বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিদ্যালয় মাঠে নিয়মিত বসছে গরু-ছাগলের হাট ব্যবস্থা নেয়নি মাউশি

বিদ্যালয় মাঠে নিয়মিত বসছে গরু-ছাগলের হাট ব্যবস্থা নেয়নি মাউশি

সাইয়েদ বাবু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি-: কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও পাঠদানে বিঘ্নিত হওয়া উপেক্ষা করে স্কুল মাঠে নিয়মিত গরু ছাগলের হাট বসানো হচ্ছে। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খোদ হাট ইজারাদার। স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতি নিয়ে প্রধান শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইজারাদারের যোগসাজসে স্কুল মাঠে নিয়মিত পশুর হাট বসানো হচ্ছে। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেও কোনও ফল মেলেনি।

এর আগে ২০২০ সালে স্কুল মাঠে হাট বসানো ও কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ২০০৪ সালের ৫ নম্বর আইন (দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। ২০২০ সালে পাঠানো ওই প্রতিবেদন গত চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ‘রহস্যজনক’ কারণে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি মাউশি কিংবা মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার দুর্গাপুর হাট বসে। এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর ১ টা থেকে বিক্রির জন্য স্কুল মাঠে গরু-ছাগল জড়ো করা হয়। ক্লাশ চলা অবস্থায় বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলে পশুর হাট। হাটে আসা লোকজনে কোলাহল, গুর ছাগলের চিৎকার আর মল-মূত্রের গন্ধের মধ্যেই প্রায় ৩ ঘন্টা ক্লাশে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা। এমন সমস্যার মধ্যে শ্রেণি পাঠে মনোযোগ বিঘ্নিত হলেও প্রধান শিক্ষকের ভয়ে কোনও শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পান না।

মঙ্গলবার দুপুরে হাট চলাকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে গরু ছাগলের বেচাকেনা চলছে। মাঠের উত্তর প্রান্তে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে কাঠের আসবাবপত্রের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। কোলাহলে শ্রেণি পাঠ বিঘ্নিত ঘটায় বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। এসময় কথা হয় নবম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। ক্লাশ চলাকালে মাঠে গরু ছাগলের হাট বসায় সমস্যা প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানায়। নাম প্রকাশ না করার আশ্বাস দিলে তারা বলে, আমাদের সমস্যা হয়। মাঠে কোলাহল। আমরা ক্লাশে মনোযোগ দিতে পারি না। গরু ছাগলের মল মূত্রের গন্ধ নাকে নিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু কিছু বলার সাহস পায় না। অনেকদিন ধরে মাঠে এভাবে হাট হয়ে আসছে। হাটের দিন আমরা খেলাধূলা করা সুযোগও পাই না। এটা বন্ধ করা দরকার। কিন্তু হেড স্যারের ভয়ে কেউ কিছু বলে না।

শিক্ষার্থীরা আরও বলে, মাঠে পশুর হাট নিয়ে আমরা কিছু বললে হেড স্যার আমাদের বলে যে মাঠ পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু গোবর পরিষ্কার করলেও গরু ছাগলের মূত্রের গন্ধ স্কুল জুড়ে থেকে যায়। এর কোনও সমাধান নেই?

একাধিক সহকারী শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইজারাদার নিজেই স্কুল কমিটির সভাপতি। প্রধান শিক্ষক মাঠে হাট বসানোর সম্মতি দিয়েছেন। অভিভাবক ও স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও তারা কর্ণপাত করেন না। প্রধান শিক্ষক অনেকটাই বেপরোয়া। ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনও ফল পাওয়া যায় না।

স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সম্প্রতি উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আমি ১ ফেব্রুয়ারি ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। স্কুল মাঠ থেকে পশুর হাট অন্যত্র স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু এরপরও স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানো অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারকে ফোন দিলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে। স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও হাট ইজারাদার খাইরুল ইসলাম বাবলু বলেন, কয়েকযুগ ধরে এই মাঠে হাট বসছে। হাট ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। আমি সভাপতি হওয়ার পর মাঠ থেকে হাট স্থানান্তরের জন্য উপজেলার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। তারা জায়গা দিলে আমরা মাঠ থেকে হাটের কার্যক্রম সরিয়ে নেব।

উলিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনান (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন, দুর্গাপুর স্কুল মাঠ থেকে পশুর হাট অপসারণে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি। আগামীতে যাতে স্কুল মাঠে হাট না বসে তা নিশ্চিত করে নতুন বাংলা বর্ষে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

২৭১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares