শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্যালাইন সংকট, ফার্মেসীতে মিলছে না স্যালাইন

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্যালাইন সংকট, ফার্মেসীতে মিলছে না স্যালাইন

মোঃ বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামে দেখা দিয়েছে স্যালাইন সংকট। প্রায় ৬ মাস থেকে সদর হসপিটালে চাহিদার তুলনায় ২০ শতাংশও পাচ্ছে না হসপিটালটি। ফলে ২৫০ সজ্জার কুড়িগ্রাম সদর হসপিটালে চিকিৎসা সেবা হচ্ছে ব্যাহত।

গতকাল দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর হসপিটালে গেলে দেখা যায় স্যালাইন সংকটে ভুগছেন হসপিটালে কর্তৃপক্ষ। হসপিটালে কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয় ২০০ জন।
প্রতিদিন গড়ে স্যালাইন ব্যবহার হয় কমপক্ষে ২০০ টি। কর্তব্যরত নার্স  আঁখি তারা বলেন, স্যালাইন সংকট এত বেশি আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। প্রতিদিন রোগীরা স্যালাইন না পেয়ে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। তাদের বাহিরে থেকে আনতে বল্লেও তারা বলে বাহিরে কোথাও এই স্যালাইন নেই।

হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী বলেন,প্রায় প্রতিটি রোগীর স্যালাইন প্রয়োজন হয়।  গতকাল হসপিটালে রোগী ভর্তি  ৫ শত ৮ জন।
এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) সরকারি হাসপাতালে এসব স্যালাইন সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চাহিদা অনুযায়ী তারা স্যালাইন দিচ্ছে না। ফলে হাসপাতালে স্যালাইনের তীব্র সংকটে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ঠিক কি কারণে এমন সংকট সেটার ব্যাখ্যা নেই।

দুইদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আজাদ। শারীরিক দুর্বলতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পরে গিয়ে তার মাথা ফেটে যায়। ছাত্রাবাসে থাকা সহশিক্ষার্থীরা তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসক স্যালাইন লিখে দিলেও হাসপাতালে সরবরাহ না থাকায় বাইরে থেকে কিনতে বলা হয়। সাথে থাকা শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা ও আশিকুর গোটা শহর ঘুরে হার্টম্যান নামক ইঞ্জেক্টেবল স্যালাইন খুঁজে পাননি।
হতাশ হয়ে ফিরে পরিচিত এক নার্সের দ্বারস্থ হন নাজমুল। পরে ওই নার্সের সহযোগীতায় হাসপাতালের সামনের একটি ফার্মিসিতে স্যালাইন মেলে। শঙ্কামুক্ত হন আহত আজাদ, স্বস্তি ফিরে পান তার সহশিক্ষার্থীরা।
শুধু আজাদ নন, প্রতিদিন এমন দুর্ভোগে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কুড়িগ্রামের শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা। স্যালাইনের খোঁজে গোটা শহরের বিভিন্ন ফার্মিসিতে চষে বেড়ালেও কাক্সিক্ষত স্যালাইন মিলছে না। যারা পাচ্ছেন তাদেরকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
নাগেশ্বরী থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে আসা লুৎফর রহমান বলেন, ‘তিনদিন ধরে হাসপাতালে। কিন্তু এখান থেকে কোনও স্যালাইন সরবরাহ করা হয়নি। শহরের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে খুঁজে একটি দোকানে ডিএ স্যালাইন পেয়েছি। তাও বেশি দামে কিনতে হয়েছে।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারিভাবে চাহিদামতো হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জীবনরক্ষাকারী এই পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসা সেবার শুরুতেই বেশিরভাগ রোগীকে ধরণ অনুযায়ী স্যালাইন পুশ করা হয়। এর মধ্যে ডিএনএস (ডেক্সট্রোজ + সোডিয়াম ক্লোরাইড) , ডিএ  (ডেক্সট্রোজ অ্যাকোয়া) , হার্টম্যান সলিউশন, নরমাল স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইন উল্লেখযোগ্য। কলেরা স্যালাইনের তেমন সংকট না থাকলেও অন্য স্যালাইনগুলোর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই সংকট চলছে। রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন আনতে বললে তারা ফার্মিসিতে স্যালাইন পাচ্ছেন না। হাসপাতালের সিলিপ দেখলেই ফার্মিসি থেকে স্যালাইন নাই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে ফার্মিসিগুলো ক্লিনিকগুলোতে অপারেশসের রোগীদের জন্য প্যাকেজ আকারে স্যালাইন সরবরাহ করে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহীনুর রহমান সরদার বলেন, ‘স্যালাইনের সংকট চলছে। আমরা হিমশিম খাচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা চাহিদা পাঠাই। কিন্তু খুবই নগণ্য পরিমাণ সরবরাহ দেওয়া হয়। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সংকট কেটে যাবে।’

ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, অপসো, ওরিয়ন, লিবরা ও পপুলার নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জেক্টেবল স্যালাইন সরবরাহ করে। কিন্তু গত তিন মাস ধরে তারা চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন দিচ্ছে না। ফলে ফার্মেসিগুলোতেও এসব স্যালাইনের সংকট চলছে।

শহরের হাসপাতাল মোড়ের ওষুধ ব্যবসায়ী লাতুল বলেন, ‘সাপ্লাই নাই। কোম্পানি স্যালাইন না দিলে আমরা কী করবো! তারা (কোম্পানির প্রতিনিধিরা) বলে যে, ডলার নাই। কাঁচামাল কিনতে না পারায় স্যালাইন উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। যে দু-চারটা স্যালাইন দেয় তা একঘণ্টাও দোকানে থাকে না। দিনভর রোগীর স্বজনরা দোকানে এসে ফেরত যান।’

সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, ‘স্যালাইন সংকট চলছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য আমরা কিছু স্যালাইন রেখেছি। বিভিন্ন মাধ্যম ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি যে, প্রায় জেলাতে এ সংকট চলছে। সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’

৫৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares