বৃহস্পতিবার- ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৩ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মহেন্দীগঞ্জের লাঠিয়ালদের বিরুদ্ধে ভোলার চরে মাছ-গাছ-ফসল লুটের অভিযোগ

মহেন্দীগঞ্জের লাঠিয়ালদের বিরুদ্ধে ভোলার চরে মাছ-গাছ-ফসল লুটের অভিযোগ

মিজানুর রহমান-ভোলাঃ ইলিশা নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরটি ভোলার চর নামেই পরিচিত। এই গ্রামটি ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের আওতায় হলেও সীমান্তবর্তী মেহেন্দী গঞ্জের কিছু লাঠিয়াল দীর্ঘদিন ধরে এই চরের মালিকানা দাবি করে নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এই চক্রটি যখন ইচ্ছে গ্রামের জমির মালিকদের খেতের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে, ঘের-পুকুরের মাছ, গাছ-গাছালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর প্রতিবাদ জানালে নিরীহ জমির মালিক ও গ্রামবাসীর বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ হানা দিয়ে লুটপাট,মারধর করছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামটির ২/৩ হাজার বাসিন্দার জীবন কাটে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে। যুগ যুগ ধরে এমন লুণ্ঠন আর নির্যাতনের শিকার হলেও বিচার তো দূরে থাক থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারেন না ভূক্তভোগীরা। সীমানা জটিলতা অজুহাতে এপার-ওপারের দুই থানার ঠেলাঠেলিতে পিষ্ট হচ্ছে এখানের বাসিন্দাদের জীবন। তবে কিছুদিন আগে ভোলা থানার পুলিশে একটি মামলা নিলেও আসামীরা দূগম এলাকায় হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছেনা। অপর দিকে মেহেন্দীগঞ্জ থানা ভোলা থানাকে সহযোগীতা করছেনা। আসামীরা তাদের সাথেই উঠা বসা করছেন।

ভূক্তভোগী ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকে অভিযোগ করেন, কয়েক বছর ধরে লাঠিয়াল বাহিনীটি কিছুটা নিস্ক্রীয় থাকলেও গত এক মাস ধরে তারা পুনরায় সক্রিয় হয়ে লুটপাট চালাচ্ছে গ্রামবাসীর ওপর। এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমপির শতাধীক রাঠিয়াল বাহিনী। এরা মেহেন্দীগঞ্জের-ভোলা সীমান্তের রাজাপুরের ভোলার চর আদর্শ গ্রামে ঢুকে এখানে বসবাসকারী পরিবারগুলোর ওপর পুনরায় জুলুম চালাচ্ছে। গ্রামটিকে মেহেন্দী গঞ্জের কিছু লাঠিয়াল বাহিনী নিজেদের দাবি করে আসছে। এনিয়ে দুই জেলার সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। লাঠিয়াল বাহিনীর আনাগোনা দীর্ঘ প্রায় ২০-২৫ বছরের। তাদেরকে নিষেধ করা সত্যেও ফসল মৌসুমে মেহেন্দীগঞ্জের লাঠিয়াল বাহিনী এ এলাকার কৃষকরা রোপণকরা ধান ঘরে তোলার আগেই কেটে নিয়ে যায়। অনেক আগে আন্তঃজেলা সীমানা নির্ধারণ করা হলেও চূড়ান্ত পিলার স্থাপন না হওয়ার সুযোগ নিয়ে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় পুকুরের মাছ, গোয়ালের গরু, জমির ফসল, বাগানের গাছ লুট করে নিয়ে যায়। সরকারি একাধিক প্রকল্প বাস্ত বায়ন হয়েছে গ্রামটিতে, এর মধো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শ গ্রাম, মৎস্য ঘের রয়েছে। আদর্শগ্রামের মৃত কালু মৃধার স্ত্রী লাইজু বেগম বলেন, কয়েক দিন আগে মেহেন্দীগঞ্জের লাঠিয়াল বাহিনী আমাকে মারধর করে আহত করে। জমির চাষকৃত কলই নষ্ট করে, পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। মৃত নোয়াব আলী বেপারীর স্ত্রী মুকুল বেগম বলেন একযুগ আগে তিনি বিধবা হয়েছেন। তাঁর গাছ বিক্রির ওপর চাঁদা দাবি করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেয় লাঠিয়ালরা। তিনি এখন আতঙ্কে আছেন। শাহে আলম মুন্সির স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, আমার বাড়ির রোপণ করা গাছ কাটতে গেলে চাঁদার দাবিতে তাতে বাধা দেয় ওই লাঠিয়াল ও সন্ত্রাসীরা। তাদের ভয়ে জীবন সংশয়ে আছি আমরা। অপর বাসিন্দা মঙ্গল গাজী বলেন, আমার জমি দখলের প্রতিবাদ করায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায় লাঠিয়াল বাহিনী। কোনো বিচার পাইনি, কার কাছে বিচার চাইবো। এদের লুটপাট থেকে বাদ যায়নি সরকারী মৎস্য প্রকল্পও। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নন্দপুরা, কন্দকপুরা ও মেদুয়ার একটি বিশাল বাহিনী প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে ভোলাবাসীর চরটিকে দাবি করে আসছে। চরবাসীর অভিযোগ, মেহেন্দীগঞ্জের মৌসুমী লাঠিয়াল বাহিনী তাদের ধান, পুকুরের মাছ লুট, বাগানের গাছ লুট এমনকি হাস,মুরগী ও গরু-ছাগল লুট করে নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদে করলে লাঠিয়াল বাহিনী ও ভূমিদস্যুরা মিলে প্রায়ই কৃষকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। চরে বসবাসরত কৃষকদের উৎখাতের জন্য বর্ষা মৌসুমে হালে গরু-মহিষ চুরি করে নিয়ে যায়। মেহেন্দীগঞ্জের বাহাদুরপুর ইউপি সদস্য মো. আমীর হোসেন জমদ্দার বলেন,সীমান্তবর্তী একদল সন্ত্রাসী চাঁদাবাজী, লুটপাট ও হামলা চালিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলেছে গ্রামের মানুষদের। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে হামলার শিকার হওয়ায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী বলেন, প্রায়ই মেহেন্দীগঞ্জের লাঠিয়াল বাহিনী আদর্শগ্রাম এলাকা দখল করতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ব্যর্থ হয়ে প্রত্যেকবারেই চরের বাসিন্দাদের সম্পদ ও ফসল লুট করে নিয়ে যায়। বহিরাগত লাঠিয়াল বাহিনীর হুমকির মুখে সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের। সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় মেহেন্দীগঞ্জের একদল সন্ত্রাসী ও ভুমি দস্যুরা এসব কাজ করছে। তারা এমপি পংকজ দেবনাথের নাম ভাঙ্গীয়ে এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে। ২০১৫ সালে মাপ হয়েছিলো ওই চরটি ভোলার মধ্যে এবং ভোলার রাজাপুরের মানুষের। তবে এবার মেহেন্দীগঞ্জের কোন সন্ত্রাসী ও ভুমিদস্যুকে ভোলার চরে পেলে পেলে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেহেন্দীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই জমি সরকারি। এখনো মালিকানা নির্ধারণ হয়নি। যে যার মতো করে দখল করে যাচ্ছে এবং পক্ষ -বিপক্ষ অভিযোগ করে যাচ্ছে। তবে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে। জটিলতা নিরসনে সীমানা নির্ধারণ করা জরুরী। তবে চাঁদাবাজির, লুটের অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীন ফকির জানান, ওই চরটি ভোলা বাসির, মেহেন্দীগঞ্জের লুটেরা ফসল মৌসুমে চরে হানা দিয়ে জমির মালিক ও চাষাদের ফসল নিয়ে যায়। ভবিষ্যতে এধরনের হাঙ্গামা করার চেষ্টা করলে কঠিন পদক্ষেপ নিবো।

৫০ বার ভিউ হয়েছে
0Shares