রবিবার- ৩০শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৬ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তানোরে ১০ বছরে ৬ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন! শতকে ৫৮ টাকা গচ্ছা রাজস্ব

তানোরে ১০ বছরে ৬ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খনন! শতকে ৫৮ টাকা গচ্ছা রাজস্ব

 তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে বিগত ১০ বছরে কমেছে ৬ হাজার বিঘা কৃষি জমি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এতথ্য মানতে নারাজ উপজেলার কৃষিবিদরা। ৬ হাজার বিঘা না তার কয়েকগুন বেশি কৃষি জমিতে পুকুর ও হিমাগার নির্মান হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ফসলী জমিতে কোন কিছুই করা যাবে না। সারা বিশ্বে চলছে মন্দা, খাদ্য ঘাটতি, এমন নির্দেশনার পরও স্থানীয় প্রশাসানের উদাসিনতায় কমতেই আছে কৃষি জমি। বিশেষ করে কামারগাঁ ইউপির হাতিনান্দা মাঠে তিন ফসলী জমিতে হিমাগার তৈরির জন্য সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে। প্রায় ১২-১৪ বিঘা জমিতে হবে হিমাগার। এর আগে তানোর টু মুন্ডুমালা রাস্তার দেবিপুর মোড়ের পশ্চিমে ও আড়াদিঘি মোড়ের পূর্বে চার ফসলী জমিতে রহমান গ্রুপের দুটি, ও কাশিম বাজার এবং কালিগঞ্জ এলাকায় আমান গ্রুপ, তামান্না গ্রুপ মদিনা নামের একটি করে তিনটি হিমাগার তৈরি করা হয়েছে। এদিকে রহমান ২ হিমাগার ও রাস্তার দক্ষিনে আমান গ্রুপের আমান হিমাগার নির্মানের জায়গা নির্ধারন করা হলেও মামলার কারনে বিগত কয়েক বছর ধরে পতিত অবস্থায় আছে প্রায় ১৫ বিঘা মত চার ফসলী জমি। অবাক করার বিষয় জমির শ্রেনী পরিবর্তন না করে হিমাগার নির্মান হলেও কৃষি জমির খাজনা নিতে হচ্ছে ভূমি দপ্তরকে। পুকুর খনন হয়েছে, মাছ চাষ হচ্ছে, কিন্তু কৃষি জমির খাজনা নিতে হচ্ছে। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত।
ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় বিগত ১০-১৫ বছরে নিম্মে হলেও ৮০০ থেকে ১ হাজার  হেক্টর কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ার কারনে কৃষি জমির খাজনা নিতে হচ্ছে। কৃষি জমি এক শতকে মাত্র ২ টাকা খাজনা । আর পুকুরে এক শতকে ৬০ টাকা খাজনা। যদি ৮০০ হেক্টর জমিতে পুকুর হয় তাহলে ৬ হাজার বিঘা জমিতে হয়েছে, শতকে ৫৮ টাকা করে কম আদায় হয় খাজনা। সেই হিসেবে বছরে ৩৩ শতক পুকুরে খাজনা আসে ১৯৮০ টাকা,আর কৃষি জমিতে বছরে ৩৩ শতকে মাত্র ৬৬ টাকা খাজনা আদায় হয়। ৩৩ শতকে সরকারের গচ্ছা ১৯১৪ টাকা।  ৬০০০ বিঘা কৃষি জমি শতক হিসেবে আসে ১৯ লাখ ৮০ হাজার শতক, বছরে খাজনা আসে ১ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কৃষি জমি হিসেবে  ১৯ লাখ ৮০ হাজার শতকে ৩৯ লাখ  ৬০ হাজার টাকা খাজনা আসে। সরকারের গচ্ছা যাচ্ছে ৮০ লাখ টাকা। যাকে বলে শুভংকরের ফাকি।
জানা গেছে, উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির হাড়দহ বিল, জুড়ানপুর মাঠ, ব্রীজ ঘাটের দুপার, রাতৈলসহ প্রায় পুরো এলাকায় কৃষি জমিতে হয়েছে পুকুর। প্রথম অবস্থায় জমি লীজ দিলেও বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা জমি লীজ দিচ্ছে না। কিন্তু যে মাঠে পুকুর হয়েছে তার আশপাশের জমিতে জলাবদ্ধতার কারনে পরবর্তীতে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
ইউপির কৃষকরা জানান, এত পরিমান কৃষি জমিতে পুকুর হয়েছে কল্পনাতীত।  কৃষি শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছেনা। বাধ্য হয়ে জেলা শহরে অন্য কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
এছাড়াও কামারগাঁ ইউপির লবাতলা ব্রীজের দুপারে প্রায় ১০০-১৫০ বিঘা জমিতে পুকুর হয়েছে। উপজেলার আনাচে কানাচেও অনেক কৃষি জমিতে পুকুর হয়েছে।
কৃষকরা জানান, কৃষি জমিতে একবার পুকুর খনন হলে ধীরেধীরে পুরো মাঠ পুকুর হয়ে যায়। যার জলন্ত প্রমান চান্দুড়িয়া ইউপি এলাকা।
সুত্র মতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি কৃষি জমিতে পুকুর তো দুরে থাক কোন শিল্প কলকার খানা করা যাবে না। কারন বিশ্বে চলছে খাদ্য ঘাটতি। এজন্য এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের উদাসিনতায় হতেই আছে পুকুর। যেহেতু জমির শ্রেণী পরিবর্তন হবে না, এজন্য স্থানীয় ভাবে মেনেজ করেই হচ্ছে পুকুর বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন।
তানোর সদর ভূমি অফিসের তহসিল দার লুৎফর রহমান জানান, জমির শ্রেণী পরিবর্তন না হলে কিছুই করনীয় নাই। কৃষি জমিতে পুকুর হলেও শ্রেণী পরিবর্তন না হওয়ায় ২ টাকা শতক হিসেবে খাজনা নিতে হয়। এক শতকে ৫৮ টাকা গচ্ছা। তবে কর্তৃপক্ষ কে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে, নতুন ভাবে রেকর্ড না হওয়া পর্যন্ত এনিয়মেই খাজনা আদায় হবে বলে মনে হচ্ছে।
মুন্ডুমালা ভূমি অফিসের তহসিলদার রবিউলও একই কথা জানিয়ে  বলেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে অবহিত করা হয়েছে, আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
১৭৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares