মঙ্গলবার- ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কুড়িগ্রামে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে ধরলা সেতু

কুড়িগ্রামে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে ধরলা সেতু

এসএবাবু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি, ; সম্ভাবনার দুযার খুলেছে কুড়িগ্রামের ধরলা সেতু। নদী পারাপারের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সচল করেছে পিছিয়ে পড়া জেলা কুড়িগ্রামের অর্থনীতির চাকা।

মঙ্গাপীড়িত জনপদ কুড়িগ্রামের মানুষের কৃষি ও যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য ১৯৮১ সালের ১৫ ই জানুয়ারী তৎকালীন রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ধরলা ব্যারেজ এর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন। সরকার বদলের ফলে পরবর্তী সরকার ব্যারেজ প্রকল্প বাতিল করেন। শতাব্দিকালের এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল ব্যারেজ না হোক অন্তত ধরলা নদীর উপর একটি সেতুর। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এই এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ধরলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্র“তি দেন এবং ২০০০ সালে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শতকোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ৪ বছর নির্মাণ কাজ শেষে ৬৪৮ মিটার দৈঘের্যর সেতুটি ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতার পালাবদল হলে ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চলাচলের জন্য এই সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন।

এতে জেলা শহরের সাথে উত্তর ধরলার তিন উপজেলা নাগেশ্বরী, ভূর“ঙ্গামারী এবং ফুলবাড়ীর প্রায় ১১ লাখ মানুষের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়। এতে এই এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে শুর“ করে , উত্তরের এই তিন উপজেলার ধান, পাট, গম এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্য রপ্তানিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।

জেলার ৫টি উপজেলা জুড়ে রয়েছে ভারতের বিস্তৃত সীমান্ত। এসব সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় গর“ ধরলা সেতু দিয়ে প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে এবং দেশের সিংহভাগ আমিষের চাহিদা পূরণ করছে।

সেতুটি নির্মাণের কারণে ৬৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে। এতে সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার টেকসই, নিরাপদ ও সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রফতানিও বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানিকৃত কয়লা এবং পাথর ধরলা সেতু পার হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মাণ কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ধরলা সেতুর কারণে বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালুর ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকার। ইমিগ্রেশন চালু হলে এ বন্দর ব্যবহার করে ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, হিমাচল ও অর“ণাচল রাজ্যের সঙ্গে সড়ক পথে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

অপরদিকে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে কুড়িগ্রামের ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে প্রায় ২২ একর জমির ওপর শেখ রাসেল শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বিভিন্ন জাতীয় দিবস এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সেতুর দুই প্রান্তে উপচে পড়ে মানুষের ভিড় জমে। জেলায় কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় ধরলা সেতুটি এখন কুড়িগ্রামের মানুষের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রেরও চাহিদা পূরণ করছে।

সেতুটি কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার সাথে রাজধানী ঢাকা, রংপুর ও কুড়িগ্রামের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমিয়ে এনেছে। সেতুটি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি ও ভূর“ঙ্গামারী উপজেলার ৩০টিইউনিয়নের প্রায় ১১ লাখ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে। বেড়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান।এব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম ২ আসনের সংসদ সদস্য ও কুড়িগ্রাম জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি, মোঃ পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন এই সেতুটি নির্মানের ফলে অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত কুড়িগ্রাম জেলার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে মংগা এলাকা হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার বদনাম থেকে কুড়িগ্রাম বাসী রক্ষা পেয়েছে, এবং এই জেলা সারাদেশের উন্নয়নের রোড ম্যাপে যুক্ত হতে পেরেছে ।জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ জাফর আলী, বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম জেলাকে বিশেষ গুর“ত্ব দিয়ে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষে ধরলা সেতু , কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ট্রেন যোগাযোগ এর জন্য কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস,স্বাস্থ সেবার জন্য কুড়িগ্রাম হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করা সহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করছেন। আমি এমপি থাকার সময় মহান জাতীয় সংসদে কুড়িগ্রামের উন্নয়নের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি, যার ফলস্বরূপ আজকে কুড়িগ্রামের ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, এজন্য কুড়িগ্রাম বাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে ধন্যবাদ জানাই। কুড়িগ্রামে জন্ম গ্রহণকারী বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)এর সাবেক চেয়ারম্যান, এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ১৫ই জানুয়ারি ৮১ সালে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং কৃষি বিপ্লবের লক্ষে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর উপর ব্যারেজ নির্মান করতে তৎকালীন রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ধরলা ব্যারেজ এর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন, কিন্তুু সরকার পরিবর্তন হলে ব্যারেজ প্রকল্পটি বাতিল করেদেন তৎকালীন সরকার , যা দুঃখজনক, আমি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা কালিন সময় যাত্রাপুর – মোগলবাসা ইউনিয়নে ব্যাংকের শাখা চালু করা সহ সাধ্যমত এখানকার মানুষের উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি, ইনশাআল্লাহ্ আগামীতে সুযোগ পেলে কুড়িগ্রামের উন্নয়ন করতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করব,তারপরেও বলব ধরলা সেতু হওয়ায় মানুষের মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে । কুড়িগ্রাম চেম্বার সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া, বলেন ধরলা সেতু হওয়ায় ব্যাবসা বাণিজ্যে কুড়িগ্রামের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ সহজ হওয়ায় প্রভাব পরেছে, তাই সারাদেশে কুড়িগ্রামের কৃষি পন্য রপ্তানি বেড়েছে।

২৪৬ বার ভিউ হয়েছে
0Shares