনে হলেও ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি। এদিকে এমন ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন ওই সচেতন মহল সহ শিক্ষার্থীরাও। এছাড়া এমন অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

জানা যায়, ডা. আমিনুল ইসলাম লিপন নাটোর শহরের পশ্চিম আলাইপুর হাফরাস্তা এলাকায় বসবাসকারী ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সাথী শহরের হাফরাস্তা এলাকার বাসিন্দা ও নাটোর সিটি কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক।

গত বৃহস্পতিবার নাটোরের জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদের কাছে এক নারী ওই চিকিৎসক ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। যাতে তিনি বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা, আমিনুল ইসলাম লিপন নাটোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখতেন। সেখানেই নিয়মিত আসতেন নাজমুন নাহার সাথী নামের ওই নারী। পেশায় শিক্ষক হলেও তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন সাংবাদিক হিসাবে। রোগী ও ডাক্তারের পরিচয়ে যাতায়াত করলেও তারা সময় কাটাতেন একান্তে।

তিনি আরো জানান, পরে তারা নাটোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত অবাধ যৌনাচারে মিলিত হতেন। তিনি এই হাসপাতালে গত ছয় বছর থেকে সহকারি সেবিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের অবৈধ কর্মকান্ডে সহযোগীতা না করায় প্রথমে তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করে ও জেল খাটানোর হুমকি দেয়। পরে চলতি বছরের ৫ মার্চ পরিকল্পিত ভাবে তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠায়। কারাবাশ শেষে তিনি ওই অভিযোগে জানান, যে মানুষ বিয়ে বহিভূত অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত এবং সেটা ভাইরাল হয়ে শহরের সব মানুষের কাছে থাকে তিনি কিভাবে তার দায়িত্বে বহাল থাকেন। তিনি তাদের বিচার দাবী করেছেন। এছাড়া ওই সেবিকা অভিযোগ করেছেন কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের নিকটও। এ ছাড়া কলেজ শিক্ষিকার অবাধ যৌনাচারের বিচার দাবী করে কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজ গভঃনিং বডির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদন করেছে ঐ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।

এদিকে কলেজ শিক্ষিকার আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একজন চিকিৎসক ও শিক্ষিকার এ ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে নিন্দার ঝড় বইছে ।।অপরদিকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত শিক্ষিকাকে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বরখাস্ত অথবা বহিষ্কার না করায় কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নাটোর সিটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে কলেজের সমাজ কল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর উপযুক্ত বিচার দাবী করে আবেদন করেছে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।

এদিকে এ ঘটনার পর নাটোর সিটি কলেজের দুজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কোন শিক্ষক এমনটা করতে পারে তা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি না। কোথাও মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের এমন একজন সহকর্মী আছে এটা ভাবতেই আমরা লজ্জা পাচ্ছি। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সিটি কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাঃ লিপন এবং আমার মধ্যে চিকিৎসক রোগীর স¤পর্ক। আমি চিকিৎসার জন্য নিয়মিত তাঁর চেম্বারে যাতায়াত করতাম । একপর্যায়ে দুইজনের সম্মতিতে দৈহিক স¤পর্ক হয়েছে। তবে এ ভিডিও কীভাবে ফাঁস হলো তিনি তা জানেন না। আমি অভিযোগকারী নারীকে চিনি জানিনা।। তৃতীয় একটি পক্ষ আমার সুনামক্ষুন্ন করার জন্য এসব অভিযোগ করছে ।

অপরদিকে নাটোরে বসবাসকারী নাটোর সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ও বর্তমানে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপন, একাধিকবার মুঠোফোনে কল এবং এসএমএস দেওয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি । শহরে তাঁর চেম্বারে গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি।

এদিকে ডাঃ আমিনুল ইসলাম লিপনের ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ক্লিনিক মালিক জানান,, ঐ শিক্ষিকা ফেসবুক এবং ফোনে ডাঃ লিপনের সাথে ঘনিষ্ট স¤পর্ক তৈরী করে। এক পর্যায়ে সে নিজেই ঘনিষ্ট মূহর্তের ভিডিও ধারণ করে এবং স্থানীয় কিছু তরুণকে দিয়ে ভিডিওটি পাঠিয়ে চিকিৎসককে বø্যাকমেইল করতে থাকে। মোটা অংকের টাকা না দিলে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে মান ইজ্জতের কথা ভেবে চিকিৎসক টাকা দিয়ে বিষয়টি নি¯পত্তি করে। কিন্তু ততক্ষণে ভিডিওটি হাতে হাতে ছড়িয়ে পরে ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান বিষয়টি খুবই বিব্রতকর আখ্যায়িত করে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাজমুন নাহার সাথীর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ পাওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে মিটিং ডেকে শিক্ষিকার ব্যাপারে স্বিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।

অপর দিকে কলেজের গভঃর্নিং বডির সভাপতি ও নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ ডলার বলেছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান চরম ভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। তাদের অপকর্মের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি সমাজের জন্য চরম লজ্জাজনক বিষয়। শিক্ষকতা আদর্শিক পেশা। শিক্ষার্থী ও সমাজের মানুষ তাদের অনুসরণ করেন। একজন শিক্ষিকার এমন ভিডিও সমাজের অবক্ষয় ছাড়া কিছুই না।এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভা ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি । অভিযোগটি খতিয়েও দেখা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২৪১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares