বুধবার- ৩রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৯শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাজারহাটে খাদ্য গুদামে ধান ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন

রাজারহাটে খাদ্য গুদামে ধান ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : রাজারহাট উপজেলা খাদ্য গুদামে প্রকৃত কৃষকরা সরকারি মূল্যে ধান সরবরাহের সুবিধা বঞ্চিত হওয়ায় ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করতে না পারায় উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকদের। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার অনিয়ম তদন্তে কমিটি করেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

সরেজমিনে জানা গেছে,উপজেলার হরিশ্বর তালুক গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী জরিনা বেগমের সর্বমোট জমি ২০শতক। তার নাম উঠেছে উপজেলা খাদ্য অফিসের নির্বাচিত কৃষকের তালিকায়। ওই তালিকা অনুযায়ী তিনি ১২৮০টাকা মন দরে উপজেলা খাদ্য গুদামে ৩মেট্রিক টন ধান বিক্রি করতে পারবেন। তবে তিনি ধান চাষাবাদ করেছেন মাত্র ১৪মন ধান তাও তিনি বাজারে ৯৮০টাকা মন দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে খাদ্য গুদামে বিক্রির মতো তার ধান নেই। উপজেলা সদরের দেবিচরণ গ্রামের কৃষক সুলতান আলীর বসতভিটা সহ আবাদি জমি ৫০শতক। পুটিকাটা গ্রামের শামসুল হকের ৫০শতক,পাঠকপাড়া গ্রামের নুরবানুর জমি ২৫শতক,আষাঢ়ু গ্রামের হারান আলীর ২৫শতক,মনসুয়ার ৩৫শতক,ফরকেরহাট গ্রামের রুস্তম আলীর ৪০শতক,তালুয়াপাড়া  গ্রামের আব্দুর রহমানের ২৫শতক সহ তালিকায় স্থান পাওয়া ৪১৩জন কৃষকের মধ্যে ৩শতাধিক কৃষকের অধিকাংশরাই ১মেট্রিক টনের নিচে ধান উৎপাদন করেছেন। তাদের নাম সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহকারী কৃষকের তালিকায় আসলেও অল্প সংখ্যক নাম দেয়া হয়েছে মাঝারি ও বড় কৃষকের।

   সম্প্রতি ধান ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগে কৃষকরা রাজারহাট উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদের বিরুদ্ধে মানব বন্ধনের পর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। এছাড়া গত ঈদুল আযহায় দুস্থ-অসহায়দের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফে খাবার অনুপযোগী দুর্গন্ধযুক্ত নি¤œ মানের চাল বিতরণের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরআগে ফেয়ার প্রাইজ ও টিসিবি’তেও পঁচা চাল বিতরনের অভিযোগ উঠে। সর্বশেষ চাল গুদামে ঢুকাতে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেন সেলিম আহমেদ নামের ১জন তালিকাভ‚ক্ত খাদ্য ব্যবসায়ী।

   সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,রাজারহাট উপজেলায় ৩৮হাজার ৮৫৩জন কৃষক তালিকাভ‚ক্ত রয়েছেন। চলতি অর্থবছর খাদ্য গুদামে সরকারি মূল্যে ৩২টাকা কেজি দরে ১হাজার ২৪০মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেন খাদ্য অধিদপ্তর। এরপ্রেক্ষিতে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য অফিস লটারি দেখিয়ে ৭টি ইউনিয়নের প্রান্তিক,ছোট,বড় ও মাঝারি ৪১৩জন কৃষকের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিন মেট্রিক টন হিসেবে ধান সংগ্রহের তালিকা প্রনয়ন করেন। তবে তালিকায় স্থান পাওয়া ৪১৩জনের মধ্যে ৩শতাধিকই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক।

     তালুক আষাঢ়ু গ্রামের কৃষক আইনুল হক বলেন,অনিয়ম তান্ত্রিক তালিকা বাতিল করে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা না হলে প্রকৃতরা বঞ্চিত হবেন।

   কৃষক ইয়াকুব ও এনামুল হক বলেন,একজনের কাছ থেকে তিন মেট্রিক টন না নিয়ে এক মেট্রিক টন হিসেবে নেয়া হলে অনেক কৃষক সরকারি মূল্যে ধান সরবরাহের সুবিধা পেত।

  নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন,গত বছরও ২জন খাদ্য ব্যবসায়ির সাথে যোগসাজস করে ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা একই কৃষকের নামে ১০/১৫টি করে ধানের বিল করেছিলেন। কৃষকরা ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন।

      তবে ওই খাদ্য ব্যবসায়ির অভিযোগ সহ ধান ক্রয়ে অনিয়ম ও বিভিন্ন সময় পচা চাল বিতরনের অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ বলেন,নি¤œ মানের ও পুরোনো বস্তায় চাল আনায় ওই ব্যবসায়ির চাল নেয়া হয়নি।

   এবিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কাবির খান বলেন,তার বিরুদ্ধে অনিয়ম তদন্তে ৩সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

  কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন,কৃষকদের একটি অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছি।

বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS