শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে সংখ্যালঘু দুই ভাইকে বেঁধে পেটালো সেই ভূমিদস্যু মাহফুজ বাহিনী 

তানোরে সংখ্যালঘু দুই ভাইকে বেঁধে পেটালো সেই ভূমিদস্যু মাহফুজ বাহিনী 

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে বাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের জের ধরে বাড়ি থেকে তুলে এনে সংখ্যালঘু দুই ভাইকে বেঁধে বেধড়ক পেটালো সেই ভূমিদস্যু  মাহফুজ গংরা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। গত রবিবার সন্ধ্যার পরে মডেল পাইলট স্কুল মাঠে ঘটে মারপিটের ঘটনাটি। ফলে একের পর এক ভূমি দখল মারপিট করেই চলেছেন মাহফুজ। এতে করে সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা চরম আতংকে দিন পার করছেন। এমনকি মাহফুজ গংয়ের ভয়ে বাড়ি থেকেও বের হতে পারছেন না বলেও দাবি মার খাওয়া অচিন্ত তার ছোট ভাই বাদলের। তাদের বাড়ি পৌর সদর হিন্দুপাড়াগ্রামে। তারা মৃত স্বপনের পুত্র।
অচিন্ত জানান, আমাদের বাপ দাদারা এবাড়িতে বসবাস করত। কিন্তু সম্প্রতি ধানতৈড় গ্রামের জালালের বখাটে ভূমিদস্যু কিশোর গ্যাং লিডার মাহফুজ দাবি করে বলছে বাড়ির ১৯ শতক জায়গা আমি কিনেছি। কিন্তু আমার মৃত পিতা সরকারের সাথে জায়গা বিনিময় করেন। যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসলেও এখন কেন এমন দাবি বুঝতে পারছিনা। তার কাছ থেকে জায়গা না কিনে নিলে আমাদের গুম করে ফেলবে। গত মাসে রাতের আধারে মহিলাসহ মাদক সেবিদের এনে বাড়ির মিটার ভাংচুর করে মহিলাদের মারধর ও গালিগালাজ করেন। মাহফুজের সাথে বাধ্য করেন বায়নামা করতে শফিকুল ও ফকির। গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে ঠাকুরপুকুর গ্রামের ফারুক আমাদেরকে বলে শফিকুল ও মাহফুজ ডাকছে। আমাকে ও আমার ভাই বাদলকে ডাকেন লেবার সরদার শফিকুলের চেম্বারে। সেখানে আসামাত্রই আমাদের টেনে হিচড়ে স্কুল মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে তালগাছের সাথে বেঁধে আমাকে পেটায় মাহফুজ ও ভাই বাদলকে পেটায় লিটন নামের আরেক জন। কি কারনে পেটাল জানতে চাইলে তিনি জানান কয়েক সপ্তাহ আগে কিছু টাকা দিয়ে বায়নামা করা ছিল এবং গত বুধবারে আরো কিছু টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে না পারার কারনে মার খেতে হল। শফিকুল লেবার সরদার তার হাতে অনেক লোকজন আছে, আর ফকির অপহরন মামলার আসামী ও দাঙ্গাবাজ। জায়গা না কিনলে আমাদের রক্ষা নাই।
তার বয়োজ্যেষ্ঠ প্রতিবন্ধী মা  মিরাদাস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন টি আগে পৌর ভবন ছিল। সেই জায়গা আমাদের ছিল। আমাদের সাথে সরকার বিনিময় করেন। কিন্তু আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর কাগজপত্র গুলো পাচ্ছিনা। আমার দুই ছেলে অন্যের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ছেলেরা যখন বাড়িতে থাকেনা ও রাতে মাদক সেবন করে মাহফুজের লোকজন এসে গালমন্দ করে নানান ভাবে হুমকি দেয়। অবশেষে বাধ্য হয়ে ৬ লাখ টাকায় জায়গা কিনতে হল। সঠিক সময়ে টাকা না দেয়ার কারনে আমার দুই ছেলেকে প্রচুর ভাবে মেরেছে। সন্তানের মার খাওয়া কোন মা সহ্য করতে পারবে না। সবকিছু করছে ঠাকুর পুকুর গ্রামের লেবার সরদার শফিকুল ও ফারুক। তাদের ভয়ে কেউ কথা পর্যন্ত বলতে পারেনা। ঋন মহাজন সোনা দানা বিক্রি করে জায়গার জন্য ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা আগামী বুধবারে না দিতে পারলে টাকাও পাবনা জায়গাও পাবনা বলে সাব জানিয়ে দিয়েছে। এসব চিন্তায় কয়েকদিন ধরে সবার খাওয়া দাওয়া বন্ধ এবং ছেলেদের শরির ব্যাথায় কাতর, তারপরও পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে। গত জুলাই মাসের ১৭ তারিখে হামলা ভাংচুর করলে থানায় অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোন প্রতিকার পায়নি। তাহলে আর কার কাছে যাব। এই চিন্তায় মারাই যাব না কি ভগবান জানে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সবাই এক সাথে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করি। কিন্তু সেটাও পারছিনা। বেঁচে থাকলে আগামী বুধবার পুরো ৬ লাখ টাকা দিতে হবে নইলে বাড়ি ছাড়তে হবে। মারপিটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন কি জানতে চাইলে তিনি জানান, অভিযোগ গত মাসের দিয়েছিলাম কোন কাজ হয়নি। এজন্য দেয়া হয়নি।
ঠাকুরপুকুর গ্রামের রাজমিস্ত্রির লেবার সরদার শফিকুল মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি তাদের আমার চেম্বারে ডেকে ফায়সালা করেছি। আপনি ফকিরের মাধ্যমে ডেকেছেন প্রশ্ন করা হলে অস্বীকার করেন।
পুনরায় অচিন্তকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন শফিকুল নাটের গুরু। সে ডেকেছিল বলেই গিয়েছিলাম।
ফকির জানান, আমি কিছুই জানিনা পরে শুনেছি।
ভূমিগ্রাসী গ্যাং লিডার মাহফুজের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মারপিটের বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না, শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম বলে এড়িয়ে যান।
তানোর মৌজার আরএস ১২ নম্বর খতিয়ানে আরএস  ১৬০২ ও ১৬০৩ দাগে বাড়ি ও ভিটা মিলে ৫৮ শতক জমি রয়েছে। শ্রীমতি মিরা রানী দাস পিতার ওয়ারিস সুত্রে প্রাপ্ত হন। যার জিআর নম্বর ৭৩/২০০৬ ইং সাল।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম জানান, মারপিটের ঘটনায় কোন অভিযোগ হয়নি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৫৫ বার ভিউ হয়েছে
0Shares