শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডোমারে অনুমোদন বিহীন নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে  সেবা নিয়ে মৃত্যু ২, গুরুতর অসুস্থ অনেকেই

ডোমারে অনুমোদন বিহীন নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে  সেবা নিয়ে মৃত্যু ২, গুরুতর অসুস্থ অনেকেই

রবিউল হক রতন, (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ অনুমোদন বিহীন নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে সেবা নিতে গিয়ে ০২ জনের মৃত্যু এবং অনেকের গুরুতর অসুস্থের খবর পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ডেলিভারি সেন্টার বন্ধ ও মালিককে আইনের আওতায় এনে শান্তির দাবী জানিয়ে সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের গোসাইগঞ্জ বাজারে দীর্ঘ ০৩ বছর ধরে “শামিম ফার্মেসী” নামের ব্যানার ঝুলানো একটা ফার্মেসীর ভিতরে অনুমোদন বিহীন ভাবে নরমাল ডেলিভারি সেন্টার চালিয়ে যাচ্ছেন শাহার মোড় গোসাইগঞ্জ এলাকার মকলেছার রহমান এর স্ত্রী সুইটি আক্তার (৩৫) নামের এক মহিলা।
এদিকে “শামিম ফার্মেসী” নামের অনুমোদন বিহীন ভাবে নরমাল ডেলিভারি বন্ধ এবং মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে ডোমারের সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন চিলাহাটি পূর্ব মাস্টারপাড়া এলাকার বাবুল হোসেন এর ছেলে মাহমুদ হোসেন রতন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন তার ছোট বোনকে গত ১৫ নভেম্বর তার ছোট বোন ছয় বাটিয়া এলাকার সুমন আলীর স্ত্রী রেহেনা বানুর প্রসব বেদনা উঠলে তার শশুর বাড়ির লোকজন আনুমানিক রাত ৩ টার দিকে সুইটি আক্তারের নরমাল ডেলিভারি সেন্টার ‘শামিম ফার্মেসী’ তে নিয়ে যান। সেখানে সুইটি নরমাল ডেলিভারি করতে পারবেন বলে পরিবারের লোকজনকে আশ্বস্ত করেন এবং রাত থেকে পরের দিন সকাল ১১ টার দিকে রোগীর স্বজনদের অনুমতি না নিয়ে জরায়ু কেটে বাচ্চা প্রসব করান। কাটা স্থানে সেলাই না দিয়ে রোগীকে রিলিজ করে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। রোগীর স্বজনেরা বাচ্চা সহ রোগীকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয়। এভাবে টানা ০৬ দিন যাওয়ার পর রোগী ও বাচ্চার অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্টারের কাছে নিয়ে যান। গাইনি ডাক্টার পরিক্ষা নিরিক্ষা করে বলেন রোগীর সমস্যা জটিল এবং দ্রুত মা ও শিশুকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন। অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, ইতি পূর্বে তার নিকট নরমাল ডেলিভারী করাতে এসে চিলাহাটি বাজারস্থ মাছ ব্যবসায়ী মজনুর বোন মৃত্যু বরন করেন। এবং কামার পাড়ার মালা আর্মির পুত্রবধূর সন্তানও মারা যায়।
এদিকে রোগীর স্বজনের বলেন, সুইটি আক্তার আমাদের অনুমতি না নিয়ে আমাদের রোগীর জরায়ু কেটে বাচ্চা প্রসব করিয়েছে। পরবর্তীতে সেটা আমাদের কাছে গোপন রেখে রোগীকে রিলিজ দিয়েছে। বাসায় নেয়ার পর মা ও শিশুর অবস্থা আরো খারাপ দেখে আমরা উন্নত চিকিৎসায় নিয়ে যাই। আমরা খোজ নিয়ে জানতে পেরেছে ওই সেন্টারে সেবা নিয়ে গুরুতর অসুস্থ অনেকেই। আমরা সুইটি আক্তারের ডেলিভারি সেন্টার বন্ধ এবং তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
নিজ ভোগডাবুড়ী কামারপাড়া এলাকার আজিজুল ইসলাম ওরফে মালা আর্মি এর পুত্রবধূ রাশেদুল এর স্ত্রী রেজভী আক্তার শামিম ফার্মেসীতে সুইটির ডেলিভারি সেন্টারে ভুল চিকিৎসা নিয়ে নবজাতক শিশু মৃত্যু বরন করেছেন বলে অভিযোগ করেন পরিবারের লোকজন।
রেজভী আক্তার বলেন, গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমার প্রসব বেদনা উঠলে পরিবারের লোকজন আমাকে রাত ৯টায় সুইটি আক্তারের শামিম ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না দিয়ে সেখানে নেয়ার ১ ঘন্টা আমাকে ওইভাবেই রেখে দিয়ে কাজের মহিলার মাধ্যমে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা প্রদান করেন। সে রাতে আমার প্রসব বেদনা উঠলে পেট ব্যাথার অশুধ (Algin 50mg) আমাকে সেবন করায় এবং কিছুক্ষন পর ব্যাথা কমে গেলে স্যালাইন লাগানো হয়।
তিনি বলেন, সেখানকার পরিবেশ অস্বাভাবিক হওয়ায় আমি সেখানে ডেলিভারি করার ব্যাপারে একদম রাজি ছিলাম না। কিন্তু সুইটি আমাকে জোড় করে সেখানেই অনেক চাপ প্রয়োগ করে গভীর রাতে বাচ্চা প্রসব করায়। একটা সময় আমি অচেতন হয়ে গেলে সে বিভিন্ন চিকিৎসা দিয়ে আমাকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। আমার এবং বাচ্চার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে আমার স্বজনেরা দ্রুত নীলফামারী হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার বাচ্চাকে মৃত ঘোষনা করেন। তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছের বাইরে সুইটি আমার ডেলিভারি করিয়ে আমার বাচ্চাকে হত্যা করে আমি তার শাস্তি চাই।
সুইটি আক্তারের নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে নিজের প্রসূতি বোনকে হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন চিলাহাটি বাজারস্থ মাছ ব্যবসায়ী মজনু ইসলাম। তিনি বলেন গত সাত মাস পূর্বে সুইটির ডেলিভারি সেন্টারে বাচ্চা প্রসবের পর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার সময় রাস্তায় রোগী মারা যান বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনেরা।
এদিকে শামিম ফার্মেসীর প্রপাইটর মোছাঃ সুইটি আক্তার বলেন, ২০০৯ সাল থেকে দেশের কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রজেক্ট এর সাথে কাজ করেছি এবং চাকুরীর পাশাপাশি মেডিকেল সহকারী ডিপ্লোমা কোর্স, ফার্মাসিস্ট কোর্স, সিএইচবিএ এর কোর্স করার পর ২০২০ সালে ড্রাগ লাইসেন্স নিয়ে ফার্মেসী শুরু করি। ফার্মেসীতে সাধারন রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এছাড়াও পূর্বের কাজের সুবাধে পরিচিত কোনো ডেলিভারি রোগী যোগাযোগ করলে রোগীর সার্বিক অবস্থা ভালো থাকলে শামিম ফার্মেসীতে নরমাল ডেলিভারি করাই। ডেলিভারি এর পুর্বেই কারো অবস্থা অস্বাভাবিক দেখলে তাকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেই। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে সেবা নিয়ে কেউ বড় কোনো সমস্যায় পড়েনি।
নরমাল ডেলিভারি সেন্টারের ব্যাপারে তিনি বলেন, নরমাল ডেলিভারি সেন্টারের নিবন্ধন নিতে হয় এটা প্রতিষ্ঠান চালুর তিন বছর পর জানতে পারলাম। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের  সাথে পরামর্শ করেছি নিবন্ধন তাড়াতাড়ি করে ফেলবো।
অভিযোগ এর বিষয়ে ডোমার উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আল আমিন রহমান জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
৪১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares

COMMENTS