শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্কটল্যান্ডে ১৮৯৫ সালে জুন মাসে নির্মাণ করা হয় ওভারটন ব্রিজ।

স্কটল্যান্ডে ১৮৯৫ সালে জুন মাসে নির্মাণ করা হয় ওভারটন ব্রিজ।

আন্তজাতিকঃ

ব্রিজটি নির্মাণ করার সময় থেকে আজ পর্যন্ত সেতুটি থেকে ৫০টি কুকুর লাফিয়ে পড়ে মারা গেলেও, ৬০০ কুকুর লাফিয়ে পড়েও বেঁচে যায়।১৯৫০ সাল থেকে সেতুটিকে ‘মৃত্যুর সেতু’ বলা হয়।

স্কটল্যান্ডে ১৮৯৫ সালে জুন মাসে নির্মাণ করা হয় ওভারটন ব্রিজ। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এই ব্রিজটি ডগ সুইসাইডাল ব্রিজ নামেই পরিচিত। নদী থেকে ব্রিজটি ৫০ ফুট উঁচুতে। জানা যায়, ব্রিজটির ডান দিকের এক স্থান থেকেই লাফ দেয় কুকুরগুলো। এই সেতুর নিচেই আছে পাথুরে এক নদী। যা অধিকাংশ সময়ই শুষ্ক থাকে। আর এই পাথরের উপর পড়েই কুকুরগুলো মারা যায়।

৫০টি কুকুর লাফিয়ে পড়ে মারা গেলেও আজ পর্যন্ত ৬০০ কুকুর লাফিয়ে পড়েও বেঁচে যায়। তবে বেঁচে যাওয়া কুকুরগুলো সুযোগ পেলে দ্বিতীয়বারের জন্যও লাফিয়ে পড়েছিল বা লাফ দেয়ার চেষ্টা করেছিল।

জানা যায়, ৩ বছর বয়সের কুকুর ক্যাসিকে নিয়ে, তার মালিক অ্যালিস ট্রিভরো ও তার ছেলে থমাস সেতুটির উপর গিয়েছিলেন। সেতুর উপর গাড়ির দরজা খোলা মাত্রই হঠাৎ ক্যাসি সেখান থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যায়। থমাস নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু বিন্দু বিন্দু কিছুর উপস্থিতি বুঝতে পারেন। তবে কীভাবে কুকুরটি বেঁচে যায় তা অ্যালিস ও থমাস কেউই জানতে পারেন নি।

এই ভয়াবহ লাফানোর কিছু নির্দিষ্ট ধরণ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুকুরগুলো লাফিয়ে অমসৃণ পাথরের উপর পড়ে ও তাদের সলিল সমাধি ঘটে। আবার সব ধরনের কুকুরের মাঝে লাফিয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা যায় না। সাধারণত লম্বা নাকের অধিকারী জাতের কুকুরগুলোই লাফ দেয়। এই কুকুরগুলোর ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রবল। এছাড়াও সবগুলো ঘটনা সেতুটির ডানপাশের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে ঘটে। আর ঘটনার দিনটি হয় রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।

ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে কেভিন নামের এক লোক নিজের বাচ্চাকে খ্রিস্টানবিরোধী ও শয়তান দাবি করে সেতুর নিচে ফেলে দিয়েছিল। এ ঘটনার কিছুদিন পরেই সে নিজেও একই সেতু থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেকে তাই মনে করেন, ব্রিজটিতে আছে অশুভ কোনো শক্তির প্রভাব।

তবে ড. স্যান্ড নামক প্রাণী আচরণের গবেষক বলেন, ব্রিজের দুই পাশেই রয়েছে পাথরের তৈরি মাঝারি উচ্চতার দেয়াল। কুকুরগুলো তাই বুঝতেই পারে না সেতুর নিচে কী আছে? আর এই বিভ্রান্তি থেকেই তারা লাফ দেয়।

স্যান্ডসহ অন্য গবেষকরা মনে করেন, ঝাঁপ দেওয়ার এই প্রবণতাটি আসলে আত্মহত্যার ইচ্ছা নয়। ব্রিজটির আশপাশেই ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মিঙ্ক (বেঁজিজাতীয় প্রাণী) ও ইঁদুর।

রৌদ্রজ্জ্বল দিনে বাতাসে এসব প্রাণীর গন্ধ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ছড়িয়ে যায়। কুকুরগুলো মিঙ্কের আর্কষণেই সেতুর দেওয়ালে চড়ে। তারপর এর উচ্চতা কত তা বোঝার আগেই ঝাঁপ দেয়। তবে নির্দিষ্ট সেতুটির এক স্থান থেকেই কেন কুকুরগুলো লাফ দেয় তার কোনো যুক্তি নেই তাদের কাছেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ব্রিজে ওঠার পরেই কুকুরগুলো অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে। তারা যেকোনো উপায়েই ব্রিজ থেকে লাফ দিতে চায়। কুকুরদের এই অস্বাভাবিক আচরণকে শেষ পর্যন্ত প্যারানরমাল লাইনে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন স্থানীয় মানুষ।

ওভারটন সেতু এলাকাটা যে স্টেটের অধীনে, ওই স্টেটের একসময়কার মালিক জন হোয়াইটের বিধাবা স্ত্রীর প্রেতাত্মাকে নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের গল্প-গাঁথা এই অঞ্চলে। স্থানীয়দের মতে, শ্বেতবসনা ওই নারীর আত্মাই কুকুরগুলোকে আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করে। তবে প্রাণী গবেষকরা এটা মানতে নারাজ।

প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধ নিয়ে কাজ করা স্কটিশ সোসাইটি কুকুরের অদ্ভুত এই আচরণটির কারণ খুঁজে বের করতে ওভারটনে এ পর্যন্ত অনেক গবেষককেই পাঠিয়েছে। তবে প্রকৃত কারণটি আজও অজানাই রয়ে গেছে।

বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS