বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কুড়িগ্রামে আন্দোলনের মাঠে নেই জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলে ক্ষোভ

কুড়িগ্রামে আন্দোলনের মাঠে নেই জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলে ক্ষোভ

সাইয়েদ বাবুু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি -বিএনপির এক দফা দাবিতে চলমান হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে দেখা যায়নি কুড়িগ্রাম জেলার শীর্ষ নেতাদের। ফলে কর্মসূচিগুলোতে কর্মীদের উপস্থিতিও ছিল হাতে গোনা। গ্রুপিংয়ের কারণে সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী না হওয়ায় আন্দোলনে এমন দৈন্যদশা বলে মনে করছেন দলটির কর্মী-সমর্থকেরা।

তৃণমূলের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিতে শোডাউনসহ দৌড়ঝাপের কোনো কমতি রাখেন না নেতারা। এমনকি পদ পাওয়ার জন্য অর্থ খরচ করেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর কাড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই নেতারাই দলীয় কর্মসূচি পালন না করে এখন আত্মগোপনে।

এ বিষয়ে আত্মগোপনে থাকা জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক, সাইফুর রহমান রানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচিতে বিএনপির হাইকমান্ড সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করার জন্য নির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবন্ধ হওয়ারও নির্দেশনা দেয়। কিন্তু কুড়িগ্রামে কর্মসূচিতে কড়া নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন হয়নি বলে মনে করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

তৃণমূলের নেতা কর্মীরা জানান, হরতাল-অবরোধের শুরু থেকে কুড়িগ্রামের কৃতি সন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও দেড় শতাধিক মামলার আসামী হয়ে রাজধানী সহ সারাদেশে রাজপথে পিকেটিং ও আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। একজন কেন্দ্রীয় নেতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে চোষে বেরালেও কুড়িগ্রামের শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা না থাকলেও তারা চলে গেছেন আত্মগোপনে। দলের দুঃসময়ে নেতৃদ্বদানে তাদের এমন ভূমিকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দারুণভাবে নিরুৎসাহিত করছে।

অপরদিকে, প্রথম থেকে চতুর্থ দফার হরতাল- অবরোধে বিভিন্ন কৌশলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন কুড়িগ্রামের যুবদল, কৃষকদল, মৎস্যজীবি দল এবং কুড়িগ্রাম পৌর বিএনপি।

বিএনপির এসব অঙ্গ ও সহযোগী দলের নেতা-কর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে প্রভাতে এবং রাতের বেলা ঝটিকা মিছিল করে আন্দোলন-সংগ্রামে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও ক্ষমতাসীন দলের একতরফা ১৪ ও ১৮ সালের মত নির্বাচন প্রতিহতের জানান দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব, রিপন রহমান বলেন আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর নির্দেশ এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এর নির্দেশনায় রাজপথে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যুবদল নেতা ফারুক, হেলাল, মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক শামীম আহমেদ,সদস্য সচিব, মহুবর রহমান সহ তৃণমূলের অনেক নেতা কর্মী এই প্রতিবেদকের কাছে এসব অভিযোগ করেন, তারা বলেন দলের দুঃসময়ে জেলা নেতাদের আত্মগোপনে থাকা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। রাজপথে বিএনপির অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার আবারো ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো পাঁতানো নির্বাচন করার সুযোগ পাবে। এটা কোনভাবে আমরা হতে দিব না। জেলা নেতাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আসুন একসাথে আন্দোলন করি। বিজয় আমাদের কাছাকাছি। মরলে একসাথে মরবো আর বাঁচলে একসাথে বাঁচবো।

কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবু দারদা হেলাল বলেন, গ্রুপিংয়ের কারণে আন্দোলনে আজ এই দৈন্যদশা। জেলা নেতারা আত্মগোপনে থাকায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে আছেন।

কুড়িগ্রাম পৌর বিএনপির অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী আহম্মেদ লিপন বলেন, ‘আমরা ঝুঁকি জেনেও তৃণমুলের কর্মীরা মাঠে আছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় জেলা নেতারা আত্মগোপনে।

কুড়িগ্রাম জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রামে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের নিঃস্বার্থে আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আশরাফ আলী বলেন কুড়িগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির নেতা কর্মীদের আইনি সহায়তায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস্) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে এ পর্যন্ত ৪টি মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি-জামায়াতের ২২জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের যেনকোন নাশকতা রুখতে পুলিশ-বিজিবি এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ টহল দল সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

১৫৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares