শুক্রবার- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগ

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগ

ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের মাঝে দিন দিন বাড়ছে চরম তিক্ততা। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পৃথক দু’টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দলের কমিটি, তদ্বির বাণিজ্য ও পদ-পদবির নামে আর্থিক দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরে গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) কার্যকরী কমিটির নামে দলটির বিদ্রোহী সদস্যরা জরুরি সভার আয়োজন করেন। পরদিন রবিবার (১৪ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করেন। প্রায় দু সপ্তাহ আগে বর্ধিত সভা ঘোষণা দেওয়া হলে খবর পেয়ে বিদ্রোহী সদস্যরা তড়িঘড়ি করে শনিবার জরুরি সভার ডাক দেন। এ সভায় দলের কমিটি, তদ্বির বাণিজ্য ও পদ-পদবি নামে আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িত নেতাদের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে নতুন কমিটি গঠনের আহবান জানান।
নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে একটি রেস্তোরাঁর পার্টি হলে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের দাবিদার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ রেখে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের দাবিদার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্যে নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নয়া কমিটির অনুমোদনের প্রত্যাশা করছেন দলের নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, বিদায়ী কমিটির সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের অন্যায়, মিথ্যাচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই জরুরি সভা আয়োজন করা হয়েছে। এ সভা হচ্ছে কমিটির নামে এবং কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির নামে বাণিজ্য করার প্রতিবাদ সভা। আমাদের হাই কমান্ডের দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন লাগাতারভাবে মিথ্যাচার করছেন সিদ্দিক। এখনও পদ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।এ সময় কার্যকরী কমিটির শতকরা ৯৫ জন সদস্যদের সম্মতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান স্বৈরাচারী কায়দায় গত ১৩ বছর দল চালিয়েছেন। তিনি গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করেন না। অনবরত মিথ্যাচার তার হাতিয়ার। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ভেঙ্গে বিলীন করেছেন। তার স্ত্রীসহ মাত্র হাতে গোনা ৫/৭ জন লোক তার সাথে আছে। এমতাবস্থায় তিনি বর্ধিত সভার নামে শূন্যপদ পূরণের জন্যে আবার সভা আহবান করেছেন। কার্যকরী কমিটির মেজরিটি সদস্যের অনুমোদন ছাড়া কমিটিতে কোন পদ পূরণের কোন ক্ষমতা গঠনতন্ত্র তাকে দেয়নি। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এম ফজলুর রহমান বলেন, অতীতেও তার এরকম পদ-বাণিজ্য বৈধতা পায়নি, এবারও পাবে না। আসুন সম্মিলিতভাবে কমিটির ৯৫ জন সদস্যদের মতামত নিয়ে আমরা একটি রেজ্যুলেশন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ করি এবং সম্মেলনের মাধ্যমে একটি নতুন কমিটির দাবি জানাই।
ফজলুর রহমান বলেন, আমরা আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আমাদের দাবি রেজ্যূলেশন আকারে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ করবো যাতে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটা নতুন কমিটি হয়। যাকেই নেত্রী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করেন তা আমরা মেনে নেব এবং একসাথে কাজ করবো। তিনি বলেন, অনেকে আজ এ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি ঈদ পরবর্তী পারিবারিক প্রোগ্রাম ও পহেলা বৈশাখের কারণে কিন্তু সকলেই টেলিফোনের মাধ্যমে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, উপদেষ্টা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ নাথ, কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক ফরিদ আলম, মানবাধিকার সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, কায়কোবাদ খান, কার্যকরী সদস্য আসাফ মাসূক, যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, স্টেট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ আতিক, আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন, শেখ হাসিনা মঞ্চের সভাপতি জালাল উদ্দিন জলিল, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুমানা আখতার, ছাত্রলীগ নেতা শেখ মো. জুয়েল, যুবলীগ নেতা খন্দকার জাহিদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা মো. জাহিদ মিয়া প্রমুখ।
এদিকে, ১৪ এপ্রিল রোববার এস্টোরিয়ার হ্যালো বাংলাদেশ রেস্তোরাঁয় বর্ধিত সভার আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের পরিচালনায় উক্ত সভায় যুক্তরাষ্ট্র সভাপতি ড. সিদ্দীকুর রহমান বর্ধিত সভার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। বর্তমান কমিটির যেসব শূন্য পদ রয়েছে তা পুরনের জন্য উপস্থিত সদস্যদের কাছ থেকে আগ্রহী পদপ্রার্থীর নাম সংগ্রহ করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংবিধানে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নামে কোন পদ পদবি নাই অথচ এম ফজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করে আসছে। তিনি ও সহযোগীরা গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের কোন সভায় উপস্থিত হননি। সংবিধানের নিয়মানুসারে তাদের সদস্যপদ তো এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। তারা আবার কীভাবে জরুরি সভা আহবান করেন। বিষয়টি খুবই হাস্যকর। সভায় উপস্থিত সকলে আওয়ামীলীগের প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন করেন। সভায় উপস্থিত সকলে আওয়ামীলীগের প্রাথমিক সদস্য পদ নবায়ন করেন।
সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র ৫ জন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বারবার তথাকথিত কার্যকরী কমিটির সভা ডেকে দলের সাংগঠনিক নিয়ম ভঙ্গ করে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে চলেছেন। সোস্যাল মিডিয়া ও পত্রিকায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড নিয়ে দু’একজন ঢাকা থেকে এসে মিথ্যাচার করে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে চলেছেন। এদের মিথ্যাচারে একেবারেই কর্ণপাত করবেন না। আসুন সবাই মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য স্মার্ট যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করি।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডাঃ মাসুদুল হাসান, সহ সভাপতি শামসুদ্দীন আজাদ, সহ সভাপতি লুৎফুল করিম, প্রবাসী কল্যান সম্পাদক সোলায়মান আলী, শাহানারা রহমান, আব্দুল মালেক, রব্বানী চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপিকা শাহনাজ মমতাজ, নিউ ইয়র্ক স্ট্রেট আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাহীন আজমল, সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ভূইয়া, দপ্তর সম্পাদক ফাহিম, নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুর রহমান, সাধারন সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, সহ সভাতি মাসুদ সিরাজী, সহ সভাপতি এম আলমগীর, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক দুলাল বিল্লাহ, প্রচার সম্পাদক শেখ শফিকুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি দুরুদ মিয়া রনেল, সাখাওয়াত হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ নেতা সিবুল মিয়া, রেজা আব্দুল্লাহ, রহিমুজ্জামান সুমন, এছাড়া ও নিউজার্সী আওয়ামীলীগ, প্যাটারসন আওয়ামীলীগ, পেনসিলভেনিয়া আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ নেতৃবৃন্দরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

২৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares